ঢাকা | জুলাই ৪, ২০২৪ - ৪:৩৪ অপরাহ্ন

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

  • আপডেট: Tuesday, July 2, 2024 - 2:52 pm

অনলাইন ডেস্ক: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ এবং কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের সূচনা করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জাবিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালের পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে)।

এছাড়া সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না। কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিফাত রশিদ বলেন, আমরা মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় গণপদযাত্রা করব। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত ৫ জুন বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: কোটা বাতিল করে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ক্যাম্পাসে সোমবার বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী। দুপুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কলাভবন, মল চত্বর, ভিসি চত্বর ও টিএসসি হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘১৮’র হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্নোগান দিতে থাকেন।

অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, বর্তমানে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটার পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও গলাকাটা পোষ্য কোটা দেওয়া হয়েছে। এই পোষ্য কোটার ফলে কর্মচারী শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। একটি পরিবারের একজন যেখানে চাকরিতে রয়েছেন, সেখানে অন্যদেরও সেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমার, আপনার বাবা-মা যারা শ্রমজীবী, কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষ তাদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, স্বাধীন এই বাংলায় কোটা বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বৈষম্যমূলক, নিপীড়নমূলক, নির্যাতনমূলক কোটা ব্যবস্থার কবর দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী যখন সংসদে দাঁড়িয়ে আপামর ছাত্র জনতার কথা বিবেচনা করে কোটা বাতিল করেছিলেন, সেখানে হাইকোর্ট থেকে কিভাবে সেই পরিপত্র আবার বাতিল করা হয়? আজকে সারা দেশের ছাত্রসমাজ একযোগে আন্দোলন শুরু করেছে। এই কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল করার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

সমাবেশে অংশ নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী হিমু বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, আমরা নাকি মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধী। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা শুধু বৈষম্যমূলক কোটার বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নয়। আজকে তারা বলছেন, তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পায়। বছরে দুই ঈদ ও বিজয় দিবসে ভাতা পায়। অথচ দেশের অসংখ্য পরিবারের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকার অনেক কম। যেখানে তারা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন, তাদের সন্তান-নাতি-নাতনিরা পাশ করতে পারলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ অনেক শিক্ষার্থী মেধাবী হয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। তাহলে কীভাবে তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হলেন? বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল না করা হলে ছাত্রসমাজ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে ছাত্রছাত্রীরা চার দফা দাবি জানান।

সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: বিক্ষোভ-মিছিল ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ৪ দফা দাবি জানান। সমাবেশে বোটানি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে শুধু পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর জন্যই কোটা থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, আমরা যারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করি আমরা নাকি জামায়াত-শিবির করি। কারণ হিসাবে দেখানো হয় আমরা রাষ্ট্রীয় আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। তাহলে আমরা বলতে চাই, যে শিক্ষকরা আজকে প্রত্যয় পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তারাও কি জামায়াত-শিবির করেন? ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হবে। একটা গাড়িও চলবে না ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: দ্বিতীয় দিনের মতো মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এর মধ্যে ছিল ‘মেধাবীদের কান্না আর না আর না’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘কোটা প্রথায় নিয়োগ পেলে দুর্নীতি বাড়ে প্রশাসনে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’ ইত্যাদি। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া মুহিবের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান, স্টুডেন্টস রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব ও পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মারুফ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: সোমবার দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে ববির প্রধান গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে মহাসড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ সময় বক্তারা প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর কোটা বাদে সব কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানান। সমাবেশে বক্তৃতা করেন- ববি শিক্ষার্থী ভূমিকা সরকার, মাইনুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় রায়, সিরাজুল ইসলাম, সুজয় শুভ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, কোটা পদ্ধতির কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাকরি প্রাপ্তি নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে। কোটা বাতিল করা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ। এ সময় তারা ৪টি দাবি উপস্থাপন করেন।

সোনালী/ সা