ঢাকা | অক্টোবর ১৮, ২০২৪ - ৮:০২ পূর্বাহ্ন

‘হাইকমান্ডের নির্দেশে পুলিশ হত্যায় নেতৃত্ব দেন ছাত্রদলের আমান’

  • আপডেট: Tuesday, November 7, 2023 - 5:15 pm

সোনালী ডেস্ক: গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল পুলিশের ওপর হামলা করে বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ভেঙে দেয়া। কেন্দ্রীয় নেতাদের চাওয়া ছিল, প্রয়োজনে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। এরই ভিত্তিতে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজকে হত্যা করা হয়।

এ হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। কর্মকর্তাদের দাবি, তিনি বিএনপির সমাবেশে পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় হামলায় প্রধান নেতৃত্বদানকারী।

সিটিটিসি বলছে, বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশনায় আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য আমিরুল হক পারভেজকে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিন আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকে সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেন। আর হামলাকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কনস্টেবল পারভেজের নিথর দেহের ওপর বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে।

মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সমাবেশের দিন আমান তার অনুসারীদের নিয়ে নয়াপল্টনকেন্দ্রিক মঞ্চের পাশে অবস্থান নেন। মঞ্চে অবস্থিত বিএনপির এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল-পুলিশের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলার মাধ্যমে এ বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ভেঙে দেয়া। প্রয়োজনে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা, যাতে করে একটি নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হয়।

আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার দিন কাকরাইলে উপস্থিত বিএনপির কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। কাকরাইলে সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের হাইকমান্ডের নির্দেশে নয়াপল্টনে বিএনপির পার্টি অফিসের পাশে ভিক্টরি হোটেলের গলি দিয়ে আমান ছাত্রদলের একটি বড় অংশ নিয়ে পুলিশের ওপরে হামলা করার জন্য অগ্রসর হন। সমাবেশকেন্দ্রিক দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকেই তাদের জানা ছিল। তিনি তার দলবল নিয়ে পল্টন টাওয়ারের সামনে আসেন।

এরপর দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকির দিকে যায় এবং অপর অংশটি আমানের নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের আগের প্রান্তের দিকে যায়। বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পরে ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের ওপরে অতর্কিত হামলা করেন। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বক্স কালভার্টের পশ্চিম প্রান্তে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সাহায্য করতে অপর প্রান্তের পুলিশ সদস্যরা সেদিকে অগ্রসর হন। পশ্চিম দিকে অগ্রসর পুলিশ দলটির ওপরে আমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় হামলা শুরু হয়।

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ছাত্রদলের এই অংশটি আমানের নেতৃত্বে পুলিশের ওপরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদলের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। জানমাল রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন এবং সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেন। এই পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের একটি বড় অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব দিকে অবস্থিত ডিআর টাওয়ার ও আশেপাশের স্থাপনায় অবস্থান নেন।

এ অবস্থায় আমানের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা পুলিশ সদস্যদের হামলা করার জন্য ক্রমাগত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। বিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজ রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এমন সময় তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার জন্য লাঠি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকেন হামলাকারীরা।

তিনি আরও বলেন, এ সময় কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকে। পুলিশ সদস্য পারভেজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। বিক্ষোভকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পারভেজের নিথর দেহের ওপরে বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে। পরবর্তীতে কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করার পরে আমান তার অনুসারীদের নিয়ে বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিক দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

এদিকে গ্রেপ্তার আমানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর পুলিশ হত্যার ছবি অ্যাপসের মাধ্যমে হাইকমান্ডের কাছে পাঠান আমান। এমনকি ফেসবুকে এই ছবি পোস্টও করেছেন তিনি। সেখানে তার অনুসারীরা লিখেছেন, ‘এই দলের কামান, আমান উল্লাহ আমান’। গ্রেপ্তার আমানকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, রিমান্ডে এনে তাকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার সঙ্গে আরও যারা সে সময় ছিলেন, তাদের নাম-পরিচয় আমরা পেয়েছি।

তাদের গ্রেপ্তারেও আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ঘটনার দিন আক্রমণের শিকার হয়েও বড় ক্ষয়-ক্ষতি এড়ানোর জন্য পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল নিজের অস্ত্রটি ব্যবহার করেননি বলেও জানান সিটিটিসির এই কর্মকর্তা। আমিরুলকে হত্যার পর ছবি কার কাছে অ্যাপসের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমরা তদন্তের স্বার্থে সুনির্দিষ্টভাবে বলব না। পরবর্তী অপারেশনের স্বার্থে বলছি না। সে শুধু নির্দেশনার বাস্তবায়ন বা নেতৃত্ব দেননি, নিজেও হেলমেট পড়ে লাঠি হাতে হামলায় অংশ নেয়।

সিটিটিসি জানায়, বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে আমান উল্লাহ আমান পুলিশ সদস্য আমিরুল হক পারভেজকে হত্যা করে। কেন্দ্রীয় নেতাদের চাওয়া ছিল, প্রয়োজনে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা, যাতে করে একটি নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হয়। এর ভিত্তিতে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজকে হত্যা করা হয়।

সিটিটিসির কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার দিন আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকে সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেয়। আর হামলাকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কনস্টেবল পারভেজের নিথর দেহের ওপরে বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে।

সোনালী/জেআর