ঢাকা | জুলাই ২৭, ২০২৪ - ৬:৫৩ পূর্বাহ্ন

রাবি: সংঘর্ষের মূল কারণ আধিপত্য বিস্তার

  • আপডেট: Monday, May 13, 2024 - 9:00 pm

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: হলের অতিথিকক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে রাতভর সংঘর্ষে জড়িয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষ।

এ ধরনের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাঝে মাঝেই ছাত্রলীগের মধ্যে ছোট ছোট ঝামেলার সৃষ্টি হয়। ওই ধরনের ঘটনায় কয়েকজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা কিংবা হাতাহাতির ঘটনা ঘটলেও এবারের ঘটনা ভিন্নমাত্রা পেয়েছে।

কারণ এর নেপথ্যে রয়েছে রাবি শাখা ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দল, নেতাদের মধ্যে বিভাজন, হলে আধিপত্য বিস্তার ও পদে থেকেও ক্ষমতা না থাকার ক্ষোভ। গত দুই দিন ( রোব ও সোমবার) ছাত্রলীগের একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত শনিবার রাত ১০টায় ঘটনার সূত্রপাত হয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের অতিথিকক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের সঙ্গে হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের বাগ্বিতণ্ডা থেকেই ঘটনা বড় আকার ধারণ করে।

আতিক বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী হওয়ায় সভাপতির সকল নেতাকর্মীরা আতিকের পক্ষে অবস্থান নেয়।

তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীরাও। অন্যদিকে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পদবঞ্ছিত নেতা শাহিনুল ইসলাম সরকার ডনকে নিয়াজ মোর্শেদের পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। রাত ১১টায় শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ স্তিমিত হয় রাত ৩টার দিকে।

এসময় উভয় পক্ষকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। এছাড়াও নেতাকর্মীদের হাতে রামদা, রডসহ দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে ৬টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে। তবে ককটেল বিস্ফোরণের দায় নিতে চায়নি কোনো পক্ষই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২১ অক্টোবর রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হলে পদবঞ্চিত নেতারা নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ করেন। অবাঞ্ছিত ঘোষণাকারী নেতাদের মধ্যে অন্যতম নিয়াজ মোর্শেদ। সেই থেকেই বিরোধ শুরু।

এরপর জাতীয় কোনো কর্মসূচি ছাড়া নিয়াজ মোর্শেদকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে রাজনীতি করতে দেখা যায়নি। ওই সময় থেকে ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে বিভাজন সৃষ্টি হয় নতুন কমিটির। একাধিক ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকা সত্ত্বেও নতুন করে দুজনকে দায়িত্ব দেন নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

ফলে হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডিঙিয়ে হলে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এতে অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ে হল কমিটি। হলের নেতারা হয়ে যান রাজ্যহারা রাজা। সেই ক্ষোভ ধীরে ধীরে অগ্নিকুণ্ডে রূপান্তরিত হতে থাকে।

আবাসিক হল ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর পক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ফজলে রাব্বি জুনিয়র হওয়ায় হলে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেন বাবুর ঘনিষ্ঠ আতিকুর রহমান আতিক। হলের বিভিন্ন ইস্যুতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি হল ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ।

এছাড়া হলের আসন ভাগাভাগি নিয়েও তাদের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সঙ্গে শুরু থেকেই নিয়াজসহ একটি অংশের ঝামেলা চলছিল। এরপর হলগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দিয়ে হলের নেতাদের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করা হয়। সেখান থেকে সেই বিরোধ আরও প্রকট আকার ধারণ করে।’

হল শাখা ছাত্রলীগের আরেক নেতা বলেন, ‘নিয়াজের ব্লকের একটি সিট নিয়ে আতিকের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়। পরবর্তীতে হল সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আতিকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। আর হলের সহ-সভাপতি হয়ে হলে আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি নিয়াজ ভালোভাবে নেয়নি। যার ফলশ্রুতিতে এই তুচ্ছ বিষয়টি বড় আকার ধারণ করেছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বর্তমান থাকা সত্ত্বেও পদ-পদবিহীন অনেক জুনিয়র কর্মীকে হলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক ও মানহানীকর। আমাদেরকে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য তারা এই অপচেষ্টা করছেন। যা আমাদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। যার চূড়ান্ত পরিণতি এই সংঘর্ষ।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ‘হলের বর্তমান সভাপতি-সম্পাদক থাকা অবস্থায় হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দেওয়া হয়েছে। আমাদের রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার জন্যই মূলত এই দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি-সম্পাদক সৃষ্টি করা হয়েছে। ছাত্রলীগের কোথাও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার বিষয়ে বলা নেই। তারা চাইলে হল কমিটি বিলুপ্ত করে ভারপ্রাপ্ত নেতা দিতে পারে। এছাড়াও আমরা জাতীয় কর্মসূচিতে গিয়ে যথাযথ সম্মান পাই না। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাই সব। যা মেনে নেওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘আবাসিক হলের অনেক নেতাই ক্যাম্পাস ত্যাগ করায় সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য আমরা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সৃষ্টি করেছি। আর যারা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন তারা সক্রিয় রাজনীতি করছেন না। ফলে তাদের হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দেওয়া হয়েছে। আর আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে রাজনীতি না করে বিরোধ সৃষ্টি করেছে।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘আমাদের বর্তমান কমিটিকে সমালোচিত করে বিলুপ্ত করার পায়তারা থেকে একটি কুচক্রীমহল শিবির-ছাত্রদলের কায়দায় এই হামলা চালিয়েছে। আমরা বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের অবগত করেছি। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’