ঢাকা | জুলাই ১, ২০২৫ - ৪:০০ অপরাহ্ন

পশ্চিমবঙ্গে মোদির ভরাডুবি, শেষ হাসি মমতারই

  • আপডেট: Tuesday, June 4, 2024 - 10:45 pm

অনলাইন ডেস্ক: ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর পশ্চিমবঙ্গে আনন্দ বইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের শিবিরে। রাজ্যটিতে জোরালো ধাক্কা খেল গেরুয়া শিবির। ভোটে কোনো প্রভাব ফেলেতে পারেনি বাম-কংগ্রেস জোট।

প্রতিবেদন লেখার সময় ২৯টি আসনে ঘাসফুল প্রার্থীরা জিতেছেন বা এগিয়ে রয়েছেন। বিজেপি এগিয়ে বা জয়ী ১২টির মতো আসনে দাগ কাটতে পারেনি বাম ও কংগ্রেস জোট।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দুরন্ত ফল করেছিল বিজেপি। এক ধাক্কায় ১৮টি আসন জয়ী হয় গেরুয়া শিবির। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল গত লোকসভা নির্বাচনে পেয়েছিল ২২টি আসন। অন্যদিকে, কংগ্রেস গতবার পেয়েছিল দুটি আসন। একটি আসনও পায়নি বাম দল।

২০১৯-এর পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ২০২৪ সালেও সিপিএমের টিকিটে লড়া তরুণ বাম প্রার্থীরা প্রচারে সাড়া জাগালেও প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে পারেননি। যাদবপুরে সৃজন ভট্টাচার্য, শ্রীরামপুরে দীপ্সিতা ধর, ডায়মন্ড হারবারে প্রতীক উর রহমান, তমলুকে সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যদুস্ত হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরের পর ফলাফলের ইঙ্গিত মিলতেই সমর্থকদের উচ্ছাস শুরু হয় কালীঘাটে। গতবারের তুলনায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩ দশমিক তিন শতাংশের কাছাকাছি ভোট বাড়িয়েছে মমতার দল। রাজ্যজুড়ে বিজয় মিছিল শুরু করেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। ফলাফল ঘোষণার পর রাজ্যজুড়ে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা সামনে আসতে শুরু করে।

ব্যারাকপুরে বিজেপি সমর্থকদের ওপর হামলা মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বসিরহাটে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বিজেপির পার্টি অফিস।

এদিকে দেশের মধ্যে নজির সৃষ্টি করে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে ৭ লাখেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করেছে মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

এটিকে সন্ধ্যার কিছু পরেই সাংবাদিক সম্বেলন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তৃণমূলনেত্রী রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের ফলের জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

এরপরেই নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ ছোড়েন। মোদিকে তীব্র আক্রমণ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘আমি খুশি মোদিজি একক বৃহত্তম দল হতে পারেননি। উনি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। ওনার অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত। কারণ, উনি বলেছিলেন ‘ইস বার ৪০০ পার’।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি কী বলেছিলাম, ২০০ পার হবে কি না দেখে রাখুন। কারণ, কিছুটা হাতে রাখতে হয়। আমি বলেছিলাম পগার পার। এখন তার টিডিপি আর নীতীশের পায়ে ধরতে হচ্ছে। এরা ইন্ডিয়াকে ভাঙতে পারবে না। দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। ইচ্ছামতো আইন পাশ আর পার্লামেন্টে হবে না। ইডি-সিবিআই অত্যাচার করলে আমরা ইন্ডিয়া টিম পুরোপুরি চেপে ধরব।’

লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাশে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বসিয়ে সেখানে, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ব্যবহার করে নির্যাতন চালানোর অভিযোগে সরব হন মমতা। অভিযোগের সুরে বলেন, ‘ভোটে বিজেপি ঘনিষ্ঠ আধিকারিকদের অবজারভার হিসাবে গণনাকেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এখনও চার–পাঁচটা জায়গায় বিজেপির অবজারভার জেতার পরেও সার্টিফিকেট দিচ্ছে না। কন্টাইতে জেতার পরেও বিজেপি অবজারভার আটকে রেখে দিয়েছে সার্টিফিকেট। বিজেপিকে জয়ী ঘোষণা করার জন্য। এইভাবে নরেন্দ্র মোদি আরও কয়েকটা সিট জিততে চান।’

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে হয়ছে একাধিক ইন্দ্রপতন। পাঁচবারের সাংসদ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী হেরে গেছেন বহরমপুর কেন্দ্রে। তাকে হারান সাবেক ক্রিকেট তারকা ইউসুফ পাঠান। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে আশা জাগিয়েও হারতে হলো সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে। জোটের মুখ রেখেছে মালদহ দক্ষিণ। এখানে কংগ্রেসের ঈশা খান চৌধুরী জিতেছেন।

উত্তরবঙ্গের নজরকাড়া আসন কুচবিহারে বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক হেরে গিয়েছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডেপুটি ছিলেন তিনি। সাবেক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার পরাজিত হয়েছেন বাঁকুড়া কেন্দ্রে। বালুরঘাটের বিদায়ী সাংসদ সুকান্ত মজুমদার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদ থেকে অবসর নিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়েন৷ টানটান লড়াই জিতেছেন অল্প মার্জিনে। একইভাবে অধিকারী গড় অটুট রেখে কাঁথিতে পদ্ম প্রতীকে জিতেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু।

আসন বদলে হার হয়েছে বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের। তাকে হারিয়েছেন সাবেক ক্রিকেট তারকা তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ। আসানসোলে জিতেছেন বলিউডের সাবেক তারকা, তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনি হারান বিজেপি প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াকে।

তারকার লড়াইয়ে জিতেছে তৃণমূল। ঘাটালে দেব ও হুগলি কেন্দ্রে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতেছেন। কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে জিতে ফের লোকসভায় যাচ্ছেন মহুয়া মৈত্র।

তিনি সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল কয়েকমাস আগে। যেদিন সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল মহুয়া মৈত্রকে সেদিনই লড়াই করে ফিরবেন বলে দাবি করেছিলেন।

মতুয়া ভোটের সৌজন্যে বনগাঁ দখলে রাখতে পেরেছে বিজেপি। এখানে তাদের প্রার্থী বিদায়ী মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।

কলকাতার দুটি আসনেও জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতা উত্তরে সবার নজর ছিল। তৃণমূল ছেড়ে তাপস রায় বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন৷ তার থেকে বড় জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দক্ষিণ কলকাতায় বিপুল জয় পেয়েছেন মালা রায়।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দেবজ্যোতি চন্দ বলেন, মমতার এই জয়ে সব থেকে বড় অবদান পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২ কোটি নারীর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন প্রায় ২ কোটি নারী। এই প্রকল্পে নারীরা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা পেতেন। নির্বাচনের আগে তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। ভোটের মুখে সেই টাকা অ্যাকাউন্টে পাঠানো শুরু করে তৃণমূল সরকার।

আবার একই সময়ে ১০০ দিনের ন্যূনতম কাজের গ্যারান্টি ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে দেন নরেন্দ্র মোদি সরকার। যার ফলে পুরুষ ভোটের এইটা বড় অংশ ভরসা হারিয়েছেন নরেন্দ্র মোদির গ্যারান্টি থেকে।

এদিকে নির্বাচনে পরাজয়ের পর লোকসভায় কংগ্রেসের বিরোধী দল নেতা এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘রাজনীতিতে সবকিছু অনেকসময় নিজের ইচ্ছামতো হয় না। এতদিন বহরমপুরে অপরাজেয় হয়েছিলাম। এখন পরাজিত। কংগ্রেসের ইন্দিরা গান্ধী থেকে রাহুল গান্ধী সবাই কখনও হেরেছেন। আমিও এখন পরাজিত। মানুষ আমাকে ভোট দেয়নি, দয়া করেনি। তাই আমি হেরেছি। এর জন্য কোনো রকম অজুহাত দিতে চাই না।’

অন্যদিকে কংগ্রেসের একমাত্র জয়ী প্রার্থী ইশা খান চৌধুরী বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে আর আপোষ নয়। তার বিস্ফোরক দাবি, তার কাছে বার বার তৃণমূলের তরফে অফার এসেছিল। মন্ত্রী করতেও চেয়েছিল। দু’মাস আগেই তৃণমূল তাকে দক্ষিণ মালদহ কেন্দ্রে প্রার্থী করতে চেয়েছিল বলেও দাবি ইশার। তিনি বলেন, ‘তোলাবাজি, দুর্নীতি করতে পারব না বলেই তৃণমূলে যাইনি। আগামীতেও গনিখান চৌধুরীর ধারা বজায় রেখেই কংগ্রেসে থাকব।’

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS