রাজশাহীতে ওরিয়ন গ্রুপের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা ও অপপ্রচার

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী গ্রুপ ওরিয়নের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।
নিজেকে ওরিয়ন গ্রুপের পরিচালক দাবি করে আশফাক রহমান নামে এক ব্যক্তি রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ এনে একজন প্রতিমন্ত্রীকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এই রহস্যময় অভিযোগ প্রতিষ্ঠা করতে তিনি একটি জাল চুক্তিপত্রের আশ্রয়ও নিয়েছেন। সাংবাদিকদের তথ্য দেয়ার জন্য তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে একটি পত্রিকাও ওই ভুয়া দলিলের রেফারেন্স ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
গত ৪ জুলাই পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে সংবাদ প্রতিবেদনে আশফাক রহমানকে ওরিয়ন গ্রুপের পরিচালক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তার রেফারেন্সে দাবি করা হয় যে, তিনি রাজশাহী শহরের সিএন্ডবি মোড় এলাকায় ৬ বিঘা জমি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে ১০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারার উপস্থিতিতে শহরের একটি অভিজাত হোটেলে ১৯ জুলাই, ২০২৩-এ দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ছেলে মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন।
পত্রিকাটি তাদের সংবাদে তথাকথিত চুক্তির তিন পৃষ্ঠার ছবিও প্রকাশ করেছে। চিত্রগুলির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যবহৃত স্ট্যাম্প পেপারগুলি বিক্রেতার কাছ থেকে চলতি বছরের গত ২৮ মে কেনা হয়েছিল। তবে চুক্তির তারিখটি আগের বছরের ১৯ জুলাই হিসাবে দেখানো হয়েছে। পরবর্তী তারিখে কেনা স্ট্যাম্পগুলি দিয়ে আগে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
ওরিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওবায়দুল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাদের গ্রুপে আশফাক রহমান নামে এমন কোনো পরিচালক নেই, আগেও ছিল না। এই নামে যারা এসব কাজ করেছেন, তারা প্রতারক ও জালিয়াত। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে তারা।
এদিকে এ ঘটনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী কাজী আবদুল ওয়াদুদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি দাবি করেন, এ ধরনের ঘটনার কিছুই তিনি জানেন না, সাক্ষী হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
চুক্তির আরেক সাক্ষী মীর ইসতিয়াক আহমেদ জানান, যে তারিখ দেখানো হয়েছে, সেই সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। ফলে এরকম কোনোকিছুর সাক্ষী হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবাল বলেন, এই কথিত চুক্তি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। কারা এবং কী উদ্দেশ্যে এই প্রতারণা করেছে তা জানতে তিনি আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানান তিনি।
যদিও তিনি দাবি করেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহীতে রাজনীতির নামে নোংরামি শুরু হয়েছে। এই জাল চুক্তি তৈরি ও তা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা এর ধারাবাহিকতায় ঘটছে কি না দেখতে হবে।