ঢাকা | মে ১৯, ২০২৪ - ৩:৩১ পূর্বাহ্ন

মাদক না পেয়ে ৩ যুবককে বেধড়ক পেটালেন ডিনসির সদস্যরা

  • আপডেট: Monday, April 8, 2024 - 12:11 pm

স্টাফ রিপোর্টার: চাঁপাইনবাবগঞ্জের রানিহাটিতে পথচারী ৩ যুবকের দেহ তল্লাশি করে কোনপ্রকার মাদকদ্রব্য না পেয়ে বেধড়ক মারধর, ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের বিরুদ্ধে। মারধরের শিকার হয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে আহত তিন যুবক। শনিবার (০৬ এপ্রিল) দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার রানিহাটি হলমোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী যুবক, স্থানীয় বাসিন্দা, প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, একটি মোটরসাইকেলে নবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়ক দিয়ে শিবগঞ্জ যাচ্ছিলেন তিন যুবক। এসময় রানিহাটি হলমোড়ে পৌঁছালে তাদেরকে গতিরোধ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ১০-১১ সদস্যের একটি দল। পরে সড়কের পাশেই তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। এসময় ওই তিন যুবকের দেহ ও গাড়িতে কিছুই পায়নি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। ভুক্তভোগী যুবকদের অভিযোগ, মাদকদ্রব্য না পেলেও মোটরসাইকেল বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাংচুর ও সিট ছিঁড়ে তল্লাশি করে ডিএনসির সদস্যরা। এসময় সেখানেই কিছু না পেলে তাদেরকে কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে তারা। এমনকি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও ভয়ভীতি-হুমকি দেয়া হয়।

আহত তিন যুবক হলেন- সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরহাট গ্রামের সুধীর চন্দ্র রবি দাসের ছেলে শ্যামল চন্দ্র রবি দাস, একই গ্রামের মসিদুল হকের ছেলে তহরুল ইসলাম ও বহরম হঠাৎপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন বাবু। তারা সকলেই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে শ্যামলের অবস্থা গুরুতর।

জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন তালুকদার, উপ-পরিদর্শক মো. আসাদুর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. মামুনুর রশীদসহ ১০-১১ জন সদস্য মিলে এই মারধর করে।

শ্যামলের অভিযোগ, মারধরের সময় তার বিশেষ অঙ্গে আঘাত করেছে ডিএনসির সদস্য। এতে মারাত্মক জখম হয়েছে। আমরা শিবগঞ্জ যাচ্ছিলাম একটি ব্যক্তিগত কাজে। হঠাৎ করেই রানিহাটি হলমোড়ে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে আটক করে। এসময় আমাকেসহ আরও দুই জনকে বেধড়ক পিটিয়েছে তারা। আমার গলা ও মাজায় লাঠি দিয়ে মেরেছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের তিনজনকে বাজে ভাবে হেনস্তা করেছে। আটক করার পরপরই বাগানের দিকে নিয়ে যেতে চাইছিল। আমরা রাজি না হলে গাড়ির মধ্যে উঠাতে চাই। তাতেও রাজি না হওয়াতে আরও মারধর করে ও ভয়ভীতি দেখায়। আমরা রাজি হয়নি, কারন আমাদের কাছে মাদকদ্রব্য না পেলেও নিজেদের কাছে থাকা মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসাবে।

আরেক যুবক তহরুল ইসলাম জানান, আমরা মাদকের আশেপাশে থাকি না কখনো। কিন্তু জোরপূর্বক আমাদের কাছে মাদক রয়েছে বলে স্বীকার করিয়ে নেয়ার জন্য মারধর করে। কিন্তু আমাদের ভাগ্য সহায় ছিল বলেই আজকে তাদের মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা পেয়েছি। কারন বাজারের মধ্যে আমাদেরকে মারধর করা দেখে কয়েকশ লোকের সমাগম হয় সেখানে।

আহত যুবক নাসির উদ্দিন বাবু বলেন, দেহ ও গাড়ি তল্লাশি করে মাদক না পেয়ে বেধড়ক মারধর করার পর ইদের পর মাদকদ্রব্য বিক্রি বা এর সাথে সংশ্লিষ্ট কাউকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য বলে তারা। তাদের কথা মতো কাজ না করলে যেকোনভাবে মাদক দিয়ে আটক করার হুমকি দেয় ডিএনসির সদস্যরা। এলাকাবাসীর কারনে তারা মারধর করে চলে যাওয়ার পর আমরা তিন জন জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছি। আমরা চাই, এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা এমন করেই মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসায়।

স্থানীয় দোকানদার জনির দোকানের সামনেই ঘটে পুরো ঘটনা। এবিষয়ে তিনি বলেন, ডিএনসির সদস্যরা তাদেরকে জোরপূর্বক দেহ ও মোটরসাইকেল তল্লাশি চালায়। কিছু না পেলেও বেধড়ক মারধর ও হেনস্তা করে। তাদের কাছে মাদক না পেলেও এমন ব্যবহার করেছে ডিএনসি।

রাস্তার পাশে সিমেন্টের দোকানের মধ্যে নিয়ে গিয়েও শ্যামলকে মারধর করে ডিএনসির সদস্যরা। মারধর ও হুমকি দেখায় তারা। দোকানদার জিয়াউর রহমান অহিদ বলেন, আমার দোকানের সামনে তল্লাশি ও মারধর করা হয়েছে।

এবিষয়ে কথা বলতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আনিছুর রহমান খাঁন ও পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন তালুকদারের সাথে কথা বলতে অফিসে গেলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি তারা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক মো. আসাদুর রহমান জানান, নিয়মিত অভিযানের সময় তাদেরকে তল্লাশি করা হয়। সাথে কোন মাদকদ্রব্য না পাওয়া যাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়। এসময় তাদেরকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

 

সোনালী/ সা