ভয়ংকর নতুন মাদকে ঝুঁকছে ইয়াবাসেবীরা
অনলাইন ডেস্ক: ইয়াবার বিকল্প হিসাবে ভয়ংকর এক নতুন ট্যাবলেটে ঝুঁকছে মাদকসেবীরা। এটি হলো ‘ট্যাপেন্টাডল হাইড্রোক্লোরাইড’। ইয়াবার চেয়ে কম দামে গ্রামগঞ্জে হাতের নাগালে পাওয়ায় এখন আসক্তদের পছন্দের মাদকে পরিণত হয়েছে এই ট্যাবলেট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ইয়াবার চেয়ে বহুগুণ ক্ষতিকর। এটি সেবনে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, দেশজুড়ে যখন ইয়াবার বিরুদ্ধে মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তখন মাদকসেবীদের কাছে এর বিকল্প হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ট্যাপেন্টাডল। বিভিন্ন সীমান্ত ফাঁকি দিয়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসছে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটের চালান। মাদক চোরাকারবারিরা এসব ট্যাবলেট এনে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন ফার্মেসিতে এসব ট্যাবলেট বিক্রি করছে। কতিপয় ফার্মেসি মালিক অধিক মুনাফার লোভে এসব ট্যাবলেট তুলে দিচ্ছেন মাদকসেবীদের হাতে।
জানা যায়, প্রতি পিস ট্যাপেন্টাডল হাইড্রোক্লোরাইড ১০০ এমজি প্রতিবেশী দেশে খুচরা মূল্য ১১ টাকা ৫০ পয়সা। চোরাই পথে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করা হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পিস। আর মাদক বিক্রেতা কিংবা ফার্মেসি মালিকরা মাদকসেবীদের কাছে প্রতি পিস ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। লাল-হলুদসহ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে এই ট্যাবলেট। দেখতে হুবহু ইয়াবার মতোই। অনেক সময় মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা ট্যাবলেটের সঙ্গে মিশিয়ে এটি বিক্রি করে থাকেন অধিক দামে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাদক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এ ট্যাবলেট ইয়াবা ও হেরোইনের মতোই সেবন করে মাদকসেবীরা। কয়েক বছর ধরে এই ট্যাবলেট ইয়াবার বিকল্প হিসাবে বিক্রির চেষ্টা চলছিল। তবে কয়েক মাস ধরে ইয়াবাসেবীদের কাছে এ ট্যাবলেটের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। ইয়াবা ছেড়ে তারা এটিতে ঝুঁকছে। এটি বিক্রিতে ঝুঁকিও কম। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সদস্য এই ট্যাবলেট চিনেনও না। যে কারণে এটি বহন করতেও অনেক সুবিধা। ওষুধ হিসাবেই বহন করা যায়।
তিনি জানান, এই ট্যাবলেট ট্যাপেন্টা, পেন্টাডল, সিলটাসহ বিভিন্ন নামে হয়ে থাকে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিরোধ শিক্ষা, গবেষণা ও প্রকাশনা অধিশাখার পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী মঙ্গলবার বলেন, ইয়াবা মূলত ক্রেজি ড্রাগ হিসাবে পরিচিত। ইয়াবা সেবনে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, পরবর্তী সময়ে এতে ক্ষতি হয়। কিন্তু ট্যাপেন্টাডল হাইড্রোক্লোরাইডের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ইয়াবার বিপরীত। এটি সেবন করলে ঝিমুনি আসে। এই বিপরীতধর্মী ওষুধকে কেন ইয়াবার বিকল্প হিসাবে মাদকসেবীরা ব্যবহার করছে, তা বুঝতে পারছি না।
তিনি বলেন, এর বিরুদ্ধে আমাদের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকটি বড় চালানও ধরা পড়েছে। মিরপুরের রূপনগর এলাকার বাসিন্দা রহমত। পরিবহণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন তিনি। রহমত ২০২০ সাল থেকে ইয়াবা সেবন করছেন। তিন-চার মাস ধরে তিনি ইয়াবার বদলে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট সেবন করছেন।
রহমত বলেন, ইয়াবার দাম বেশি, তাছাড়া পুলিশ ধরে। এ কারণে ট্যাপে (ট্যাপেন্টাডল) ধরেছি। তিনি বলেন, দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই এটি ইয়াবা নাকি অন্য মাদক। ইয়াবার মতোই গ্রহণ করা যায় এটি।
মাদক ও ধূমপানবিরোধী সংগঠন মানসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, এই ট্যাবলেট সেবনে শারীরিক নানা উপসর্গ দেখা দেয়। শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে সেবনকারী হঠাৎ মারা যায়। এছাড়া জৈবিক শক্তি হ্রাস পায়। কিডনি ড্যামেজসহ নানারকম জটিল উপসর্গ দেখা দেয়।
সোনালী/ সা