মাদকসেবনে বাধা দেয়ায় পেটালেন রাবি ছাত্রলীগ নেতারা
রাবি: মাদকসেবনে বাধা দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগ নেতারা বেধড়ক মারধর করেছে। এ সময় তিন শিক্ষার্থী আহত হয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেল সাড়ে ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সৌরভ শেখ বন্ধন, চারুকলা অনুষদের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান পুলক ও একই অনুষদের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী আলী অম্বর ফয়েজ ওরফে অপু।
এ ছাড়া এ ঘটনায় বন্ধনের পক্ষে যোগ দেয় শাখা ছাত্রলীগের তাশরিফ আহমেদ, রাহাত হাসান খান সময়, আল ফারাবি, শামসুল আরিফিন খান ওরফে সানি হাজারী, আজিজুল হক আকাশ, সিফাত, তাসিন তানভিরসহ ৪০ জন নেতাকর্মী। তারা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে চারুকলা অনুষদের মুক্তমঞ্চের পেছনে গাজা সেবন করছিল বন্ধন ও তার দুই বন্ধু। এসময় তাদের নিষেধ করে চারুকলার কয়েকজন শিক্ষার্থী। তখন বন্ধন ও তার বন্ধুদের সঙ্গে তাদের (চারুকলা শিক্ষার্থী) সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়।
তখন চারুকলা শিক্ষার্থীরা অপু ও পুলককে জানালে তারা তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে দুপক্ষের মাঝে হাতাহাতি হয়। এসময় বন্ধনের মাথায় আঘাত পায় এবং রক্তপাত হয়। তার কিছু সময় পরে বন্ধনের পক্ষে যোগ দেয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।
এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তারা চারুকলা অনুষদ ভবনের পিছনে থাকা অপুর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং অপুকে ও অনুষদে থাকা রফিকের দোকানের ভিতরে ঢুকে পুলককে রড এবং বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এ ছাড়াও তারা রফিককে ধাক্কা দিয়ে তার দোকানের ক্যাশবক্স থেকে নগদ আনুমানিক ছয় হাজার টাকা নেয়। এসময় টাকা নিতে বাধা দিলে দোকানে কর্মরত এক নারীর গায়ে হাত তোলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আহতদের চিকিৎসার জন্য রাবি মেডিকেল সেন্টারের দিকে পাঠানো হলে চারুকলার শিক্ষার্থীদের বাঁশের লাঠি নিয়ে দল বেঁধে মেডিকেলের দিকে এসে জড়ো হয়।
তখন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল গালিব উপস্থিত হয়ে তাদের শান্ত হওয়ার নির্দেশনা দেন। পরে মেডিকেল সেন্টারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুও উপস্থিত হয়।
এ বিষয়ে আহত সৌরভ শেখ বন্ধন বলেন, আমি ও আমার বন্ধুরা চারুকলায় ঘুরতে যাই। ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ায় থাকার পরে একজন শিক্ষার্থী এসে জিজ্ঞেসা করে তোরা কারা। আমরা আমাদের পরিচয় দেই। পরিচয় দেওয়ার পরেও তারা বলে তোরা এখানে কী করতে আসছিস। এরপরে তার সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়।
তারপর সেখানে অপু ভাই ও পুলক ভাই আসে। তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। এ ছাড়াও পেছন থেকে একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। আমার বন্ধুদের ফোন দিলে তারা আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যায়। গাঁজা সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করেন।
চারুকলা শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান পুলক বলেন, এক ছোট ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলে, অপু ভাইয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসের ছোট ভাইয়েরা খারাপ ব্যবহার করছে ভাই একটু আসেন। আমি যাওয়ার পরে দেখছি বন্ধনরা ছিল। ওরা আমাকে চিনে, ওদের বলছি তোমরা আমার জুনিয়র অপু ভাই আমারও সিনিয়র।
তুমি কথাটা একটু ভালো ভাবে বলো তুই-তুকারি করো না। ওরা আমার দিকে তেড়ে আসে বলে তুই তুকারি করলে কি করবি? এর পরে আমাকে ধাক্কা মারে। ওরা ৪-৫ ছিল সবাই মিলে আমাকে মারা শুরু করে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, বিষয়টা সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছি। সংগঠনের কেউ মারামারি সঙ্গে জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ঝামেলার দুপক্ষের শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের। আর ঘটনাটি চারুকলায় হওয়ায় সেখানের ডিন বিষয়টা তদন্ত করে দেখবেন। পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদন দেখে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।