আ’লীগ নেতা হত্যা: মদদদাতা হিসেবে অভিযোগের তীর লিটনের দিকে
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুকে অভিযুক্ত করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
বৃহস্পতিবার বাবুলের জানাজায় অংশ নিয়ে তিনি এই অভিযোগ করেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, খুনি আক্কাস, খুনি মেরাজ। তাদের পেছনের মদদদাতা আছে। দুই বছর আগে আক্কাস বহিস্কৃত হয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে। খায়রুজ্জামান লিটন নিজের মুখে এখানে, এসএম কামাল বলে গিয়েছিলেন সে বহিস্কৃত। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয়, তৃণমূলের আওয়ামী লীগ অত্যান্ত হতাশাগ্রস্ত। এই ঘোষণার সাতদিনের মাথায় রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামানের গাড়িতে আক্কাসকে ঘুরতে দেখা গেছে, মেরাজকে ঘুরতে দেখা গেছে। আমরা জবাব চাই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে। এই জানাজায় তারা অনুপস্থিত কেন? তাদের সৎ সাহস নেই কেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে খুনের মামলায় দুইজন স্বশরীরে ছিল। পেছন থেকে মদদদাতা হিসেবে আসাদুজ্জামান আসাদ, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং লায়েব উদ্দিন লাভলুর নামে মামলা করবো আমরা। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমা রাজপথে থাকবো।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাঘা শান্তিপূর্ণ এলাকা, পূণ্যভূমি। সেই বাঘাকে অশান্ত করার অপচেষ্টা আজকে থেকে নয়, ২-৩ বছর আগে থেকে। আজকের ঘটনায় যে মারা গেছে, এর আগেও একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আরও মানুষ মারা যেতে পারতো। কিন্তু আমরা ছাড় দিয়ে গেছি। বার বার ছাড় দিয়ে গেছি। কখনও বাবুলের উপর দিয়ে গেছে, কখনও অন্য নেতাকর্মীদের উপর দিয়ে গেছে। আজকে বাবুলের জীবনের উপর দিয়ে গেল। তারা অব্যাহতভাবে আমাদেরকে অস্থির করার জন্য এই কাজগুলো করছে। আমি অনুরোধ করবো বাঘাবাসীকে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আপনারা আস্থা রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দারা ভাই (পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী) কথা বলেছেন। বাঘার শান্তি বাবুলের রক্ত এবং আমার রক্ত দিয়ে হলেও রাখবো। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলার পক্ষে নই। আমাদেরও দায়িত্ব আছে, আমরাও যদি আইনানুগভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এর বিচারকার্য সম্পন্ন করে আসামীদের ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলাতে না পারি, এটার পেছনে মদদদাতা, গডফাদার-কারা বাঘা থেকে গিয়ে রাজশাহীতে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে, আমি প্রশাসনকে বলবো, এই যে ব্যক্তি কয়েকজনের নাম বললাম, আসামীদের টেলিফোন নম্বরের সাথে সাতদিনের মিলিয়ে নিবেন। তাদের সঙ্গে যদি দিনের ৫ বার কথা না হয়, তাহলে আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে যাবো। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি প্রশাসনকে।’
আশরাফুল ইসলাম বাবুলের বড় ছেলে আশিক জাবেদ লাবুও জানাজায় দাঁড়িয়ে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু, পৌর মেয়র আক্কাস আলী ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলামকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন। অভিযোগ করেন, কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে বাঘা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পৌর এলাকার গাঁওপাড়া পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আশরাফুল ইসলাম বাবুলের জানাজায় অংশ নেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
বুধবার বিকাল ৪টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আশরাফুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যু হয়। পৌর মেয়র আক্কাস আলী ও তার অনুসারীদের হামলায় মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে ২২ জুন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলেন আশরাফুল ইসলাম বাবুল। ২৩ জুন চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করেন। এরপর থেকে আইসিইউতে ছিলেন বাবুল। বুধবার দুপুর থেকে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বিকাল ৪টার দিকে তিনি মারা যান।
গত ২২ জুন বাঘায় পৌরসভার সেবা বৃদ্ধি ও কর কমানোর দাবিতে চলা মানববনন্ধনে হামলা চালিয়ে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে কুপিয়ে জখম করেন পৌর মেয়র আক্কাস আলী ও তার অনুসারীরা।
ওইদিন সকাল ১০টায় উপজেলা গেটের সামনে মানববন্ধন চলাকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে দু’পক্ষের মধ্যে চলা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বাঘা পৌর সদর। সংঘর্ষের ঘটনায় পরদিন ২৩ জুন দুপুরে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন।