আবারও জয়ের পথে বাদশার নৌকা
স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এসে রাজশাহী-২ আসনে নৌকার পালে লাগা হাওয়া স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ প্রধানের দেওয়া মনোনয়নের বিরোধিতা করে এই আসনে আওয়ামী লীগের একটি অংশ নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নামে। তবে প্রচারণার শেষ দিকে এসে বদলে যায় সেই চিত্র।
মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের একটি বড় অংশ মাঠে নামে নৌকার প্রার্থী ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে। একদিকে নৌকা প্রতীক, অন্যদিকে ব্যক্তি ফজলে হোসেন বাদশাকে নিয়ে নগরীর ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণার কারণে এই আসনে বেড়েছে নৌকার প্রতি সমর্থন।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ফজলে হোসেন বাদশা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে জনপ্রিয়। বিশেষ করে প্রচারবিমুখ এই নেতার ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে নানা সময়ের আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়টি ভোটারদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মী ও প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৩ সালের পর থেকে প্রায় ৩৫ বছর রাজশাহী-২ আসনে সংসদ নির্বাচনে কোনোদিন নৌকা জয়ের মুখ দেখতে পায়নি। পুরো সময়টাতেই এখানে জয়জয়কার ছিল বিএনপির। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৫ বছর পর ফজলে হোসেন বাদশার হাত ধরে প্রথম এই আসনে নৌকা জয় পায়। এরপর থেকে টানা তিনবার তিনি নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
সামরিক শাসনের অবসানের পর ১৯৯১ সালে ফজলে হোসেন বাদশা ৩৪ হাজার ২৬৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। ২০০২ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নামা রাকসুর সাবেক ভিপি বাদশার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য ঐক্য তৈরি হয়। ওই নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে বাদশা হারলেও অভিযোগ ওঠে, বিএনপি কারচুপির মাধ্যমে ফলাফল বদলে দিয়েছে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ দলীয় জোট গঠিত হলে ২০০৮ সালে ৩৫ বছর পর প্রথমবারের মতো বাদশার হাত ধরেই এই আসনে নৌকা বিজয়ী হয়।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘যে মানুষটির হাত ধরে এই আসনে ৩৫ বছর পর নৌকা জয়ের মুখ দেখেছে, তাকে ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসরদের অপপ্রচার থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেইসব অপপ্রচার দিয়ে নৌকার বিজয় ঠেকানো যাবে না।’
শাহমখদুম থানা এলাকার সাধারণ ভোটার বিল্লাল হোসেন জানান, তার এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজন এসে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছে, যাতে নৌকার পক্ষে ভোট না যায়। বিল্লাল বলেন, ‘জন্মের পর থেকে নৌকায় ভোট দিয়ে এসেছি। এখন কী জন্য অন্য মার্কায় ভোট দিতে যাব?’
শিরইল কলোনি এলাকার ষাটোর্ধ্ব আনোয়ারা রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘ভাল্লাগছে না যে, ক্যারে আমার আব্বা ছিলো নৌকা। নৌকা নিয়ে দাঁড়াবে। তা, সেই আব্বার নৌকা গেলো কোথায়? কী কয় এগুলা? অন্য মার্কায় ভোট দেবো, নৌকা কই? এহানে যারা সব নেতা ফেতা আছে তারা সব কচ্ছে যে দাও, এডাও শেখ হাসিনার। আমি কই যে শেখ হাসিনার কেন হবে এডা? আমার আব্বা যেডায় ছিলো, সেই নৌকায় আমি দেখবো।’
নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ বছরে তার মেয়াদে এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। একাধিক প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ হয়েছে। এমপিওভুক্ত হয়েছে সব প্রতিষ্ঠান। ঢাকা-রাজশাহী সরাসরি ট্রেন চালুর বিষয়টি তিনি সংসদে তুলে ধরে সফল হয়েছেন। এর বাইরে বন্ধ বিমানবন্দর চালুর ক্ষেত্রেও মূল ভূমিকা ছিল তার। রাজশাহী মহানগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়নে সবচেয়ে বড় দুটি রাস্তার কাজও তিনিই বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে পরীক্ষিত এই নেতার ব্যাপারে সাধারণ ভোটারদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
রাজশাহীর চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মী আহসান কবির লিটন বলেন, ‘ফজলে হোসেন বাদশার সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তিনি দুর্নীতি করেন না। দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেন না। এর বাইরে এখানে প্রগতিশীল রাজনৈতিক চর্চা ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য তার অবদান ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি আমিনুর রহমান খান রুবেলের দাবি, রাজশাহীতে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট মানুষকে ভুল বোঝাতে চেয়েছিল। কারণ ফজলে হোসেন বাদশা সংসদ সদস্য থাকলে দুর্নীতিতে সমস্যা হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তার করণীয় নির্ধারণ করে ফেলেছে যে তারা নৌকায় ভোট দেবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমি নির্বাচনী প্রচারণায় সব থেকে বেশি পেয়েছি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা এবং আমি বিশ্বাস করি এর দৃশ্যমান ফলাফল পাব, এ ছাড়া সত্যিকারের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কখনোই নৌকা প্রতীকের বাইরে যেতে পারেন না।‘ রাজশাহীতে যারা প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা করেন এবং ভালোবাসেন, তারা সকলেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার প্রতি আস্থা রেখেছেন।
সোনালী/জেআর