ঢাকা | মে ১২, ২০২৪ - ১২:০০ পূর্বাহ্ন

রাবিতে ভর্তিচ্ছুদের ‘সহায়তার’ কথা বলে দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

  • আপডেট: Wednesday, March 6, 2024 - 6:49 pm

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে বসা বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। দোকানীদের অভিযোগ, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সহায়তার নামে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা এসে চাঁদা আদায় করেছেন। তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, এ ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নয়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান লাবন, শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম সাদিক, নবাব আবদুল লতিফ হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তাশফিক আল তাওহীদ এবং মাদার বখ্স হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তামিম। এদের মধ্যে লাবন এবং তৌহিদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী এবং সাদিক ও তামিম শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদকের অনুসারী।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট থেকে শুরু করে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবন, মমতাজউদ্দিন একাডেমিক ভবন, ইবলিশ চত্বর, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন এবং শহীদ মিনারের সামনে জুস থেকে শুরু করে ফুচকা, আখের রস, জুস, চটপটির দোকান বসেছে।

এসব দোকানীরা জানান, ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা মোটরসাইকেলে এসে কমপক্ষে ১০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত টাকা আদায় করেছেন। দোকানীদের দাবি, ক্যাম্পাসের দোকানগুলো থেকে তারা টাকা আদায় তুলেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবহনে মার্কেটের এক জুস দোকানদার বলেন, ছাত্রলীগের কয়েকজন এসে ১০০ টাকা নিয়ে গেছে। ভর্তি পরীক্ষায় যেমন বিক্রি হওয়ার কথা আমার তেমন বিক্রিই হয়নি বিক্রি ভালো হলে টাকা দেয়াতে কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু বিক্রি ভালো নেই তবুও তাদেরকে টাকা দিতে হয়েছে। সব দোকান থেকে টাকা নিয়ে কথা শুনেছি।

এক ফুচকা বিক্রেতা বলেন, ছাত্রলীগের কয়েকজন এসে টাকা দাবি করে। তাদের সবাই আমার পরিচিত। লাবন ভাই, সাদিক ভাই, তৌহিদ, তামিম এরা এসেছিল গতকাল। আমার থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছে। গতকাল এসেছে আজকেও মনে হয় আসবে। ব্যবসা করতে হলে এদের টাকা দিতে হবে। খুব চাপ।

বুদ্ধিজীবী চত্বরে এক আখের রস বিক্রেতা বলেন, গতকাল বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে কয়েকজন এসে বলে আমরা সংগঠন থেকে আসছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছুদের থাকার ব্যবস্থা করছি, তাদের পানি দিচ্ছি তাদের জন্য সংগঠন থেকে আসছে কিছু টাকা চেয়েছে। আমি ১০০ টাকা দিয়েছি। তাদের সঙ্গে ঝামেলা হবে তাই আমি কোনো কিছু বলিনি।

অভিযোগের বিষয়ে মাদার বখ্স হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তামিম খান বলেন, গতকাল সারাদিন আমি জয় বাংলা বাইক সার্ভিস নিয়ে ব্যস্ত। আজকেও সকাল থেকে কাজ করছি। কোন দোকানদার অভিযোগ করেছে নাম বলেন। আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না।

অভিযোগের বিষয়ে সাদিক বলেন, এইরকম কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত না। আমার বিরুদ্ধে যদি এমন কোনো অভিযোগ থাকে তবে প্রমাণ করেন। বরং আমি আর লাবন দোকানে দোকানে গিয়ে বলে এসেছি, আমার নামে কেউ চাঁদাবাজি করতে আসলে যেন আমাকে কল দেয়।

অভিযুক্ত লাবন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি সারাদিন সভাপতি সেক্রেটারির সঙ্গেই থাকি। এর আগেও আমার নাম করে চাঁদাবাজি হয়েছে। তাই আমি কয়েকজনকে দোকানীকে বলেছি যারা আমার নাম করে চাঁদা নিতে আসে তাদের আঁটকে আমাকে ফোন দিতে।’

অভিযুক্ত তৌহিদ বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ মিথ্যা অভিযোগ। আমি গতকাল সারাদিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলাম, আমি জীবনেও চাঁদাবাজি করিই নাই। কেয়ামতের দিন হলেও প্রমাণ হবে আমি এক পয়সাও কোথাও থেকে চাঁদা নিইনি। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে তাদের কাছে আমি যেতে চাই। আমাকে দেখলে তো চিনতে পারবে।’

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিবকে একাধিক মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘ছাত্রলীগের কেউ চাঁদা নিচ্ছে না। বরং ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছে ছাত্রলীগ।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এছাড়া আমাদের দোকান মনিটরিং টিমও এ বিষয়ে কোনো রিপোর্ট করেনি।

সোনালী/জেআর