ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ৪:৫৪ অপরাহ্ন

ইসিতে বাদশার দেয়া অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের দাবি ওয়ার্কার্স পার্টির

  • আপডেট: Sunday, January 28, 2024 - 9:00 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী-২ আসনে নির্বাচনকে বিঘ্নিতসহ, নির্বাচনী আচরণবিধি ও আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) ফজলে হোসেন বাদশার দেয়া অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি তুলেছে রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টি।

রোববার সন্ধ্যায় মহানগরের সম্পাদকমণ্ডলির সভা থেকে এই দাবি জানান ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা।

শহরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় ওয়ার্কার্স পার্টির দলীয় কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেছেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু।

সভা শেষে দলের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু জানান, গত ৯ জানুয়ারি রাজশাহী-২ আসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা তার আইনজীবীর মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে যে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন; নগর ওয়ার্কার্স পার্টি তার সুষ্ঠু তদন্ত চায়। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং নিরপেক্ষ। সুতরাং আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশের একজন জাতীয় রাজনীতিবিদ হিসেবে ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচনকে ঘিরে যে অভিযোগ করেছেন; তা অনতিবিলম্বে আমলে নিয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয়া উচিত। এ অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হলে ফজলে হোসেন বাদশার নৌকার বিরুদ্ধে যে ‘সুনির্দিষ্ট প্রভাবিত পরিবেশ’ তৈরী করা হয়েছিল; তা প্রকাশ পাবে।

তৃণমূল পর্যায়ে দলকে আরও সুসংগঠিত করার নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে দেবু বলেন, নির্বাচন পরবর্তী দলের নেতাকর্মীরা যাতে হতাশ না হয়ে পড়ে, সে লক্ষ্যে পার্টির পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের স্বার্থের পক্ষে বিভিন্ন সংগ্রাম গড়ে তোলার বিষয়টিও কর্মসূচির মধ্যে থাকবে। এ ছাড়াও তরুণ-যুবকদের সমর্থন আদায় ও বামপন্থার প্রতি তাদের আকৃষ্ট করতেও মাঠে কাজ করবেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ। সর্বোপরি- আমরা জনগণের সঙ্গে অতিতে যেমন ছিলাম, আগামীতেও সে ধারা অব্যাহত থাকবে। রাজশাহী-২ আসনের টানা তিনবারের সাবেক সফল সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার নেতৃত্বে শহরের ৩০টি ওয়ার্ডে দলের কর্মিসভাসহ দলকে আরও শক্তিশালী করতে নগর ওয়ার্কার্স পার্টি সবসময় কাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর দেয়া অভিযোগ পত্রে রাজশাহী-২ আসনে নির্বাচনকে ঘিরে যেসকল অনিয়ম, চাপ প্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের আচরণবিধি ও আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ১৪ দলের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা।

অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, প্রচারণার শুরু থেকে ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশন’ নামক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানটি এর কর্মচারীদের সুনির্দিষ্টভাবে ‘কাঁচি’ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী তৎপরতায় যুক্ত করে। শুরু থেকেই এ প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায় তৈরি করে। ভোটের দিন সকালে সংবাদমাধ্যমের সামনে আমি সিটি করপোরেশনের এই ভূমিকা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করি। এমনকি সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘কাঁচি’ প্রতীকে ভোট না দিলে সরকারি বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দেন।

সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে এ আসনে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত সব ওয়ার্ড কাউন্সিলর টিসিবির সরকারি সুবিধাভোগীদের কার্ড আটকে রেখে ‘কাঁচি’ প্রতীকে ভোট না দিলে সেই কার্ড ও সুবিধা ফেরত দেয়া হবে না বলে হতদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে হুমকি দেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আমি অভিযোগও করি। নির্বাচনের আগের রাতে ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উল আজিমকে এসব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী আটক করেও নিয়ে যায়। যদিও আর সব ওয়ার্ডে সেই একই প্রক্রিয়া চলমান থাকে।

নির্বাচনের দিন উল্লেখিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিজস্ব বাহিনী প্রতিটি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রে ‘নৌকা’ প্রতীকের ভোটারদের চিহ্নিত করে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহিত করে। এ ক্রমাগত হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে ভোটের দিন ভোটাররা নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেননি। যার প্রভাব পড়েছে ভোট দেয়ার হারে। রাজশাহী-২ আসনে এ কারণেই নিম্নতম ভোট গ্রহণের হার ২৬ শতাংশের কাছাকাছি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আওতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্প সিডিসি’র কর্মীদের ‘কাঁচি’ প্রতীকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রতিটি ওয়ার্ডে সিডিসি টাউন ফেডারেশন, সিএইচডিএফ, ক্লাস্টার ও সিডিসি কর্মীদের সরকারি সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনমাফিক সুবিধা বন্ধের হুমকি দিয়ে ‘কাঁচি’ প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে ভোট দিতেও বাধ্য করা হয়। অর্থাৎ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে পুরোপুরি ‘কাঁচি’ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে ব্যবহার করা হয়েছে।

উত্থাপিত অভিযোগসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আবেদন জানিয়ে প্রার্থী আরও দাবি করেন, ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অব্যাহত রাখেন। যা শুধু আচরণবিধি লঙ্ঘনই নয়, গুরুতর অনিয়ম ও রাষ্ট্রীয় আইনেরও লঙ্ঘন।

বেঠকে উপস্থিত ছিলেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য আইনজীবী আবু সাঈদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, সিরাজুর রহমান খান, আব্দুল মতিন, নাজমুল করিম অপু, মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।

সোনালী/জগদীশ রবিদাস