সমন্বয়হীন নগর উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের শ্রাদ্ধ!
ফ্লাইওভারের জন্য কোটি টাকার বাতি সরিয়ে ভাঙা হলো ডিভাইডার
স্টাফ রিপোর্টার: প্রকল্পের নাম ‘সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’। রাজশাহীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। অথচ রাজশাহী সিটি করপোরেশন সমন্বয়হীনভাবেই চালাচ্ছে এই কাজ। আগে থেকে কী কী বাস্তবায়ন করা হবে, সেই পরিকল্পনা করা থাকলেও অকারণে এক কাজ একাধিকবার করতে হচ্ছে। ফলে বিপুল টাকার অপচয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
সম্প্রতি রাজশাহী সিটি করপোরেশন ফ্লাইওভার তৈরি করতে গিয়ে সংলগ্ন সড়কগুলোতে কয়েকদিন আগেই লাগানো সড়কবাতি খুলে নিচ্ছে। কোটি টাকার এসব সড়কবাতি লাগানো হয়েছিলো ঢাকঢোল পিটিয়ে। শহরের সৌন্দর্য বলতে এসব বাতির প্রচারণায় চালানো হয়েছে। অথচ কয়েক বছরের মধ্যেই আবার নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারগুলোর অংশে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বাতিগুলো খুলে ফেলা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, মহানগরীর বিলসিমলা এলাকায় দুটি ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের জন্য সব সড়কবাতি খুলে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে আলোচিত প্রজাপতি বাতিও রয়েছে। বিলসিমলা অংশ থেকে ডিঙাডোবা মোড় পর্যন্ত সড়ক বিভাজন ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও কোর্ট চত্বর থেকে রায়পাড়া রেলগেট পর্যন্ত বাতি খুলে ফেলা হয়েছে। এসব সড়কে ওভারপাস নির্মাণের জন্য শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। সড়কের মাঝে বিশাল বিশাল গর্ত করে বানানো হচ্ছে পাইল। এসব এলাকায় গাড়ি চলাচলের জন্য বিকল্প পথ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, প্রায় ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর বিলসিমলা থেকে কাশিয়াডাঙা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক ডিভাইডারে বসানো হয় ১৭৪টি দৃষ্টিনন্দন বাতি। খুঁটির ওপরের অংশে প্রজাপতির মতো ডানা মেলে থাকা দুই পাশে দুটি করে এলইডি বাতির কারণেই এটি রাজশাহীর ‘প্রজাপতি’ সড়ক নামে পরিচিতি পায়। প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি খুঁটি বসানোর পর ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
উদ্বোধনের দুই মাস না যেতেই ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল বিকালে হালকা ঝড়ে সড়কের ৮৬টি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে উপড়ে যায় ৪০টি আর হেলে পড়ে ৪৬টি। এ ঘটনার পর রাসিক বিদ্যুৎ বিভাগের ‘হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, দুই রাতের মধ্যে সব সড়কবাতি মেরামত করা হবে।
এরপর দীর্ঘ ৭ মাস পর মেরামত করে আবারো ফিরিয়ে আনা হয় এই আলোচিত বাতি। দুটি ফ্লাইওভারের জন্য এবার ১৭৪টির মধ্যে প্রায় অর্ধেক বাতি পোলসহ খুলে নিয়েছে সিটি করপোরেশন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে। এর আগে সিটি করপোরেশন একটি ও আরডিএ একটি ফ্লাইওভার তৈরি করে। এই দুটি ফ্লাইওভারেই যান চলাচলের সংখ্যা অনেক কম।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, রাজশাহীর মত একটা শহরে এখনই এতগুলো ফ্লাইওভার প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তদুপরি রাস্তা, ডিভাইডার, বাতি আর ফ্লাইওভারের প্ল্যান একই সময়ে করা। তাহলে রাস্তা করা কিংবা বাতি লাগানোর সময় সেটা হিসাবে রাখা হলো না কেন যে, ফ্লাইওভার তৈরির সময় আবার এগুলো ভাঙতে হবে?
আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, এই শহর একটা অপরিকল্পিত উন্নয়নের পাল্লায় পড়েছে। গাছ কেটে, পুকুর ভরাট করে একটা কনক্রিটের শহর বানানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, প্রকল্পের টাকাগুলো খরচ করা। অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইওভারগুলোও একই কারণে।
এ নিয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, যতদূর জানি ফ্লাইওভারের পরিকল্পনা তো অনেক আগের। পরিকল্পনা আগের থাকলে এইসব সৌন্দর্যবর্ধন, রাস্তার কাজ, ডিভাইডার বা বাতি ফ্লাইওভার তৈরির পরে একবারে করা যেতো। জনগণের টাকা সাশ্রয় হতো।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার ‘টাকার অপচয় হবে না’ দাবি করে বলেন, বাতিগুলো তো আমরা ফেলে দিচ্ছি না। এগুলো অন্য সড়কে লাগাবো। সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে ধাপে ধাপে কাজগুলো করলে সুবিধা হতো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা তো হতোই। কিন্তু পরিকল্পনা একসাথে করা হলেও অন্যান্য ফরমালিটি তো আলাদা হয়ে যায়।