রাবিতে পুড়ছে গাছ, জড়িতদের খুঁজে পাচ্ছে না প্রশাসন
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এক সপ্তাহ ধরে ঘাস ও পাতা পোড়ানো হচ্ছে। এতে বড় কয়েকটি গাছের কাণ্ড পুড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ছোট ছোট অনেক গাছ। এতে ক্ষতি হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের। রাজশাহীতে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে এসব গাছপালা কারা পোড়াচ্ছে, জানা নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল কাদিরের ভাষ্য, ‘আমার হলের পাশে এত গরম আর সবুজ ঘাসগুলো ছুরি দিয়ে কাটলে কী হয়? আগুন দিচ্ছে। এতে পরিবেশ ক্ষতির পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে, আর মাটির জীব মারা যাচ্ছে। এতে ইকোসিস্টেম ধ্বংস হচ্ছে। পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। এটা বাদ দিলাম। আগুন লাগিয়ে পোড়ানো হচ্ছে, কার্বন ডাই-অক্সাইড বাড়ছে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বড় গাছগুলোরও ক্ষতি হচ্ছে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামের সামনে পাতা ও ছোট ছোট কিছু গাছ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকটি গাছের কাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু গাছের পাতা সবুজ থেকে ধূসর বর্ণের হয়ে গেছে। গত ২৮ এপ্রিল (রোববার) বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখ্দুম হলের পেছনে গাছের পাতা ও আগাছা পোড়ানোর কারণে কয়েকটি বড় গাছে এর প্রভাব পড়েছে।
তীব্র গরমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ যেখানে উত্তপ্ত, সেখানে এভাবে আগুন দিয়ে গাছের লতাপাতা পুড়ানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পোস্টে শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
তবে এসব কাজ কারা করছেন সে বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুয়ার্ড শাখার সঙ্গে। গার্ড-সুপারভাইজার ও নিরাপত্তা প্রহরীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবন, অ্যাকাডেমিক ভবন, পরিবহন, শেখ রাসেল মডেল স্কুল, প্রধান চারটি গেটসহ আটটি গেট, পূর্ব ও পশ্চিম আবাসিক এলাকাসমূহসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করা এ শাখার দায়িত্ব।
স্টুয়ার্ড শাখার প্রধান মো. সোহরাব হোসেনকে গাছপালা পোড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘স্টুয়ার্ড শাখা থেকে গাছের পাতা পুড়িয়ে ফেলার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। পাতা পোড়ানোর ফলে বেশ কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমাদের লোকবল পর্যাপ্ত নেই। তবুও স্টুয়ার্ড শাখা থেকে ক্যাম্পাসে তদারকি বাড়ানো হবে।’
মো. সোহরাব হোসেন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুয়ার্ড শাখা এবং আবাসিক হলের কর্মচারীদের কেউ কেউ এসব কাজে লিপ্ত হচ্ছেন।
রাজশাহীতে চলমান হিটওয়েভের মধ্যেও গাছের পাতা পোড়ানোর এমন কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ এ গরমে কারা এসব পোড়াচ্ছে? কোথাও যদি পাতা ঝরে থাকে, তাহলে তো সেটা সেখানকার মাটির আদ্রতা রক্ষার জন্য ভূমিকা রাখবে। এ মুহূর্তে আগুন দিয়ে পাতা পোড়ানোর মতো বিলাসিতা কেন করা হচ্ছে, আমারতো স্বাভাবিক বুদ্ধিতে মাথায় আসছে না।’
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘ঘটনাগুলো আমাদের নজরে এসেছে। এভাবে গাছের পাতা বা আবর্জনা পোড়ানোর ফলে গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’
সোনালী/ সা