নিয়ামতপুর-পোরশায় প্রার্থীদের প্রচারণায় নির্বাচনি মাঠ সরগরম
সোনালী ডেস্ক: নিয়ামতপুর ও পোরশা উপজেলায় প্রার্থীদের প্রচারণায় নির্বাচনি মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী ও পোরশায় ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজনই আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির পদধারী ওই পাঁচ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করলেও স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা ওই পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে ‘স্বতন্ত্র কৌশলে’ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করানোয় স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে বিভেদ আরও বাড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন, নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফরিদ আহমেদ (মোটরসাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (কাপ পিরিচ), সহ-সভাপতি ঈশ^র চন্দ্র বর্মণ (ঘোড়া), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান বিপ্লব (হেলিকপ্টার) এবং জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আবেদ হোসেন মিলন (আনারস)। এছাড়াও সোহরাব হোসেন (জোড়া ফুল) নামের এক কলেজ শিক্ষক প্রার্থী হয়েছেন। তবে তাঁর দলীয় কোন পরিচয় নেই।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছ। গত ২ মে প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী থাকলেও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান বিপ্লব ও জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আবেদ হোসেন মিলনের মধ্যে মূল লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই এই চার প্রার্থীই সমান তালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঈশ^র চন্দ্র বর্মনের পক্ষেও আওয়ামী লীগের একটি অংশ কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
দলের পাঁচ নেতাকে ঘিরে উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় মাঠপর্যায়ে দলীয় কোন্দল আরও প্রকট হচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
আ’লীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, এ অবস্থায় দলের নেতাকর্মীরা যে যাকে পছন্দ করে তার পক্ষে কাজ করছেন। নির্বাচন মানেই জয়-পরাজয়ের খেলা।পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে নিজ দলেরই আরেক নেতার বিরুদ্ধে কাজ করতে হচ্ছে। এটা মোটেই সুখকর নয়। এতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হবে। তবে এটা ঠিক একাধিক প্রার্থী থাকায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে।’
পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে নওগাঁর পোরশায় শুরু হয়েছে প্রার্থীদের দৌড় ঝাঁপ। গ্রাম, পাড়া মহল্লা প্রার্থীদের প্রচারণায় নির্বাচনি মাঠ সরগরম। নির্বাচনে কে সামনে রেখে প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে নির্বাচনি মাঠ। ৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ১৬ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ২০জন প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনি এলাকা।
ইতিমধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পরই প্রার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস, কেউবা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। আবার আড্ডা-আলোচনাসহ নানা পরিবেশে প্রার্থীরা তাদের পক্ষে জনসমর্থন ও ভোট চেয়ে নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়াম্যান আনোয়ারুল ইসলাম (মোটরসাইকেল), সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ্ মঞ্জুর মোরশেদ চৌধুরী (কাপ-পিরিচ), সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন (ঘোড়া) এবং বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান কাজীবুল ইসলাম (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থীই নিজ নিজ পক্ষে জোর প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থীর এরা হলেন মহেন্দ্র পাহান (মাইক), রামলাল সরদার (টিয়াপাখি), মাহমুদুল হাসান খোকন (বই), তৈয়ব আলী (পালকী), খোরশেদ আলম (চশমা), মোহাম্মদ আলী (উড়োজাহাজ), মাইমুল ইসলাম শাহ্ (বাল্প), মোজাম্মেল হক (তালা), মাসুম বিল্লাহ্ (টিউবওয়েল) এবং আবু মুছা (গ্যাস সিলিন্ডার) প্রতীক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
অপরদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মমতাজ বেগম (হাঁস), নাসিমা বেগম (সেলাইমেশিন), অনামিকা সুইটি (ফুটবল), রেহেনা বেগম (ফ্যান), শরিফা বেগম (পদ্মফুল) ও নিলুফা ইয়াসমীন (কলস) প্রতীক নিয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিজ নিজ পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে চেয়ারম্যান পদে দুইজন নতুন মুখ এবং ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ১০জনই নতুন মুখ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজনই নতুন মুখ হিসেবে তাদের প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রার্থীরা সকলেই বিভিন্ন কৌশলে ভোটারদের কাছে তাদের জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন এবং জনগণের সেবা ও উপজেলার উন্নয়নে অবদান রাখতে নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে তাপদাহের মধ্যেও উপজেলা পরিষদের ভোট বেশ জমে উঠেছে এবং আগামী ২১ মে প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় উপজেলাবাসী বলে মনে করছেন সচেতন মহল।