ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ৭:৪৭ পূর্বাহ্ন

ঈদের বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা ৪০০’র বেশি কারখানায়

  • আপডেট: Thursday, March 28, 2024 - 12:47 pm

অনলাইন ডেস্ক: প্রতি বছর দুই ঈদের আগে দেশের তৈরি পোশাক কারখানার বহু শ্রমিকের বেতন-বোনাস বকেয়া থাকে। ঈদের আগে ঘোষণা ছাড়াই হুটহাট বন্ধ করে দেওয়া হয় অনেক কারখানা। ছাঁটাই করা হয় কর্মীদের। এসব কারণে প্রতিবারই ঈদ এলে বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়কে নামতে বাধ্য হন পোশাক শ্রমিকরা।

বিগত বছরগুলোতেও ঈদের আগে সড়ক অবরোধ, যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবারই এসব কর্মকাণ্ডে ইন্ধন জুগিয়েছে এক শ্রেণির কুচক্রী মহল। শ্রমিকদের এসব আন্দোলনে বিভিন্ন গোষ্ঠীর উসকানিতে তৈরি হয়েছে নাশকতামূলক পরিবেশ। অবনতি ঘটেছে আইনশৃঙ্খলার।

এ বছরও ঈদুল ফিতরের আগে দেশের অন্তত ৪১৬টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য বেতন-ভাতা ও বোনাস হাতে পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঈদের আগে তারা পাওনা বুঝে না পেলে এবারও চরম শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। এতে কারখানা অধ্যুষিত শিল্প এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজানের ঈদের ছুটির আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হবে। ঈদের আগে কারখানাগুলো কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে না। এজন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আসন্ন ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে সমস্যায় পড়তে পারে ৪১৬টি পোশাকশিল্প কারখানা। যার অর্ধেকের বেশি বিজিএমইএ (বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) ও বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন)’র সদস্যভুক্ত পোশাক কারখানা। আর্থিক সংকট, পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ না থাকাসহ নানা কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে এই কারখানাগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া, গ্যাস সংকটসহ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা কারণে চাপে আছে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প। যার প্রভাব পড়ছে শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধে। মার্চ মাস শেষ হতে চললেও এখনো ফেব্রুয়ারির বেতন দিতে পারেনি অনেক কারখানা। তার ওপর যুক্ত হচ্ছে ঈদ বোনাস। সংকট আছে অন্য খাতসমূহের কারখানায়ও।

শিল্প পুলিশের হিসাবে, দেশে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা ৪১৬টি। তার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ১৭১টি, বিকেএমইএর ৭১টি, বিটিএমএর ২৯টি, বেপজার ১৩টি এবং এসবের বাইরে ১৩২টি কারখানা রয়েছে। তিন হাজার ৬০০টি কারখানার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে শিল্প পুলিশ।

শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে তিন পাশে শিল্পাঞ্চল। এসব পথ ধরেই ঈদে গ্রামে ফিরবে ঘরমুখো মানুষ। পোশাক কারখানার মালিকরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ না করলে শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হবে। এতে সড়ক অবরোধসহ সহিংস পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। এসময়ে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে সড়কে দুর্ভোগে পড়তে হবে ঈদযাত্রীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের দাবিতে রাস্তায় নামতে পারে। তখন পুলিশকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। শ্রমিকদের সামনে ভিলেন হতে হয় পুলিশকে। কারণ, শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশকেই মুখোমুখি ভূমিকা নিতে হয়, তখন কারখানা মালিক সংশ্লিষ্টদের খুঁজেও পাওয়া যায় না।

অতীতে ঈদের আগে বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও গত কয়েক বছর সেটি করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে প্রশ্ন করা হলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়নি। কোন শিল্পের মালিক কখন বেতন-বোনাস দিতে পারবেন, কখন দিতে পারবেন না, সেটা তো আমরা জানি না। আমরা শুধু বলেছি, ঈদের ছুটির আগে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। ঈদের আগে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না। এটা আমাদের কড়া নির্দেশনা।

তবে ঈদ সামনে রেখে দেশের পোশাক খাতে কোনো শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেবে না বলে আশা প্রকাশ করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা বা ভাঙচুর চাই না।

জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাকশিল্পে সংকট অনেক বেশি। নানা সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে কারখানাগুলো। ব্যাংকের সঙ্গে নানা রকম সংকট, আন্তর্জাতিক মার্কেটে অর্ডার কম, রপ্তানি কম- এ ধরনের প্রতিকূলতাও রয়েছে। অন্যদিকে সবকিছুর দাম বেড়েছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে, অথচ কারখানাগুলোতে ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যায় না। এ কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হলে সময়মতো পণ্য ডেলিভারি করা যায় না। এতে নির্ধারিত সময়ে টাকাও হাতে আসে না। তখন বেতন-বোনাস দিতে সমস্যা হয়।

তিনি বলেন, নগদ প্রণোদনা বাবদ সরকার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ঈদের আগে এই টাকা পেলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।

২০২৪ সালকে দেশের পোশাকশিল্পের জন্য আরও কঠিন বছর উল্লেখ করে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হীল রাকিব জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান অবস্থায় ভালো কারখানাগুলোর মালিকেরাও ভোগান্তিতে পড়ছেন। কারখানা মালিকরা কখনো বেতন-বোনাস বকেয়া রাখতে চান না। সবাই চান ঈদের আগে অন্তত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করে তাদের ঈদের ছুটি দিতে।

বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের আগে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই যেন শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফ করা না হয়- এ ব্যাপারে মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ, শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে অনেক কারখানায় বিগত সময়ে ঈদের আগে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল।

‘ঈদের আগে কোনো পোশাক মালিক বেতন-ভাতা দিতে ব্যর্থ হলে বিকল্প কোনো উপায় বের করার জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা হতে পারে- গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য এ রকম কারখানা শনাক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মালিক, পুলিশ প্রশাসন- কার কী করণীয় সেটাও নির্ধারণ করা হয়েছে।’

শিল্প পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে, ঈদের বোনাস যেন এপ্রিলের শুরুতে পরিশোধ করা হয়। ঈদের ছুটির আগেই যেন মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়। মালিক ও শ্রমিকদের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ঈদের ছুটি যেন পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয়।

‘ঈদুল ফিতর সামনে রেখে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাকে ইস্যু করে কোনো কুচক্রী মহল যেন উসকানি দিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে- এ বিষয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’- যোগ করেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশপ্রধান মাহাবুবর রহমান।

 

সোনালী/ সা