ঢাকা | ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪ - ১০:৫৭ অপরাহ্ন

প্রযুক্তির সহায়তায় বেরিয়ে আসছে নতুন নাম

  • আপডেট: Sunday, June 9, 2024 - 10:42 am

অনলাইন ডেস্ক: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড তদন্তে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এতে বেরিয়ে আসছে একের পর এক সন্দেহভাজনের নাম। আর এসব নামের পরিপ্রেক্ষিতেই খুনের পেছনে রাজনৈতিক বিরোধের সূত্র খুঁজছে পুলিশ। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে আটক করা হয়েছে।

এমপির নিজ এলাকায় রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে-এমন কয়েকজনকে ডেকেছে ডিবি পুলিশ। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে নেপালে আটক সিয়ামকে ভারতে নেওয়ার পর ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমপি আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার রাতে আটক করা হয় কাজী কামাল আহম্মেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে। এ পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। আমানুল্লাহ ও বাবুর দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। সঠিকতা যাচাইয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পর বাবুকে গ্রেফতার দেখানো হতে পারে। তবে তাকে বাঁচাতে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক তদবির চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পলাতক দুই আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজের যে কোনো একজনকে শিগ্গিরই গ্রেফতার করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, এমপি আনার হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, এমপি আনার হত্যার ঘটনায় আমানুল্লাহ, তানভীর ভূঁইয়া এবং সেলেস্তি রহমানকে গ্রেফতারের পর মূল পরিকল্পনাকারী শাহীনের বাসায় অস্ত্র আছে সন্দেহে অভিযানে যায় ডিবির টিম। কিন্তু ওই বাসায় অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তবে পাওয়া গেছে মোবাইল ফোন। এর মধ্যে ভিভো ব্র্যান্ডের একটি মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই চলছে অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাবু ঝিনাইদহ সদর থানায় হাজির হয়ে একটি জিডি করেন। ওই জিডিতে তিনটি মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন বাবু। এর একটি আইফোন, একটি ভিভো এবং একটি রেডমি মোবাইল ফোন। জিডি করার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটক করা হয় বাবুকে।

ওই সূত্রটি জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর শাহীনের সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয়েছে বাবুর। হয়েছে এসএমএস লেনদেন। একসঙ্গে বৈঠকেও বসেছেন। উঠে এসেছে শাহীনের সঙ্গে বাবুর অর্থ লেনদেনের বিষয়ও। আমানুল্লাহ, বাবু এবং শাহীনের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএমপি ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এমপি আনার হত্যার ঘটনায় আমরা প্রায় সবই পেয়ে গেছি। মূল পরিকল্পনাকারী শাহীনকে না পাওয়া পর্যন্ত সেগুলো প্রকাশ করা ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, আমরা তিনজনকে ধরেছি। ভারতে দুজন (সিয়াম ও জিহাদ) গ্রেফতার আছে। এছাড়া আরও দু-একজনকে আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তাই শাহীনকে না পেলেও মামলায় খুব একটা সমস্যা হবে না। এমপি খুনের পেছনে রাজনৈতিক বিষয় জড়িত আছে কি না-জানতে চাইলে ডিআইজি হারুন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। আটক বাবুকে গ্রেফতার দেখানো হবে কি না জানতে চাইলে বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

এদিকে শনিবার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আমরা ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। ভুক্তভোগীর (এমপি আনার) মেয়ে ভারতে যাবেন। সেখানে গিয়ে ডিএনএ নমুনা দেবেন।

এমপি আনারের ফরেনসিক রিপোর্ট ভারতের পুলিশের কাছে এসেছে কি না-জানতে চাইলে হারুন বলেন, এ বিষয়ে তাদের কাছে আমরা প্রশ্ন করিনি। ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, ভুক্তভোগীর মেয়ের নম্বর নিয়েছে। তারা শিগগিরই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ডাকবে। তারা ডাকলেই ধরে নিতে হবে ফরেনসিক রিপোর্ট এসেছে এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ডেকেছে। এমপির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ডিবির টিম ভারতে যাবে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, সেখানে আমাদের হাইকমিশনার আছেন, তারাই সহায়তা করতে পারবে।

আটক আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহম্মেদ ওরফে গ্যাস বাবুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা একজনকে এনেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এখনো তাকে আমরা আনুষ্ঠানিক গ্রেফতার দেখাইনি, জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, শাহীন বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে কাঠমান্ডু যায়। সেখান থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। যেহেতু হত্যাকাণ্ডটি ভারতে ঘটেছে, সেহেতু তাদের কাছেও শাহীন মোস্ট ওয়ান্টেড। শাহীনের বিষয়ে ভারতের পুলিশের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। আমি মনে করি, মোস্ট ওয়ান্টেড আসামির হিসাবে তারাও কাজ করছে। আমরা আমাদের এনসিবির মাধ্যমে শাহীনের যাবতীয় তথ্য কালেক্ট করেছি। এনসিবি ইন্টারপোলকে ইতোমধ্যে অবহিত করেছে। এছাড়া বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।

আনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা যেখানে যেভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান ডিবির হারুন। তিনি আরও বলেন, সিয়ামকে নেপাল থেকে ভারতের পুলিশ নিয়ে গেছে। ভিকটিমকে হত্যা করে লাশ গুমের বিষয়টি জানে সিয়াম ও জিহাদ। দুজনই ভারতের পুলিশের হাতে আছে। তাদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করলে শিগ্গিরই একটা ভালো রেজাল্ট পাবে। পাশাপাশি আমরাও সিয়ামকে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করব।

সিয়াম কলকাতায় ১৪ দিনের রিমান্ডে : আনার হত্যা মামলার আসামি মো. সিয়াম হোসেনের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি আদালত। শনিবার কলকাতা সিআইডির আবেদনে উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাতের একটি আদালত তার এ রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে নেপালে গ্রেফতার হন সিয়াম। তার গ্রেফতারের খবরে কলকাতা সিআইডি ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিনিধিদল নেপাল যায়। উভয় দেশের পুলিশ সিয়ামকে নেপাল থেকে ফিরিয়ে আনতে চায়। পরে সিয়ামকে কলকাতা সিআইডির হেফাজতে দেয় নেপাল।

উল্লেখ্য, ১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত হিসাবে এ পর্যন্ত আটজনের নাম বেরিয়ে এসেছে।