ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ২:১৮ অপরাহ্ন

চুরির টাকায় প্রেমিকা নিয়ে ফুর্তি, ভারতে পালাতে গিয়ে ধরা

  • আপডেট: Wednesday, April 3, 2024 - 10:43 am

অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর পুরান ঢাকার কোতয়ালী থানার ইসলামপুরে লেডিস কাপড় বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘নাশওয়ান ফ্যাশন’। প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতেন সাঈদ আহমেদ। সনাতন ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করা সাঈদ নিজের কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান মালিকের বিশ্বস্ত কর্মী হয়ে ওঠেন। তবে নারীর প্রতি লালসা ও পরকীয়ার কাছে হার মানে সাঈদের সততা আর বিশ্বাস।

প্রতিষ্ঠান মালিকের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে সেই টাকা নিয়ে প্রেমিকা রিতার কাছে চলে যান সাঈদ। রিতাকে নিয়ে বগুড়া, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলায় ঘুরেন। প্রেমিকাকে নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করে দুই হাতে টাকা উড়াতে থাকেন। প্রেমিকাকে কিনে দেন দামি দামি পোশাক। এক পর্যায়ে গ্রেফতার এড়াতে চেষ্টা করতে থাকেন দেশ ছাড়ার।

তবে দেশত্যাগের প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় চেষ্টার আগেই সাঈদ ধরা পড়ে যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে। সোমবার (১ এপ্রিল) প্রেমিকা রিতাকে নিয়ে দেশ ছাড়ার উদ্দেশে যশোর যাওয়ার পথে ডিবির লালবাগ বিভাগের হাতে ফরিদপুরে গ্রেফতার হন সাঈদ ও রিতা।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে  এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, ইসলামপুরের লেডিস কাপড় বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘নাশওয়ান ফ্যাশন’। ২০২২ সাল থেকে ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সাঈদ। সে একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। তার আগের নাম প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। বাড়ি গাইবান্ধা সদর থানায়। সে এর আগেও রংপুরের বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে কাজ করেছে। নিজের কর্মদক্ষতা ও বিশ্বস্ততা দিয়ে নাশওয়ান ফ্যাশনের মালিকের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

ডিবির এ কর্মকর্তা আরও জানান, সাঈদের দুই স্ত্রী রয়েছে। এরপরও অন্য এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেই পরকীয়া প্রেমিকার ফাঁদে পড়ে বিশ্বস্ততা ভেঙে ব্যবসায়ীর ৩৩ লাখ টাকা চুরি করেন সাঈদ। পরে এ টাকা দিয়ে বিভিন্ন জেলায় প্রেমিকা নিয়ে ঘুরে আমোদ-ফুর্তি ও প্রেমিকার জন্য কেনাকাটা করেন।

jagonews24

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, বিশ্বাস আর সততা পরাজিত হয় সাঈদের পরকীয়ার কাছে। গত ২৪ মার্চ চুরির আগের দুদিন শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ ছিল। ঈদের বাজারে এ দুদিন ভালো বেচাবিক্রি হয়। প্রতিষ্ঠানের লকারে জমা হয় ৩৩ লাখ টাকা।

সেই টাকা ব্যাংকে জমা দিতে সাঈদ ও প্রতিষ্ঠানের অন্য এক কর্মচারীকে ব্যাংকে পাঠানো হয়। কিন্তু পথে সঙ্গে থাকা অন্য কর্মচারীকে দোকানে ফেরত পাঠিয়ে সাঈদ একাই ব্যাংকে যান টাকা জমা দিতে। ব্যাংকে কিছু সময় ঘোরাঘুরিও করেন। কিন্তু টাকা জমা না দিয়ে ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে চলে যান সোজা গাজীপুরে প্রেমিকা রিতার কাছে। সেখান থেকে প্রেমিকাকে নিয়ে নরসিংদী, নরসিংদী থেকে বগুড়া। বগুড়ায় তারা অনেক কেনাকাটা করে সেখান থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধার তেঁতুলিয়া যায়।

সেখানে গিয়ে আমোদ-ফুর্তি করে দুই হাতে টাকা খরচ করতে থাকেন সাঈদ। সেখান থেকে যান প্রেমিকার বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুরে। রিতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় সাঈদকে। উদ্ধার করা হয় ট্রাঙ্ক ও মাটিতে গর্ত করে লুকিয়ে রাখা ৩১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা।

গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে সাঈদ জানিয়েছেন, পরকীয়ার সম্পর্ক ও প্রেমিকাকে বিয়ে করে আমোদ-ফুর্তি করে ঘুরে বেড়ানোর জন্যই টাকা চুরি করেছেন তিনি। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারে এই ভয়ে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা দিয়ে পাশের দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেখান দিয়ে দেশ ছাড়তে ব্যর্থ হয়ে যশোর দিয়ে যাওয়ার পথে ফরিদপুরে গ্রেফতার হন।

গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন সাঈদের প্রেমিকা রিতা (৩২)। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকায়। তিনিও বিবাহিত। তবে স্বামীর কাছ থেকে দূরে থাকা রিতা সাঈদের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি নরসিংদীর পাঁচদোনা এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

 

সোনালী/ সা