চাঁপাইয়ে দূর্বৃত্তের হামলায় নিহত দুই পরিবারে চলছে শোকের মাতম
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো: চাঁপাইনবাবগঞ্জে দূর্বৃত্তদের হামলায় নিহত জেলা পরিষদ সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম ও শিক্ষক আব্দুল মতিন হত্যাকাণ্ডে এখনো মামলা হয়নি।
তবে, নিহতদের ময়না তদন্ত শেষে গতকাল বিকালে নিজ নিজ গ্রামে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পুলিশ জানিয়েছে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। অন্যদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। আর এলাকাবসাী বলছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই একের পর এক এই ধরনের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে দূর্বৃত্তদের অতর্কিত হামলায় খুন হন জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম। আর রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার শিক্ষক আব্দুল মতিন। বাঁচানো যায়নি তাঁকেও।
নিহত সালামের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম বলেন, আমার স্বামী কি অন্যায় করেছে যে, তাকে গুলি ও বোমা মেরে হত্যা করা হ’ল। আমার তিন সন্তানকে আজ এতিম করলো সন্ত্রাসীরা। আমি তাদের বিচার চাই, ফাঁসি চাই। সালামের বড় ছেলে এসএসসি পাস করা সিফাত আলী কান্নাকন্ঠে বলছিল, আমার আব্বা এলাকার সাধারণ মানুষকে খুব ভালবাসতো।
সিফাত আরও বলেন, আমার আব্বাকে গত ২৪ মার্চ রাত ১১ টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের চৌধুরী মোড়ে জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালামের প্রাইভেট কারের ওপর ককটেল হামলা করে দূর্বৃত্তরা। তখন এ ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় জিডি করা হলে, পুলিশ তাৎক্ষণিক সঠিক ব্যবস্থা নিলে হয়তো, আজ আমার আব্বাকে আমরা এভাবে হারাতাম না।
জেলা পরিষদ সদস্য ও নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে দূর্বৃত্তদের হামলায় নিহত জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম ও শিক্ষক আব্দুল মতিনের স্বজনদের আহাজারি ভারি করে তুলেছে এলাকার পরিবেশ।
অপরদিকে, নিহত আব্দুল মতিন একজন নিরিহ স্কুল শিক্ষক হিসেবে এলাকায় সবার কাছে পরিচিত। মতিন মাস্টারের বোন কামরুন নাহার কান্না-কন্ঠে বলেন, আমার ভাই কোন দিন গন্ডগোলে জড়িত ছিল না, তারপরও তাকে গুলি ও বোমা মেরে হত্যা করলো সন্ত্রাসীরা। আমরা আমার ভাইয়ের খুনিদের গ্রেপ্তার পূর্বক সুষ্ঠু বিচার চাই।
নিহত মতিনের মামাতো ভাই সামশুদ্দীন ইসলাম রেজা বলেন, মতিন কোন দিনই ঝগড়া-বিবাদে জড়িত ছিল না, বরং এলাকার ছেলে-মেয়েদের কল্যাণে কাজ করতো। অথচ রাজনৈতিক বলির শিকার আব্দুল মতিন? তিনিও এলাকায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি জানিয়ে এ অঞ্চলে শান্তি ফেরানোর আহবান জানান।
নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে চলেছে। তাই এলাকায় শান্তি স্থাপনে এই দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় এলাকাবাসী আব্দুর রহমান এডু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড হলেও; সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় এই জনপদে প্রতিবছরই এভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে আসছে। তিনিও এলাকার শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবীদ, সমাজসেবীসহ স্থানীয় গণ্যমান্যদের উদ্যোগ নেয়ার জোরালো তাগিদ দেন।
শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নয়ালাভাঙ্গা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আশরাফ চেয়ারম্যান এবং আব্দুস সালামের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছিল। আর এই বিরোধের জের ধরে তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের আটক করা হবে। পিবিআই এবং স্থানীয় থানার পুলিশ হত্যাকাণ্ডের স্থলের আলামত সংগ্রহ করেছেন। আর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।