তরুণদের সামনে রেখে সাজানো হচ্ছে কর্মসূচি
অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের প্রাচীন ও বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে যাত্রা শুরু করা দলটি এবার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার প্লাটিনাম জয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে চায়। এ লক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন উপকমিটি। তারা কাজও শুরু করেছে। এবার কেন্দ্রীয়ভাবে নানা আয়োজনের পাশাপাশি একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করতে চায় আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু এবং দল সম্পর্কে জানাতে চায় তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, আমরা আমাদের দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে করতে চাই।
নতুন প্রজন্মকে টার্গেট করে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিগুলো পালন করব। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস এবং আওয়ামী লীগের ইতিহাস এক ও অভিন্ন। আমরা চাই আমাদের নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত না হলেও প্রাথমিকভাবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। দুই পর্বের অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামী লীগ এবং ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানাবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হবে উপ-মহাদেশসহ বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলকেও।
এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তরুণ প্রজন্ম যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামী লীগের ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে পারে সেজন্য জাতীয় এবং তৃণমূল পর্যায়ে আয়োজন করা হবে রচনা প্রতিযোগিতার। আয়োজন করা হবে বিষয়ভিক্তিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারের। এছাড়া জুন মাসেই জাতীয় পরিবেশ দিবস এবং বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করা হয়। জাতীয়ভাবে পালনের পাশাপাশি এই দিবস ঘিরেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এছাড়া বিষয়ভিক্তিক উপকমিটিগুলো পরবর্তীতে সভা করে নতুন নতুন আরও কর্মসূচির প্রস্তাব দেবে। তবে এসব কর্মসূচিই থাকবে খসড়া আকারে। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিলেই তা চূড়ান্ত হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় প্লাটিনাম জয়ন্তী পালন উপলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমাদের সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটি গঠন হয়েছে। আগামী ২২ তারিখে বিকাল ৪টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আমাদের এই সাব কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপক্ষ্যে আমাদের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর এমপি বলেন, প্লাটিনাম জয়ন্তী পালন নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমাদের দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাও করেছি। শুক্রবার আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ছিল। এর পরেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করব। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি একেবারে তৃণমূল জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যন্ত নানা কর্মসূচির আয়োজন থাকবে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পালন উপলক্ষ্যে গত ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় কয়েকটা এজেন্ডা নেওয়া হয়। ওই দিন সভা শেষে ওবায়দুল কাদের জানান, এবার ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে তারা। কেন্দ্রীয় নানা আয়োজনের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। এরপর ৬ মে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপনে বিভিন্ন উপকমিটি গঠন এবং নানা কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভা শেষে বিরাট উৎসাহ উদযাপনের মধ্য দিয়ে ২৩ জুন ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে-জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমরা ব্যাপকভাবে পালন করার চিন্তাভাবনা করছি। থানা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ উপলক্ষ্যে ২৩ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা করা হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীসহ দলের নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানাব। আলোচনা সভার আগে কালচারাল অনুষ্ঠান হবে বলেও জানান তিনি।
দলীয় সূত্র মতে, জুনের ১ তারিখ থেকে কর্মসূচি পালন করার ব্যাপারে দলের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে ম্যাসব্যাপী থাকবে নানা আয়োজন। মাঝে পড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ ও প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর আয়োজন এক সুতোয় বাঁধতে চায় দলটি। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে যেমন জেলা-উপজেলা বা ওয়ার্ড ইউনিয়ন পর্যায়ে ঈদের ছুটিতে নানা কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগে। দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তৃণমূলের এসব কর্মসূচি সমন্বয় করবেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
সোনালী/ সা