ঢাকা | মে ১৫, ২০২৫ - ৫:২৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

এক মণ শসা বিক্রি করেও মিলছে না এক কেজি চাল

  • আপডেট: Sunday, April 21, 2024 - 12:10 pm

অনলাইন ডেস্ক: সবুজ গাছের ডগায় ডগায় ঝুলছে শসা। হয়েছে বাম্পার ফলন। তবুও হাসি নেই কৃষকের মুখে। কারণ শসা বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দামে। এক মণ শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। ফলে এক মণ শসায় বর্তমান বাজারে মিলছে না এক কেজি চাল। মাথায় হাত উঠেছে দেশের অন্যান্য জেলার মতো পঞ্চগড়ের কৃষকদেরও।

জেলায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছুদিন আগেও যে শসার দাম ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। এখন সেই শসা বিক্রি করতে হচ্ছে ১ থেকে ২ টাকা কেজিতে। এক মণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আর বাজারে এই শসাই বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজিতে।

উত্তরের জেলা চা শিল্পের পাশাপাশি সবজি আবাদেও অনন্য জেলা পঞ্চগড়। এ অঞ্চলের সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলাতেও সরবরাহ করা হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় পাইকাররা কৃষকের খেত থেকেই শসা কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। কিন্তু এ বছর ন্যায্য দাম না পেয়ে তারা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

জেলার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের চাষি হাতেম আলী দুই বিঘা জমিতে শসা আবাদ করেছেন। আশা করেছিলেন দুই বিঘা জমির আবাদ করা শসা বিক্রি করে লাভবান হবেন। কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না। খেতের শসা বিক্রি করতে হচ্ছে ৩০ টাকা মণে। এতে লাভের জায়গায় উৎপাদন খরচ ওঠানো নিয়ে চিন্তায় কপালে ভাজ পড়েছে তার। হাতেম আলীর মতো তেঁতুলিয়ার শারিয়ালজোতের শসা চাষি আকবর আলীরও। তিনিও বলেন, পাইকারদের কাছে পানির দরে শসা বিক্রি করে বিপাকে পড়েছি।

চাষিরা জানান, কিছু দিন আগেও খেত থেকে পাইকাররা ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে শসা কিনেছেন। এখন তারা সে দামে নিতে চাইছেন না। এখন প্রতি মণ শসা বিক্রি করতে হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা দরে। তারপরেও কেউ নিতে চাচ্ছে না। অনেকে বাকি কিনে পরে টাকা দেয়। এ কারণে অনেকে ক্ষোভে খেত থেকে শসা তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন। গাছেই নষ্ট হচ্ছে শসা।

চাষিদের অভিযোগ, শসা ঘিরে তৈরি হয়েছে এক ধরনের পাইকারি সিন্ডিকেট। আমাদের কাছ থেকে কম দামে শসা কিনে বেশি দামে বিক্রি করে নিজেদের পকেট ভরছেন। আর কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি খুচরা ক্রেতাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

জেলার সদর, তেতুলিয়ার শালবাহান, ভজনপুরসহ বেশি কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাচামাল ব্যবসায়ীরা ৮-১০ টাকা কেজি দরে ব শসা বিক্রি করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, আমরা সামান্য লাভে শসা বিক্রি করছি। বিশেষ করে শসা দুই দিনের বেশি রাখা যায় না। তাই ১০ টাকা দরে বিক্রয় করতে হচ্ছে।

তেঁতুলিয়ার শারিয়ালজোতের শসা চাষি মোশারফ হোসেন বলেন, ৫০ শতক জমিতে শসা আবাদ করেছি। ভাবছিলাম লাভবান হব। এখন পানির দরে শসা বিক্রি করছি। খরচটাও উঠাবে না। এক মণ শসা বিক্রি করেও এক কেজি চালের দাম হয় না।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শসার চাহিদা কম। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়া ও মোকামে দাম না থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিছুদিন আগেও তো আমরাই চাষিদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি পর্যন্ত শসা কিনেছি। তখন চাহিদা ছিল।

পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে এখন শসার চাহিদা কম। তাই শসার দামও কম। তাই সময় অনুযায়ী যে চাহিদা থাকে সে অনুযায়ী আমরা কাচামাল পাইকারিতে কিনে থাকি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, এ বছর পঞ্চগড়ে ২১৫ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। আসলে এক সঙ্গে বাজারে ওঠায় দাম কমে গেছে। তবে আশা করছি সামনে দাম বাড়বে।

 

সোনালী/ সা

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS