ঢাকা | জুলাই ২৭, ২০২৪ - ৫:২৬ পূর্বাহ্ন

নিহত সাংবাদিক নাদিমের মেয়ের আবেগঘন পোস্ট

  • আপডেট: Friday, April 12, 2024 - 8:15 pm

অনলাইন ডেস্ক: জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিমের মেয়ে ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট করেছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসবে বাবাকে স্মরণ করতে গিয়ে একটি আবেগঘন লেখা নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন সাংবাদিক নাদিমের কলেজপড়ুয়া মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত।

রাব্বিলাতুল জান্নাত তিন ভাইবোনসহ মায়ের ছবি সংবলিত আবেগঘন লেখা তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। লিখেছেন, ‘আমাদের আব্বুও নেই, ঈদও নেই। গত বছর (রমজানে) ঈদেও আব্বু ছিল। আব্বু ছাড়া ঈদ যে কত কষ্টের, তা আমরা এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছি। আব্বু সকালবেলা সবার আগে আমাকে ঘুম থেকে তুলত। আর বলত, তাড়াতাড়ি ঈদের জামা পরো। আব্বু মারা যাওয়ার পর এখন আর ঈদের জামা পরা হয় না। আব্বু আমাদের সব সময় আগলে রাখত। কিন্তু এখন আর কেউ আগলেও রাখে না, খোঁজখবরও কেউ নেয় না। যারা হারায় সে বুঝে বিচ্ছেদে কী যন্ত্রণা।’

সাংবাদিক নাদিম উপজেলার নীলাখিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য আব্দুল করিমের ছেলে। একাত্তর টেলিভিশন ও মানবজমিন পত্রিকার বকশীগঞ্জ সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক ঈদে যে বাড়িতে থাকত উৎসবের আমেজ; এবার সেই বাড়িতে সুনসান নীরবতা। এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। বকশীগঞ্জে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিমের পরিবারের চিত্র এটি। ২০২৩ সালের ১৪ জুন রাতে পেশাগত কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ কতিপয় দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত হন সাংবাদিক নাদিম। পরের দিন ময়মনসিংহ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া এই উপজেলায় অতীতেও অনেক সাংবাদিক হামলাসহ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার আসামি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের ঘটনার একটিরও বিচার হয়নি।

বাবাকে ছাড়া প্রথম রমজানের ঈদ কোনোভাবেই মানতে পারছে না নাদিমের তিন সন্তান। সাংবাদিক নাদিমের কলেজপড়ুয়া মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত (২০) বলেন, ‘বাবা নেই। তাই আমাদের ঈদও নেই? আমি যখন যা চেয়েছি, বাবা তা-ই দিয়েছেন। আমার ইচ্ছাপূরণের আর কেউ রইল না। বাবাই ছিল আমার জীবনের সবকিছু। আর সেই বাবাকে তাঁরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে।’

সাংবাদিক নাদিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত (১৯) বলেন, ‘গতবার রমজানের ঈদে বাবার সঙ্গে কেনাকাটা করেছি। বাবা আমাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনে দিয়েছেন। কিন্তু এবার বাবা নেই। আমরা কিছুই করতে পারছি না। কোনো নতুন জামা-কাপড় কেনা হয়নি। বাবাকে হারিয়ে আমরা অসহায়। ঈদের আনন্দ থেকে আমরা বঞ্চিত।’

নাদিমের মৃত্যুর পর গত বছরের ১৭ জুন বকশীগঞ্জ থানায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জন এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের নামে হত্যা মামলা করেন তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম। এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান বাবু এখনো কারাগারে।

সাংবাদিক নাদিমের স্বজনদের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান বাবুর পরিবারের সদস্যরা টাকা দিয়ে পলাতক আসামিদের সহযোগিতা করছেন। তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, ‘বাবু চেয়ারম্যান, তাঁর বউ, তাঁর ছেলের যে অ্যাকাউন্টগুলো আছে, ব্যাংক ব্যালেন্স আছে সেগুলো জব্দ করা হোক। তাঁরা ব্যাংক থেকে টাকা লেনদেন করছে। বাকি আসামিরা সবাই ঈদ করতে পারছে আর আমার স্বামী কবরে শুয়ে আছে। সাংবাদিক নাদিম গত বছর রমজানের ঈদে নিজে বাজার করেছিলেন। তিনি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতেন।’

 

সোনালী/ সা