ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ৬:৪২ অপরাহ্ন

তিন ইস্যুতে বিএনপির নতুন কর্মসূচি আসছে

  • আপডেট: Saturday, July 6, 2024 - 10:48 am

অনলাইন ডেস্ক: দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচির পর আবারও মাঠের আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। এবার তিন ইস্যুতে বিএনপি কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শও নিয়েছে হাইকমান্ড। দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে ‘দুর্নীতি ও ভারত-বাংলাদেশের অসম চুক্তি-সমঝোতার প্রতিবাদ’ যুক্ত করার প্রস্তাবনা দিয়েছেন নেতারা। কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

তবে ঢাকাসহ সব মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ বা মানববন্ধন বা অবস্থানসহ আরও কিছু কর্মসূচির বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি ও ভারত-বাংলাদেশের অসম চুক্তি-সমঝোতার বিষয়ে জনগণকে জানাতে বিভাগীয় শহরে সেমিনারেরও প্রস্তাব রয়েছে। আগামী সোমবার স্থায়ী কমিটির সভায় কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার স্থায়ী কমিটির জরুরি সভায় সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে নিয়ে দেশবাসী চিন্তিত। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। সেটা নিঃশর্ত মুক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। অন্যান্য ইস্যুতেও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘অবশ্যই কর্মসূচি আসবে। দুর্নীতি ও দেশবিরোধী যে চুক্তি, সেগুলো নিয়ে কর্মসূচি আসবে। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া ইস্যুভিত্তিক আমাদের আরও কর্মসূচি আসবে।’

আরেক যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের পাশাপাশি আগামীতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার যে অসম চুক্তি-সমঝোতা হয়েছে তার প্রতিবাদে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনায় দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। চুক্তির ওপর সেমিনারও করা হতে পারে।’

গত ২৪ জুন স্থায়ী কমিটির সভার পরদিন গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে দুটি চুক্তি, পাঁচটি নতুন সমঝোতা ও তিনটি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি চুক্তি সমঝোতা স্বাক্ষর হওয়ায় স্থায়ী কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। চুক্তিগুলো বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী হওয়ায় বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করছে। বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রয়োজন হলে কর্মসূচি নেব।’

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে এ সমঝোতা স্মারক নিয়ে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পর্যালোচনা করে বিএনপির একটি টিম। পরে এ নিয়ে গত ৩০ জুন সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। সেখানে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ভারতের সঙ্গে সমঝোতার আড়ালে যেসব চুক্তি করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল করিডর দেওয়ার চুক্তি, তিস্তা প্রকল্পে ভারতের সহযোগিতা গ্রহণ, প্রতিরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতা, ওষুধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ, ভারতের ইনস্পেস এবং বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যৌথ স্যাটেলাইট সমঝোতা, ডিজিটাল পার্টনারশিপ, গ্রিন পার্টনারশিপ, সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি ইত্যাদি নানা নাম দিয়ে যে দশটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য। বিশেষজ্ঞরা রেল করিডরের ফলে বাংলাদেশের লাভ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। একতরফাভাবে ভারতকে করিডর সুবিধা দেওয়ার জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক জনসম্মুখে প্রকাশেরও দাবি জানান।

তবে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপির দাবি মিথ্যা, স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক দেশের স্বার্থেই করা হয়েছে। অবশ্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এ নিয়ে সরব রয়েছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু এখন আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচিতে যেতে চায় দলটি।

একটি সূত্র জানিয়েছে, নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও বিএনপির একটি পক্ষ ভূরাজনীতি বিবেচনায় ভারত ইস্যুতে সরাসরি কর্মসূচি পালনের বিপক্ষে। তবে দলের একটি বড় অংশ মনে করছে, আন্দোলন ভারতের বিরুদ্ধে নয়, বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে। ভারতের কাছ থেকে দাবিগুলো আদায় করতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

আরও জানা গেছে, হাইকমান্ডের সঙ্গে যুগ্ম মহাসচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। সেখানে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ এবং ছাগলকাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও ক্ষমতাঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি-লুটপাট, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিসহ নানান বিষয়ে কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাবও করেন। এসব প্রস্তাব নিয়ে গত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এর মধ্যে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে আবারও হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সব মহানগর ও সাংগঠনিক জেলায় তিন দিনের সমাবেশ কর্মসূচি দেওয়া হয়, যা বুধবার শেষ হয়। আর গত মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এদিকে সমমনাদের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোট ইতোমধ্যে ‘দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবিতে’ কর্মসূচি দিয়েছে। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। এছাড়া একই দাবিতে ৮ জুলাই চট্টগ্রামে, ১১ জুলাই সিলেটে ও ১৪ জুলাই ঢাকায় লিফলেট বিতরণের পর সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছে ১২ দলীয় জোট।

জানা গেছে, সমমনাদেরও আগামী দিনে কর্মসূচি পালনে পাশে চায় বিএনপি। এজন্য শিগগিরই মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবে দলটি।

স্থায়ী কমিটির জরুরি সভায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থনের সিদ্ধান্ত : এদিকে বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভার্চুয়াল ওই সভায় নেতারা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটার ব্যাপারে ছাত্র-তরুণদের দাবি অবশ্যই ন্যায্য এবং যৌক্তিক। সভায় কোটাবিরোধী চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও হুমকির ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়। এ নিয়ে আজ (শনিবার) আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে বিএনপির। সূত্র জানায়, সভার শুরুতে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরেন দলের মহাসচিব।

এরপর নেতারা সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা বলেন, ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় সরকার কোটা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছিল। এখন আবার আদালতকে ব্যবহার করে সেই কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছে।

এটা স্পষ্টত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা উল্লেখ করে নেতারা আরো বলেন, কোটা কখনো মেধার বিকল্প হতে পারে না। জনগণের রায়ে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে অবশ্যই ছাত্র-তরুণদের যে কোনো যৌক্তিক এবং ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন করবে। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের রাষ্ট্র অবশ্যই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে। পরে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।

 

সোনালী/সা