ঢাকা | জুন ১৭, ২০২৫ - ১০:৩০ অপরাহ্ন

শিরোনাম

গণরুমে ছাত্রকে বিবস্ত্র করে র‍্যাগিং, প্রশাসনের তদন্ত কমিটি

  • আপডেট: Tuesday, February 13, 2024 - 7:00 pm

অনলাইন ডেস্ক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের গণরুমে এক ছাত্রকে বিবস্ত্র করে রাতভর র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটির পর এবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা যায়।

কমিটিতে শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মাকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর মিঠুন বৈরাগীকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। তিন সদস্যের কমিটির অপর সদস্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মো. আনিচুর রহমান। কমিটির সদস্যদের ঘটনাটি যাচাই বাছাই করে যথা শীঘ্রই রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

এরআগে, দুপুরে এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে হল প্রশাসন। হলের আবাসিক শিক্ষক ড. আলতাফ হোসেনকে আহ্বায়ক ও হলের সহকারী রেজিস্টার জিল্লুর রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অন্যরা হলেন আবাসিক শিক্ষক আব্দুল হালিম ও ড. হেলাল উদ্দিন।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে রাতভর র‌্যাগিং, নগ্ন করে রড দিয়ে মারধর, পর্নোগ্রাফি দেখানো ও টেবিলের ওপর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে লালন শাহ হলের গণরুমে (১৩৬ নম্বর কক্ষ) রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

পরে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি ঘরোয়াভাবে সমাধান করায় এবং ‘বিশেষ চাপে’ প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। শুধু সেই দিনই নয়। একই কক্ষে প্রায়শই র‌্যাগিং হয় বলে অভিযোগ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের।

ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুদাচ্ছির খান কাফি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগরসহ অন্তত পাঁচজন। তারা উভয়ই ছাত্রলীগ কর্মী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে কিছু সিনিয়র পরিচয় পর্বের নামে ভুক্তভোগীকে ডাকেন। পরিচয়ের একপর্যায়ে শুরু হয় র‌্যাগিং। এ সময় ভুক্তভোগীর বাবা-মা তুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন সিনিয়ররা। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করা হয়।

পরে ওই শিক্ষার্থী এসব করতে অস্বীকৃতি জানালে লোহার রড দিয়ে পেটাতে থাকেন অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে সিনিয়ররা ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক উলঙ্গ করে টেবিলের ওপর দাঁড় করিয়ে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখেন। এছাড়াও উলঙ্গ অবস্থায় সিনিয়ররা তাকে পর্নোগ্রাফি দেখতে বাধ্য করেন।

এ সময় তাকে ‘নাকে খত’ (মাটিতে নাক ঘষে নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করা) দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে অভিযুক্তরা। এ সময় তাকে ভয় দেখিয়ে ৩/৪ বার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। নির্যাতনের সময় অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীকে শাসাতে থাকেন। তারা বলেন, ‘তোরা আমাদের চিনিস? আমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানিস?’ এছাড়াও ঘটনা বাইরে না জানাতে ভুক্তভোগীকে হুমকি দেন।

এদিকে ঘটনার পরদিন শাখা ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান হাফিজ ও নাসিম আহমেদ মাসুম সমাধান করে দেন। এ সময় অভিযুক্তদের চড় থাপ্পড় মারেন হাফিজ। এছাড়াও তার নির্দেশে ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চান অভিযুক্তরা।

এছাড়া রাতে লালন শাহ হলে আবারও অভিযুক্তদের নিয়ে বসেন শাখা ছাত্রলীগ কর্মী শাহিন আলম, মাসুম ও লিখন। এ সময় অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর মধ্যে সমঝোতা করে দেন। ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সিনিয়র ও জুনিয়রের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল বলে জানান তিনি।

সোনালী/জেআর

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS