ঢাকা | অক্টোবর ২২, ২০২৪ - ২:৪৭ অপরাহ্ন

৯তলা থেকে নিচে ফেলে নবজাতককে হত্যা, মা গ্রেফতার

  • আপডেট: Wednesday, June 19, 2024 - 9:40 am

অনলাইন ডেস্ক: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নবজাতক পুত্র সন্তানকে ৯ তলা ভবন থেকে নিচে ফেলে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করলেন বাবা সহকারী অধ্যাপক ডা. ওসমান গনি। এর পর পুলিশ নবজাতকের মা তৃষা আক্তারকে গ্রেফতার করে।

মঙ্গলবার সকালে পুলিশ খবর পেয়ে ফ্লাটের নিচ থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে দুপুর ১২টায় ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জে পাঠায়। লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ নবজাতকের মা তৃষা আক্তার,   চিকিৎসক বাবা ডা. ওসমান গনি, নবজাতকের মায়ের বান্ধবী সুমাইয়া বেগম, কাজের মেয়ে শিলা বেগম (১৬) ও মিমকে (১০) আটক করে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে চারজনকে ছেড়ে দেয় এবং চিকিৎসক বাবা বাদী হয়ে তৃষা আক্তারকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে তৃষা আক্তার স্বীকার করেন- তিনি নিজেই তার ঘুমন্ত সন্তানকে রাত সাড়ে ৩টায় বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচে ফেলে দেন। পরে নবজাতক মারা যায়।

নিহত নবজাতকের বাবা সহকারী অধ্যাপক ডা. ওসমান গনি ( বক্ষব্যাধি সার্জন) ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মরত আছেন। তার বাড়ি শহরের ভৈরবপুর উত্তর পাড়া এলাকায়। তিনি তৃষাকে দ্বিতীয় বিয়ে করে শহরের নিউটাউন এলাকায় নিজের কেনা ফ্লাটে বসবাস করতেন। তবে তার প্রথম স্ত্রীর বাসা ঢাকায়। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।

অপরদিকে নিহত নবজাতক ছাড়াও দ্বিতীয় স্ত্রী তৃষা আক্তারের আরও দেড় বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। সপ্তাহে দুইদিন ডা. ওসমান গনি দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে নিউটাউনের বাসায় থাকতেন।

জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে ডা. ওসমান গনি ঢাকা থেকে দুদিন আগে ভৈরবের বাসায় আসেন। গত ৭ দিন আগে তৃষার ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। তার নাম রাখা হয় তাসনিদ ওসমান রাখি। নবজাতক জন্মের তিনদিন পর তিনি নিজ ফ্লাটে উঠেন। বাসায় ছিলেন তার বান্ধবী ও দুইজন কাজের মেয়ে।

এরই মধ্য ঈদ উপলক্ষে তার চিকিৎসক স্বামী দুদিন আগে বাসায় এসেছেন। ঈদের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত বান্ধবীসহ কাজের মেয়েরা কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পরে। তবে তৃষা ও তার স্বামী রাত ২টা পর্যন্ত সজাগ ছিলেন বলে জানায় পুলিশ। রাত ২টার পর স্বামী অন্য রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। অন্যরা সবাই ছিলেন এক রুমে।

রাত ৪টায় তৃষা আক্তার চিৎকার করে বলতে থাকে আমার শিশু সন্তান নেই। তার চিৎকার শুনে স্বামীসহ বাসার সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠে। পরে বাসায় খোঁজাখুঁজি করেও শিশু রাখিকে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকাল ৮ টার দিকে কাজের মেয়ে শিলা বেগম বাসার গ্রিল দিয়ে দেখতে পায় নিচে একটি শিশু মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তারপর পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ ৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকাল ৪টায় তৃষা আক্তার পুলিশের কাছে  স্বীকার করেন- তিনি নিজেই রাত সাড়ে ৩টায় সন্তানকে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচে ফেলে হত্যা করেন। এরপর রাতেই সন্তান নিখোঁজের নাটক সাজান।

উল্লেখ্য, ডা. ওসমান গনি প্রতি সপ্তাহে বন্ধের দিন ভৈরবে এসে একটি হাসপাতালে রোগী দেখেন দুইদিন। তৃষা আক্তার ছিলেন তার চেম্বারের নার্স বা সহকারী। কয়েক বছর আগে চিকিৎসক তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ডা. ওসমান। বিয়ের পর একটি পুত্র সন্তান হয় তাদের। পরে ৭ দিন আগে দ্বিতীয় পুত্র সন্তানের বাবা হন তিনি।

চিকিৎসকের সঙ্গে তৃষার বয়সের ব্যবধান ছিল ৩০ বছর। এনিয়ে তাদের মনোমালিন্য হতো প্রায় সময়। নানা কারণে তৃষা মানসিক যন্ত্রণায় থাকতেন সবসময়। তার দেড় বছরের একটি পুত্র সন্তান থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না তার। স্বামীর কথায় দ্বিতীয় সন্তান নিয়ে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। এ কারণেই নিজের সন্তানকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে ভৈরব থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় নবজাতকের লাশটি উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের সময় ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলেও ৪ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয় ও তার স্বামী ডা. ওসমান গনি মামলার বাদী হয়েছেন। একমাত্র আসামি তৃষাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তৃষা স্বীকার করেছে নবজাতককে বারান্দার গ্রিল দিয়ে ফেলে দিয়ে নিখোঁজের নাটক করেছে। ৯ তলা থেকে একটি শিশুকে মাটিতে ফেলে দিলে শিশুটি বাঁচার কথা নয়। শিশুর নাকে মুখে শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আমরা আরও অধিকতর তদন্ত করব। কি কারণে একজন মা তার সন্তানকে হত্যা করবে বিষয় মানসিক বা অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ। লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 

সোনালী/ সা