ঢাকা | জুলাই ২৭, ২০২৪ - ৬:৩৫ পূর্বাহ্ন

রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের ‘কনসার্নে’ চাঁদা দাবি!

  • আপডেট: Wednesday, March 13, 2024 - 6:22 pm

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার চাঁদাবাজির সময়কার কথপোকথনের একটি অডিও রেকর্ড হাতে এসেছে।

রেকর্ডটিতে ওই দুই ছাত্রলীগ নেতাকে এক খাবারের দোকানির কাছে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করতে শোনা গেছে। এ সময় তাদের বলতে শোনা যায়, ‘বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ‘কনসার্নে’ আছে।’  চাঁদা না দিলে দোকান বন্ধের হুমকিও দেন তারা।

চাঁদা দাবি করা ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান সোহাগ এবং শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ওই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিনহাজুল ইসলাম ওরফে মিনহাজ। এদের মধ্যে সোহাগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী এবং মিনহাজ ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।

গতকাল মঙ্গলবার ইফতারির পর ক্যাম্পাসের এক খাবারের দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী দোকানি চাঁদা দাবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অডিও রেকর্ডে ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ দোকানিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘‘ভাইয়ের নাম মিনহাজ। আমার নাম সোহাগ। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই বিষয়টা প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির কনসার্নে আছে। যেহেতু দুই দিক থেকে আইছি, এখন বুঝতে হবে কনসার্নে আছে। যেহেতু ডেট নিছেন…।’’

সোহাগ আরও বলেন, ‘‘এর আগেও আমি আর সাদিক ভাই (শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) একদিন এসেছিলাম। আপনি বললেন যে, সমস্যা নাই মিনহাজ ভাইয়ের সাথে আপনার কথা হয়েছে। আপনি যেহেতু কুলাইতে পারবেন না, তো ডেট নিয়েছেন কেন ১২ তারিখ পর্যন্ত।’’

এরপর দোকানিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি দিতে পরবো না। আমার যেখান থেকে টাকা পাওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে পাইনি। এখন সেই টাকাটা পেলে দিতে পারতাম।’

পরে মিনহাজ দোকানিকে বলেন, ‘‘ভাই আপনার মনের কথাটা খুলে বলেন তো।’’

এরপর দোকানি উত্তর দেন, ‘আমি আসলেই দিতে পারছি না। দিলে দেনায় (ঋণ) পড়ে যাবো।’

তারপর মিনহাজকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনি একটা কাজ করেন, আপাতত কিছু টাকা দেন। দিয়ে দোকান চালান। এরপর আবার দিয়েন। এটাই করেন। আপনার ওপর চাপ দিলাম না। আস্তে ধীরে দেন। আপনাকে আর কেউ ডিস্টার্ব করবে না। কারো সাহস নাই। আপনি যদি মনে করেন, এই সাংবাদিক-মামবাদিকদের বলবেন, এটা আপনার ভুল সিদ্ধান্ত।’’

সঙ্গে সোহাগ যোগ করেন, ‘‘যেকোনো জায়গা থেকে যা সাপোর্ট লাগে আমরা দেবো। আমাদের একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। আমরা ভাই-ব্রাদার হয়ে যাবো। আপনি আমাদের দেখবেন, আমরা আপনাকে দেখবো। এটাই স্বাভাবিক। আপনি আজকে কিছু দেন।’’

এরপর মিনহাজকে বলতে শোনা যায়, ‘‘অল্প কিছু হলেও দেন। ভাইরে (সভাপতি) বলবো, ভাই (দোকানি) সময় নিয়েছে। আজকে কিছু দিচ্ছে। আগামীতেও দিবে। ভাইয়ের ওপর চাপ দিয়েন না। তাহলে সব ঠিক থাকলো। এখানে শুধু আমরা দুজন না, একদম ওপর পর্যন্ত আছে।’’

এ সময় অডিওতে দোকানিকে ভয় দেখিয়ে মিনহাজকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি চাইলে ছেলেপেলে নিয়ে এসে ব্যবসা নষ্ট করে দিতে পারতাম। এই জায়গায় আপনার ক্ষেত্রে ভালোবাসা বলতে পারেন।’

মিনহাজের কথার সঙ্গে যোগ করে সোহাগ দোকানিকে বলেন, ‘আপনার সাথে আমার খারাপ সম্পর্ক হবে, এর বাইরে কিন্তু কিছুই না। দিন শেষে ক্ষতি হবে আপনারই। এই যে চাঁদাবাজির নিউজ-টিউজ হলো, আপনি দেখলেন। কি হইলো? আমারও কিছুই হবে না।’

এরপর দোকানিকে ওই অডিও রেকর্ডে বলতে শোনা যায়, ‘আমি সিওর দিতে পারছি না। যদি দিতে না পারি তখন আবার কালার হয়ে যাবো।’

দোকানির এ কথা শুনে মিনহাজ বলেন, ‘এটা কোনো কথা। এক হাত কোনো বিষয় (পাঁচ হাজার)? এইটুকু সাপোর্ট না দিতে পারলে.. কেমনে কি! এদিক-সেদিক থেকে টান দিলেই তো হয়ে যায়।’

পরে দোকানি টাকা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে না পারলে সোহাগ বলেন, ‘আপনি তো চেষ্টাই করলেন না। চেষ্টা করেন। আপনি বলেন যে, আধাঘন্টা পরে আসেন আমি যতটুকু পারি দিচ্ছি।’

দোকানি তাদেরকে বলেন, ‘‘আমার কি লাখ টাকার ব্যবসা ভাই? পাঁচ টাকার ব্যবসা করতে এসে দশ হাজার টাকা দেওয়া লাগবে। আমি দোকানই বন্ধ করে দেবো। ডাইনিংয়ে কাজ করি, ওই কাজই করবো।’’

এরপর সোহাগ দোকানিকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘কাল যদি দোকান বন্ধ না করেন তাহলে কী হবে?’’

চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান সোহাগ বলেন, ‘রোযা রমজানের মাসে আমি কেন চাঁদা চাইতে যাবো। সন্ধ্যায় তো ইফতারির সময়। গতকাল সন্ধ্যায় আমি ইবলিশ মাঠে ইফতারি করছিলাম। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’

আরেক ছাত্রলীগ নেতা ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজুল ইসলামও অভিযোগ অস্বীকার করে  বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কাজের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই। আমার নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ রটানো হচ্ছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে কথা বলতে হবে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জায়গা আছে।’ একই সুরে কথা বলেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সোনালী/জেআর