উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে না বিএনপি
অনলাইন ডেস্ক: বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি। দলটি আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নেবে না। তবে তৃণমূলের অনেকের এ নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ থাকায় সম্প্রতি দলের হাইকমান্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে মানে দলের পদ-পদবি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দলের কেউ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এটিই দলীয় সিদ্ধান্ত।
জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকা বিভাগীয় জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয় তৃণমূলের সঙ্গে দলটির হাইকমান্ডের। এ সময় তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান, চলমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে দলের কেউ অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক জেলার শীর্ষ নেতারা বলেন, তাদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাচনে দলের কেউ অংশ নিলে তাদের বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনেরও কেউ অংশ নিলে তাদের বিরুদ্ধেও একই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছেন, শেষ মুহূর্তে দল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে সে রকম সম্ভাবনা এখন আর নেই।
বিএনপি নেতারা জানান, দেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। এ জন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। এ আন্দোলন করতে গিয়ে তাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী নিখোঁজ-খুন, পঙ্গু হয়েছেন। মিথ্যা মামলা-হামলা ও সাজা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির আহ্বানে ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন দেশের মানুষ বর্জন করেছেন। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীনদের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে গেলে জনমনে একটা ভুল বার্তা যাবে। মানুষ মনে করবে, বিএনপি তার অবস্থান থেকে সরে গিয়ে সরকারকে মেনে নিয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অতীতে যারা নির্বাচন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন, তাদের বিরুদ্ধেও দল আগের মতোই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে শতাধিক উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পরও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোয় প্রথমদিকে অংশ নিয়েছিল। ২০২১ সালের মার্চের পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি বিএনপি। বরং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন- বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার (নারায়ণগঞ্জ) ও মনিরুল হক সাক্কু (কুমিল্লা)। ২০২২ সালে এ দুজন সিটি নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অনেক নেতা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় একই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় দলটি। যাদের বেশির ভাগ নেতা নিজেদের ভুল স্বীকার করে দলে ফেরার আবেদন করেও ফিরতে পারছেন না। এমন কঠোর অবস্থানের মধ্যেও যারা বিগত তিন মাসে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন, তাদেরও প্রত্যেককে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। প্রসঙ্গত, আগামী মে মাসে চার ধাপে ৪ শতাধিক উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ২৫ মে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা এবার স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেবে না। ফলে এ নির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রতীক এবং আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকছে না।
সোনালী/ সা