ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ১২:৩২ অপরাহ্ন

রূপম দিবসে ছাত্রমৈত্রীর শপথ: ‘রক্ত বৃথা যাবে না’

  • আপডেট: Tuesday, February 13, 2024 - 9:00 pm

স্টাফ রিপোর্টার: সাম্প্রদায়িক ক্যাডারদের হাতে নিহত ছাত্রমৈত্রীর নেতা শহিদ দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমের রক্ত বৃথা যাবে না মন্তব্য করে ছাত্রমৈত্রীর রাজশাহীর নেতারা বলেছেন, রূপমের রক্ত কোনো অবস্থায় বৃথা যাবে না। রূপম যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন; তা যে কোন মূল্যে বাস্তবায়ন করা হবে। তার দেখানো লড়াইয়ে আমরা জয়ী হবোই।

আজ মঙ্গলবার সকালে শহিদ দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে তারা এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১০টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রুপমের স্মৃতির প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

প্রথমে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রমৈত্রীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ। এরপর ছাত্রমৈত্রীর জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা শহিদ রুপমের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।

এ সময় ছাত্রমৈত্রীর সাবেক নেতা ও মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু বলেন, রাজশাহীসহ সারা দেশে যতবার সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে; ততবার ছাত্রমৈত্রী তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে। এ লড়াই করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক নীতি ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের দেয়া সেই মহান ত্যাগ কখনোই পরিমাপ করা যাবে না।

দেবু আরও বলেন, আমাদের সহযোদ্ধারা যারা প্রাণ হারিয়েছেন- তাদেরই মধ্যে একজন শহিদ রূপম। জীবনের শেষ পর্যন্ত সে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। অন্যায়ের কাছে কখনো সে মাথা নত করেনি। রূপম যে স্বপ্ন ও আদর্শের জন্য নিজের রক্ত দিয়েছে, সেটি আমরা বাস্তবায়ন করবোই। কোনদিনই তার রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য আলমগীর হোসেন, বোয়ালিয়া পশ্চিমের সাধারণ সম্পাদক শাহীন শেখ, ছাত্রমৈত্রীর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বিজয় সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আলী অম্বর অপু, জেলা কমিটির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান পলাশ, জেলার সাবেক আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা আকছারুজ্জামান সুমন, সাবেক ছাত্রনেতা বিমান চক্রবর্তী, মহানগর ছাত্রমৈত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক দুর্জয় দত্ত, আনোয়ার হোসেন, নিউ গভ; ডিগ্রি কলেজের সভাপতি ইসহাক আলী, সাধারণ সম্পাদক জানে আলম প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, নব্বইয়ের দশকের ছাত্রনেতাদের বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, নৃশংসতা আর হত্যার মধ্য দিয়ে ১৯৯২ সালের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ত্রাস হিসেবে পরিচিতি পায়।

প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মেধাবী নেতৃত্বকে একের পর এক হত্যার মাধ্যমে দুর্বল করে ফেলা হয়। কিন্ত এসব ব্যাপারে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে। এই সুযোগে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে শিবির।

১৩ ফেব্রুয়ারি ছ্ত্রামৈত্রী নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপম ‘সকাল-সন্ধ্যা’ নামের একটি বাসে ঢাকা যাচ্ছিলেন। মহানগরীর চৌদ্দপাই এলাকায় ছাত্রশিবির ক্যাডাররা বাসের পথরোধ করে।

এক পর্যায়ে বাসভর্তি যাত্রীর সামনে সশস্ত্র শিবির ক্যাডাররা রূপমকে নিচে নামিয়ে আনে। এরপর প্রকাশ্যেই তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা রূপমকে এ সময় উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্র দিয়েও আঘাত করা হয়।

এসব কাজ পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন করে খুব ধীরে-সুস্থেই চলে যায় হামলাকারীরা। স্থানীয়রা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঝরে যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো একটা মেধাবী প্রাণ। এরপর থেকেই ছাত্রমৈত্রীর নেতারা দিনটিকে শহিদ রূপম দিবস হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছেন।

সোনালী/জগদীশ রবিদাস