প্রথমবারের মতো পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা গেল রাজশাহীর ট্রেন
অনলাইন ডেস্ক: স্বপ্নের পদ্মাসেতু যেন উদ্বোধনের পরও স্বপ্নের মতই ছিল, রাজশাহীসহ গোটা উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন ধরা দিয়েছে হাতের মুঠোয়।
শুক্রবার (০১ ডিসেম্বর) প্রথমবারের প্রমত্ত পদ্মা পাড়ি দিল পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেন ‘মধুমতী এক্সপ্রেস’। এর মধ্যে দিয়ে পদ্মাসেতু দিয়ে রাজশাহী-ঢাকা রুটের কোনো আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রা শুরু করল।
এটি পদ্মা সেতু হয়ে চলাচলকারী তৃতীয় কোনো আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন।
এর আগে মধুমতী এক্সপ্রেস নামের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ভ্যাকুয়াম কোচের এই ট্রেনটি রাজশাহী-ভাঙ্গা রুটে চলাচল করত।
জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি (আপ) ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এটি প্রথমবারের মত পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে পৌঁছায় দুপুর ২টায়।
আন্তঃনগর এই এক্সপ্রেস ট্রেনটি (ডাউন) ঢাকা থেকে বেলা ৩টায় রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি আজ রাত ১০টা ৪০ মিনিটে রাজশাহী পৌঁছায়। সপ্তাহের ছয়দিন এই টাইমটেবিলেই চলবে আন্তঃনগর ট্রেন মধুমতী এক্সপ্রেস। ট্রেনটির সাপ্তাহিক ছুটির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। এদিন ট্রেনটি বন্ধ থাকবে।
এদিকে প্রথমবারের মত পদ্মাসেতু হয়ে মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলে দারুণভাবে উচ্ছ্বসিত রাজশাহী মানুষ। এই প্রথম ট্রেনের যাত্রী রাজশাহী শিরোইল এলাকা জাহিদুর রহমান জানান, তিনি এতটাই আবেগপ্রবণ ছিলেন যে, প্রথম দিনই মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনে পদ্মাসেতু পাড়ি দিয়েছেন। এই ভ্রমণের কোনো উদ্দেশ্য নেই।
তাই ফিরতি ট্রেনেই আবার রাজশাহী ফিরছেন। আর এটি এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। এই আনন্দ ভ্রমণ তার কাছে স্মৃতিময় হয়ে থাকবে। তবে দীর্ঘ যাত্রায় আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ভ্যাকুয়াম কোচের বদলে আধুনিক চাইনিজ রেকের কোচ বরাদ্দের জন্য সবার পক্ষ থেকে দাবি জানান।
ট্রেনের অপর যাত্রী সাংবাদিক মামুন রেজা জানান, রাজশাহী থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে আজ ঢাকা যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল অন্যরকম ভালো লাগার। তবে এই আনন্দ ভ্রমণে এসিসহ নতুন কোচ দিলে দীর্ঘ পথের যাত্রাটি আরও আনন্দ ও স্বস্তিদায়ক হত।
এরপরও আজ প্রথম পদ্মা সেতু স্পর্শ করল রাজশাহীর কোনো ট্রেন। তাই অসম্ভব ভালো লাগছে। আর মধুমতী ট্রেনের এই নব যাত্রার মাধ্যমে রাজশাহী থেকে পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, ফরিদপুরের মানুষের জন্য ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ আর সহজ হল বলেও জানান।
প্রথম দিনের যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন, উদ্বোধনী দিনে নয়টি কোচ নিয়ে আন্তঃনগর ট্রেন মধুমতী এক্সপ্রেস চলাচল শুরু করেছে। এতে ৫৫৮টি আসন রয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির কোচে আসন সংখ্যা ২৪টি। শোভন চেয়ার ৪৪ এবং শোভন শ্রেণিতে ৪৯০টি। আজ ছিল প্রথম দিন। যাত্রীরা দারুণভাবে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। তাই যাত্রী বহন করেই ট্রেনটি ছেড়ে গেছে।
রাজশাহী-ঢাকা রুটে পদ্মাসেতু হয়ে চলাচল শুরু হওয়া মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে আব্দুল করিম বলেন, ঢাকা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত শোভন কোচের (বেঞ্চ) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯৫ টাকা। শোভন চেয়ারের জন্য ভাড়া ধরা হয়েছে- ৪৭০ টাকা। আর প্রথম শ্রেণির আসনের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭১৯ টাকা।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহী থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগবে ৭ ঘণ্টা ২০ মিনিট। দীর্ঘ এই রেলভ্রমণ যাত্রীদের জন্য আরও নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করতে বর্তমান যাত্রীবাহী পুরোনো ভ্যাকুয়াম কোচ বদলে জানুয়ারিতে নতুন কোচ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দেখা যাক চেষ্টা কবে সফল হয়। সেই পর্যন্ত পুরোনো কোচ নিয়েই মধুমতী চলাচল করবে।
এর আগে মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী-ভাঙ্গা রুটে চলাচল করতো। আজ থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এই ট্রেনটি উভয় পথে (আপ-ডাউন) পাবনার ঈশ্বরদী জংশন, পাকশী, ভেড়ামারা, মিরপুর, পোড়াদহ জংশন, কুষ্টিয়া কোর্ট, কুমারখালী, খোকসা, পাংশা, কালুখালী, রাজবাড়ী, পাঁচুরিয়া জংশন, আমিরাবাদ, ফরিদপুর, তালমা, পুখুরিয়া শিবচর, পদ্মা ও মাওয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে। আর অদূর ভবিষ্যতে যাত্রী ওঠানামার সুবিধা চালু হলে ভাঙ্গা জংশন স্টেশনেও থামবে মধুমতী।
সোনালী/জেআর