রাবিতে নির্মাণাধীন ভবনধসের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
![](https://sonalisangbad.com/wp-content/uploads/2022/06/1607973965.Rajshahi-university.cl-2020-03-05-23-54-23.jpg)
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ১০ তলা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল মিলনায়তনের একটি অংশ ধসে পড়ার ঘটনায় নির্মাণ কাজে গাফিলতি ছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩০ তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সদস্য উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ও নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিন্ডিকেট সদস্যরা বলেন, মিলনায়তনের একাংশ ধসে পড়ার ঘটনায় নির্মাণ কাজে গাফিলতি পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রকৌশলীকে প্রত্যাহার ও আহত শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসাব্যয় ও পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
নির্মাণ কাজে কি ধরনের গাফিলতি পেয়েছে তদন্ত কমিটি এ প্রশ্নের জবাবে উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সাটারিংয়ে ব্যবহৃত খুঁটির রড মান-সম্মত ছিল না। এছাড়া কাঁচা বিমের ওপর ছাদ ঢালায় করায় ওই দূর্ঘটনা ঘটেছে। ভবনের অন্যান্য অংশেও এ ধরণের কোনো কাজ করা হয়েছে কিনা সেটিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে তদন্ত কমিটি।
কিন্তু অন্যান্য অংশে কোনো গাফিলতি খুঁজে পায়নি তারা। ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পরবর্তীতে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ধসে পড়া ভবনে কাজ শুরু
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা ও সেই অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় নির্মাণাধীন ওই ভবনে কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে এই কাজ চলছে।
গতকাল রোববার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মিলনায়তন ধসে পড়ার অংশে অন্তত দশজন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা ধসে পড়া ভবনের ঝুলে পড়া বিভিন্ন অংশ অপসারণ করছেন ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে দায়িত্বরত জীবন নামে এক সুপারভাইজার বলেন, গতকাল থেকে প্রায় ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদেরকে ঝুলে থাকা অংশ অপসারণ করতে বলা হয়েছে। এরপর নতুন নকশায় পুরোদমে আবার কাজ শুরু হবে।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের মিলনায়তনের একাংশ ধসে পড়ে।
এ ঘটনায় নয়জন আহত হয়েছিলেন। ওই দিন রাতেই জরুরি সভা ডেকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে ঘটনার চার দিন পর ৪ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ওই দিন থেকে পরবর্তী সাত কার্যদিবস ১২ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
পরে তদন্ত কমিটির সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আরও সাতকার্যদিবস বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফা সময় শেষ হওয়ার আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান আবাসিক হল ও ২০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ করছে রূপপুরের ‘বালিশ-কাণ্ডে’ আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন এ দুই ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর আগে বিভিন্ন সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে।
সোনালী/জেআর