রাজশাহীতে ঢিলেঢালা হরতাল, শক্ত অবস্থানে আ’লীগ-ওয়ার্কার্স পার্টি
ভারী যানবাহন চলেনি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগরীতে ঢিলেঢালাভাবে চলেছে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শহরে হরতালের পক্ষে কোথাও কোন পিকেটিং বা সভা-সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালকে প্রতিরোধ করতে শহরজুড়ে শক্ত অবস্থানে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীদের। আ’লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ তিন দলের নেতাকর্মীরাই হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। আরএমপি পুলিশ জানিয়েছে, শহরে যে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহীতে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। তবে লোকাল বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও তার পরিমাণ ছিল কিছুটা কম। দোকানপাট ও অন্যান্য মার্কেটগুলোও অন্যদিনের মতো খোলা ছিল। তবুও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মহানগরীর ব্যস্ততম এলাকা সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, নিউমার্কেট, টার্মিনাল, লক্ষ্মীপুর, কোর্ট, কামারুজ্জামান চত্বর, গণকপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট থেকে শান্তি মিছিল বের করে মহানগর আওয়ামী লীগ। মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে শান্তি ও উন্নয়নের সমাবেশে মিলিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। পরিচালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহ্সানুল হক পিন্টু। বক্তব্য রাখেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, বোয়ালিয়া (পূর্ব) থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ, নগর শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক আকতার আলী, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল মোমিন, নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুম মুবিন সবুজ।
এ নিয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, বিএনপি-জামায়াতের হরতালকে প্রতিরোধ করতে শহরের ১১টি পয়েন্টে আমাদের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। রাজশাহী তথা দেশের মানুষ তাদের হরতালকে প্রত্যাখ্যান করেছে। গত শনিবার ঢাকার রাস্তায় তারা যা করেছে, এর মধ্যদিয়েই তাদের সন্ত্রাসী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে গেছে। বিএনপি আবারও যদি হরতালের ঘোষণা দেয় তবে আ’লীগের করণীয় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে পিন্টু বলেন, আমরা সজাগ আছি। তারা যে কর্মসূচিই দিক না কেন, রাজশাহীর মানুষকে নিয়ে আমরা তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত আছি।
অপরদিকে বিএনপি-জামায়াতের হরতালকে প্রত্যাখ্যান করে উন্নয়ন ও শান্তি বজায় রাখতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টি। তাদের নেতাকর্মীরাও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে হরতালবিরোধী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল রোববার নগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সিরাজুর রহমান খান। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু। বক্তব্য রাখেন জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, মহানগর সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য আব্দুল মতিন, নাজমুল করিম অপু প্রমুখ। এ নিয়ে জানতে চাইলে দেবাশিষ প্রামানিক দেবু বলেন, বিএনপি আবারও আগুণ সন্ত্রাস ও হত্যার রাজনীতি শুরু করেছে। নির্বাচন আসলে তারা বারবার জনগণকে জিম্মি করতে চায়। আমরা বুঝতে পারছি- ২০১৩ সালে তারা যা করেছে, ২৩ সালেও তারা ওইটাই করতে চায়। কিন্তু ওয়ার্কার্স পার্টি ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তা হতে দেবে না। আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে তাদের প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত আছি। আমাদের নেতাকর্মীরা সারাদিন শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের এই আগুন কর্মসূচি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করেছে।
অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজশাহী মহানগর জাসদও বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করেছে। পথসভাটি নগরীর গণকপাড়া মোড় থেকে বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবারও গণকপাড়ায় এসে শেষ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর জাসদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আমিরুল কবির বাবু। জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী বলেন, বিএনপি-জামায়াত কথায় কথায় দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। তারা গত শনিবার সমাবেশের নামে আগুন সন্ত্রাস করেছে। মানুষ পুড়িয়ে মেরে ফেলছে। আমরা রাজশাহীর মানুষ শান্তি প্রিয়। রাজশাহীতে কোন নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে বা মানুষ হত্যা করলে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।
এদিকে রাজশাহীতে হরতালের আগে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৭৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার জেলা ও মহানগর পুলিশ। এ নিয়েও শহরে বিএনপির হরতালের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আইনজীবী এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করার জন্য আমাদের মহানগর ইউনিটের অধিকাংশ নেতকার্মীরাই ঢাকায় অবস্থান করেছে। প্রতিনিয়ত আমাদের নেতাকর্মীদের পুলিশ গ্রেফতার করছে। তাই শহরে সেভাবে বিএনপির হরতালের কর্মসূচি চোখে পড়েনি। তবে হরতাল পালিত হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যখন এ ধরনের বড় কর্মসূচি গ্রহণ করে তখন আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করি। তার ধারাবাহিকতাতেই মানুষের জানমাল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শহজুড়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও আরএমপির কমিশনারসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা সার্বিক বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণসহকারে তদারকি করছেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। শহরে এখনো কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। যদি কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তবে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।