ঢাকা | জুন ৯, ২০২৫ - ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : বছর যায় শেষ হয় না বিচার

  • আপডেট: Wednesday, April 24, 2024 - 12:09 pm

অনলাইন ডেস্ক: সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হওয়া হত্যা ও ইমারত বিধি লঙ্ঘন মামলার বিচার শেষ হয়নি ১১ বছরেও। উচ্চ আদালতের আদেশে প্রায় ছয় বছর স্থগিত থাকার পর গত বছর হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। আর ইমারত বিধি লঙ্ঘন মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিতই রয়েছে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১ হাজার ১৩৮ জন প্রাণ হারান। এর পর বেশ কয়েকটি মামলা হলেও হত্যা ও ইমারত বিধি লঙ্ঘনের মামলা দুটিই প্রধান। দুই মামলায় ভবন মালিক মো. সোহেল রানা কারাগারে থাকলেও অধিকাংশ আসামি জামিনে বা পলাতক রয়েছেন। সোহেল রানাও হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছিলেন, তবে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ গত ১৫ জানুয়ারি তা স্থগিত করেন। পাশাপাশি পুলিশের করা হত্যা মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ঢাকার বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেন। এর পর বিচারিক আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।

সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১০ তলা ‘রানা প্লাজা’য় ছিল বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা। ভবনটি ধসে পড়লে ওই সব কারখানার ৫ হাজারের মতো শ্রমিক চাপা পড়েন। কয়েক দিনের তৎপরতায় ১ হাজার ১৩৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ২ হাজার ৪৩৮ জনকে, যাদের অনেকে পরবর্তী সময়ে পঙ্গু হয়ে যান। ঘটনার পাঁচ দিন পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ৪১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে হত্যা মামলায় বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকা জেলা আদালত। এ মামলার আসামিদের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন শুধু সোহেল রানা। অন্য আসামিদের মধ্যে রানার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কলু খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা গেছেন।

অভিযোগ গঠনের পরপরই সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র রেফায়েত উল্লাহ ও তৎকালীন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানসহ আটজন মামলাটি বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এর ফলে আটকে যায় সাক্ষ্য গ্রহণ। ২০২২ সালে হাইকোর্টে মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। ওই বছরের ৩১ জানুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। মামলায় গত দুই বছরে ৯৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে বলে জানান ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি বিমল সমাদ্দার। সর্বশেষ গত ২১ এপ্রিল চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। আগামী ২৮ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

কবে নাগাদ মামলাটির বিচার শেষ হবে– জানতে চাইলে বিমল সমাদ্দার বলেন, ‘মামলায় সাক্ষী ৫৯৪ জন। প্রায় ছয় বছর উচ্চ আদালতের আদেশে বিচারকাজ স্থগিত ছিল। এখন প্রতি মাসেই তিন-চারটা তারিখে সাক্ষ্য গ্রহণ হচ্ছে। তবে অনেক সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, অনেকে অসুস্থ। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরই মামলার রায় হতে পারে।’

দুটি মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে জোর চেষ্টা চলছে বলে জানান ঢাকা জেলা দায়রা ও জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি শেখ হেমায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আড়াইশ থেকে ৩০০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হলেই হত্যা মামলার রায় করা সম্ভব। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে এ বছরও রায় হতে পারে।’

স্থগিত ইমারত বিধি লঙ্ঘন মামলা
রানা প্লাজা ধসের পর ইমারত লঙ্ঘনের অভিযোগে সাভার থানায় একটি মামলা করেন রাজউক কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন। এ মামলায় ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। এরপর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ২০১৬ সালের ১৪ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে কয়েক আসামি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। গার্মেন্ট মালিক মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামের রিভিশন মঞ্জুর করে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া আসামি রেফায়েত উল্লাহর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। ফলে গত আট বছরেও এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পিপি আনোয়ারুল কবির বাবুল।

সোনালী/ সা

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS