পাকিস্তানে ইসলামপন্থী দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে
অনলাইন ডেস্ক: পাকিস্তানে এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা দিক স্পষ্ট হলো। দেশটিতে ধর্মপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। আজ শনিবার সকালে পাকিস্তানের ডন-এর ওয়েবসাইট মতে, ২৬৬টির মধ্যে ২৫০টি আসনের ফলাফল পাওয়া গেছে।
ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী ৯১টি আসন পেয়ে এগিয়ে আছে। অন্যদিকে, দলটির নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) পেয়েছে ৭১টি আসন। সেখানে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামি (এফ) মাত্র দুটি আসন পেয়েছে।
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম প্রধান মাওলানা ফজলুর রেহমান পিটিআই সমর্থিত প্রার্থির কাছে হেরে গেছেন। ইসলামপন্থী আরেক দল জামায়াতে ইসলামী প্রধান সিরাজুল হকও হেরেছেন পিটিআই সমর্থিত আরেক প্রার্থীর কাছে। পুরো নির্বাচনে এখন পর্যন্ত জমিয়তের দুটি আসন ছাড়া বাকি ইসলামপন্থীরা কোন আসন পাননি। ২০১৮ সালে যেখানে মাত্র ১২টি ধর্মপন্থী দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, সে তুলনায় এবার ২৩টি দল অংশ নিয়েছে। এবারের নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যদিয়ে তাদের গ্রহণযোগ্যতা অবনতির চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।
সমালোচকরা এর পেছেন একাধিক কারণ দেখছেন। বিশেষত তরুণ ভোটার সংখ্যা অনেক বেড়েছে, যা নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা রেখেছে। দেশটিতে ৫ কোটি ৬৮ লাখ তরুণ ভোটার রয়েছে, যারা মোট ১৩ কোটি ভোটারের ৪৫ শতাংশ। মনে করা হচ্ছে, ইসলামপন্থী দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা অবনতির ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা থাকতে পারে। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে দেশটিতে ধীরে ধীরে ইসলামপন্থী দলগুলোর ভোটার কমেছে।
দীর্ঘ দিন ধরে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বিশেষত ইসলামপন্থী দলগুলোর ব্যাপক সরব থাকার কারণে বহুবার দেশটিতে রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা দিয়েছে। ইসলামপন্থী দাবিদার রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক পাকিস্তানে গত বছর নিহত হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষ। এটি ইসলামপন্থী দলগুলোর ভোট না পাবার বড় একটি কারণ হতে পারে।
একের পর এক রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দেশটিতে ইসলামপন্থী দলগুলোর ওপর মানুষের আস্থা দিন দিন কমেছে। এবারের নির্বাচনেও তার ফলাফল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। লক্ষ্যণীয় যে, ভারতের জনগণ যেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দিকে ঝুঁকছে, সেখানে পাকিস্তানের জনগণ এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের অনেকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানের অধিকাংশ এলাকায় দলটি ৮ থেকে ১০টি আসনলাভের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেছিলেন, যদিও বাস্তবে তা ঘটেনি। ২০১৩ সালে নির্বাচনে ইসলামপন্থী ছয়টি দল অংশ নেয়। ওই নির্বাচনে জামাত–ই–ইসলামী পাকিস্তান (জেআইপি) তিনটি ও জামায়াতে উলামায়ে ইসলাম (ফজল, জেইউআইএফ) আলাদাভাবে নির্বাচন করে ১০টি আসন পেয়েছিল।
সবকটি আসন ছিল খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশের পশতুনের বেশির ভাগ এলাকায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইসলামপন্থী এসব দল ৫ কোটি ৪৩ লাখ ভোটারের মধ্যে মাত্র ৫২ লাখ ভোট পেয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান পাঞ্জাবে অন্তত ১৫টি জাতীয় পরিষদের আসনে পাকিস্তান মুসলিম লীগকে (এন) হারিয়েছিল।
সংখ্যাগরিষ্টতা না পাওয়ায় এবারের নির্বাচনের পরও কোনো একক দল সরকার গঠন করতে পারছে না। সেক্ষেত্রে জোট সরকারের কাছেও ইসলামপন্থী দলগুলো উপেক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু এরই মধ্যে দেশবাসী ব্যালটের মধ্য দিয়ে সেই বার্তা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে জনগণের সেই সিদ্ধান্তকে কাজে লাগাতে পারেন।
ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
সোনালী/জেআর