ঢাকা | অক্টোবর ১৮, ২০২৪ - ৬:০২ পূর্বাহ্ন

দুর্গাপুরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ভালো ফলনে খুশি চাষিরা

  • আপডেট: Friday, December 1, 2023 - 9:22 pm

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: রাজশাহীর দুর্গাপুরে ২০০জন চাষিকে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের প্রণোদনা দিয়েছিল কৃষি বিভাগ। চাষিদের খেত থেকে সেই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ এখন উঠতে শুরু করেছে। চাষির পেঁয়াজের ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি দুই’শ মণের ওপরে। বর্তমান বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকা মণ দরে।

মূলত বছরের গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় প্রতিবছরই। অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যায় এই দাম। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এবং পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে দুর্গাপুর উপজেলায় মৌসুম ছাড়াও অমৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী করতে প্রণোদনা দিয়ে ছিল সরকার। বর্তমান বাজারে দাম ভাল পাওয়ায় প্রায় পেঁয়াজ চাষিই এখন লাখপতি।

চাষিরা জানায়, কয়েক বছর থেকে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে এ উপজেলায় উন্নত জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজচাষ হচ্ছে। এ বছর উপজেলায় বেড়েছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ। চাষের শুরুতে সরকারি প্রণোদনা পেয়ে ছিল তারা। ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরাও। এ বছর লাভবান হওয়ায় আগামীতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজচাষ দ্বিগুণ হবে বলে জানান চাষিরা।

দুর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলায় এবার ২৭ হেক্টর জমিতে ২০০ কৃষক গ্রীষ্মকালীণ পেঁয়াজ চাষ করেছেন। গত বছর ছিল ২৪ হেক্টর জমিতে। এ বছর ৪০ মেট্রিক টন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ২০০ জন চাষির প্রত্যেককে ১ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি, ২০ কেজি এমওপি, ৬ কেজি জৈবসার, ও বালাইনাশক প্রণোদনা দেয়া হয়ে ছিল।

উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি বিপ্লব সরকার জানান, এবার উচ্চ ফলনশীল এন-৫৩ জাতের ১৫ কাটা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়ে বাম্পার ফলন পেয়েছেন তিনি। বিঘায় তার ফলন হয়েছে ২০০ মণের ওপরে। ১৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে তার খরচ হয়ে ছিল ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকা দরে। ইতিমধ্যেই ১ লাখ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন তিনি।

উজালখলসী গ্রামের শাহাদত বলেন, গ্রীষ্মকালীন এন-৫৩ জাতটা এই এলাকায় নতুন। সরকারি প্রণোদনার বীজ ও সার পেয়ে এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। জমিতে একটু বেশি সময় লাগলেও ফলন হয়েছে বাম্পার। ১ বিঘা জমিতে এ পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। এখন তুলে বাজারে বিক্রি করছি। প্রতিমণ পেঁয়াজ ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ আরও বাড়াবেন বলে তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুন্তলা ঘোষ বলেন, চারটি পেঁয়াজ ওজনে এক কেজি হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ একটু দেরিতে উঠে। কিন্তু ফলন হয় ভাল। চাষিরা লাভবান হয়। এবার উপজেলায় ২০০জন চাষি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তাদের প্রত্যেক প্রণোদনার সার বীজ দেয়া হয়ে ছিল। প্রায় চাষিরই পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আগামীতে এ পেঁয়াজচাষ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।

এদিকে, বুধবার উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে সরাসরি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ খেত দেখতে এসেছিলেন অতিরিক্ত পরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (রাজশাহী অঞ্চল) কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ। খেতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ভাল ফলনে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, এ সময়ে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দেয়। এ নিয়ে কৃষি বিভাগ গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজচাষে কৃষককে আগ্রহী করতে কাজ করছে। রাজশাহী জেলায় এবার ২৬৭ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এ জন্য জেলার ২০০০ কৃষককে সরকারি ভাবে বীজ, সার ও বালাইনাশক দেয়া হয়েছে। চাষিরা এ পেঁয়াজচাষে লাভবান হওয়ায় আগামীতে এ পেঁয়াজচাষে চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

সোনালী/জেআর