ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ৬:০০ পূর্বাহ্ন

ভারি ও বজ্রবৃষ্টিতে সতর্ক থাকবেন যেসব বিষয়ে

  • আপডেট: Tuesday, July 2, 2024 - 2:50 pm

অনলাইন ডেস্ক: চলছে বৃষ্টির মৌসুম। এসময় দেখা যায় প্রায় সময় বৃষ্টি। বৃষ্টিই যে স্বস্তি নিয়ে আসে, তেমনটা নয়। এই যেমন, বজ্রবৃষ্টি বা ভারি বৃষ্টি প্রায়শই বিপজ্জনক। নিরাপদ আশ্রয়ে থাকলেও বজ্রপাতের বিকট গর্জনে হৃদস্পন্দন যেন প্রায় থেমে যাবার জোগার হয়। সেই সঙ্গে বন্যা ও ভূমিধ্বসের মতো তাণ্ডব লীলা ইট-পাথরে মজবুত কাঠামোকেও পরিণত করে ধ্বংসযজ্ঞে। ঝড় থামলেও হাফ ছেড়ে বাঁচার উপায় নেই, কেননা এ সময় শুরু হয় মশা ও নানা কীট-পতঙ্গ জনিত রোগের ভয়।

চলুন, ভারি বৃষ্টি চলাকালীন এবং নিরাপদ থাকতে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিই-

ভারি বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির সময় নিরাপদ থাকতে যা করবেন
১. গাড়ি চালানো অবস্থায় হঠাৎ ভারি বর্ষণ শুরু হলে গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে দিন। অতিবৃষ্টিতে দিনের বেলায়ও চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে। এছাড়া পানি লেগে গাড়ির সামনের গ্লাস ঝাপসা হয়ে যায়, যা গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এ সময় হেডলাইট জ্বালানো থাকলে অন্তত অন্য ড্রাইভাররা আপনার গাড়ি দেখতে পাবে।

২. গাড়ি চলমান থাকার সময় পানিতে প্লাবিত রাস্তা এড়িয়ে চলতে হবে। আপাত দৃষ্টে পানি যতটা দেখা যায় তার চেয়েও গভীর হতে পারে। তার নিচে ধারালো বস্তু, গর্ত এমনকি বৈদ্যুতিক তার থাকতে পারে। গর্তে বা অতিরিক্ত পানিতে আটকা পড়া যানবাহন প্রায় সময়ই অকেজো হয়ে যায়।

৩. বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গে উদ্দেশ্য থাকবে একটা নিরাপদ স্থান দেখে গাড়ি পার্ক করা। কিন্তু তাই বলে তাড়াহুড়া করে জোরে ব্রেক চেপে ধরা যাবে না। যতটা সম্ভব ধীরে ধীরে গতি একদম কমিয়ে ফেলতে হবে। অন্যথায় বৃষ্টির কারণে স্যাঁতস্যাঁতে রাস্তার ওপর টায়ার পিছলে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যেতে পারে।

৪. গাড়ি পার্ক করার সময় বিদ্যুতের লাইনের নিচে, ইউটিলিটি খুঁটি বা সাবস্টেশনের পাশের জায়গাগুলো এড়িয়ে চলুন। কেননা ভেজা থাকা বা দুর্যোগ জনিত কোনো ত্রুটির কারণে এগুলো বিদ্যুতায়িত হয়ে থাকতে পারে। তাই এগুলোর সংস্পর্শে আসাটা বিপজ্জনক। এমনকি গাছের নিচের জায়গাগুলোও এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ ডালপালা ও ধ্বংসাবশেষ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

৫. বৃষ্টি হালকা হয়ে আসা বা একদম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি থামিয়ে ভেতরে অপেক্ষা করাই উত্তম।

৬. ভারি বৃষ্টি এবং প্রবল বাতাসের সময় জানালা এবং দরজা থেকে দূরে থাকুন।

৭. রাস্তায় পায়ে হেটে চলাচলের সময় ভারি বৃষ্টি শুরু হলে দ্রুত কাছাকাছি কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই নিন। বাসা থেকে মাত্র বের হলে বা বাসা কাছাকাছি থাকলে বাড়ি ফিরে যাওয়াই উত্তম।

৮. বাড়ির ভেতরে থাকার সময় ভারি বর্ষণ শুরু হলে দ্রুত সব জানালা ও দরজা বন্ধ করে দিন। কোথাও কোনো ফাঁকা জায়গা থাকলে মোটা কাপড় তাতে ভালোভাবে লেপ্টে দিন। এতে ভেতরে পানি ঢুকে ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র ভেজাতে পারবে না।

৯. ভারি বৃষ্টি মানেই বজ্রপাত হবে, আর বজ্রপাতের সঙ্গে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক তারতাম্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বিদ্যুতায়িত হয়ে গেলে এগুলোকে স্পর্শ করার কারণে যে কেউ বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হতে পারে। তাই বৃষ্টি শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি আনপ্লাগ করে ফেলতে হবে।

১০. ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে অবধারিতভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও শুরু হয়। তাই মোমবাতি, টর্চ, ও চার্জ লাইটের মতো প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা হাতের কাছেই রাখতে হবে।

১১. সেই সঙ্গে জরুরি ওষুধপত্র ও ফার্স্ট এইড বক্স রাখতে হবে নাগালের মধ্যে, যেন যে কোনো প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।

১২. আপাদমস্তক বৃষ্টিতে ভেজা মানেই পরিষ্কার হয়ে যাওয়া নয়। কারণ বৃষ্টির পানিতে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরেই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে গোসল নেওয়া উচিৎ।

১৩. পরনের ভেজা কাপড়গুলো তাড়াতাড়ি ধুয়ে সেগুলো শুকানোর জন্য ঘরের ভেতরে মেলে দিতে হবে। বৃষ্টিতে বারান্দায় বা ছাদে যাওয়ার যেহেতু সুযোগ নেই, তাই বলে ঘরের ভেতরে চুলা জ্বালিয়ে কাপড় শুকানো ঠিক নয়। দুর্যোগ জনিত কারণে গ্যাসের পাইপ লিক থেকে ভয়াবহ বিপদ ঘটতে পারে।

১৪. জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যদি যেতেই হয়, তবে পায়ে আবৃত জুতা বা পিছলে না যায় এমন স্যান্ডেল পড়ে নিতে হবে। নতুবা বৃষ্টিতে পায়ের উন্মুক্ত অংশে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

১৫. রাস্তায় চলাচলে অল্প সময়ের জন্য হলেও উঁচু গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটির নিচে দাড়ানো যাবে না।

১৬. এছাড়াও রাস্তার পাশের ড্রেন, আন্ডারপাস, নিচু এলাকা, পানি জমে থাকা জায়গার মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।

১৭. গ্রামাঞ্চলে বা মফস্বল শহরের পুকুর বা নদী; এমনকি শহরের লেকগুলোতেও বৃষ্টির সময় সাঁতার কাটা ঠিক নয়। বৃষ্টির সময় বিভিন্ন উৎস থেকে নানা মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে পানি এসে জমা হয় এই জলাশয়গুলোতে। ফলে এ সময় এগুলোতে দূষিত পদার্থের মাত্রা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। আর এই অনিরাপদ জলাশয়ে সাঁতার থেকে হতে পারে নানা ধরণের রোগ।

 

সোনালী/ সা