ঢাকা | মে ৩, ২০২৫ - ৩:০৮ অপরাহ্ন

শিরোনাম

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলা বন্ধে সংসদে প্রস্তাব পাস

  • আপডেট: Monday, October 30, 2023 - 9:45 pm

অনলাইন ডেস্ক: ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। এটি হত্যাকাণ্ড, যুদ্ধ আমরা চাই না। ফিলিস্তিনের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। তাদের রাষ্ট্র যেন তারা ফেরত পায়, সেটা আমরা চাই।’

সোমবার সংসদে উত্থাপিত ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা ও অবিলম্বে তা বন্ধে জোর দাবি জানিয়ে সংসদে প্রস্তাব (সাধারণ) পাস হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্ত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাব (সাধারণ) উত্থাপণ করেন আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য দিনাজপুর-৪ আসনের আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রস্তাবে বলা হয়-‌ সংসদের অভিমত এই যে, ‌বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত নৃশংস গণহত্যার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে এবং এই হত্যাকাণ্ড বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছে।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মানবাধিকারের চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এই সংসদ ফিলিস্তিনে মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বের সব বিবেকবান জনগণ, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষা ও তাদের ন্যায়সঙ্গত স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কার্যকরভাবে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে। পরে কন্ঠভোটে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ, রুস্তুম আলী ফরাজী, মসিউর রহমান রাঙ্গা, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনে অনবরত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। নারী ও শিশু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আজকে সেখানে কী অবস্থা? আমরা মানবাধিকারের কথা শুনি। অনেক কিছু শুনি। ফিলিস্তিনের জনগণ অমানবিক জীবনযাপন করছে। সেখানে হাসপাতালকে নিরাপদ স্থান মনে করে মা তাদের সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।

সেখানেই ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালাল। বোম্বিং করে। নারী-শিশুকে হত্যা করে। একটা জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। এর নিন্দার ভাষা নেই। হাসপাতালের মত জায়গায় কী করে হামলা করতে পারল? মানুষ হত্যা করতে পারল?

অতীতের হামলার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর আগেও কিন্তু এভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। নারী-শিশু, অন্তঃসত্ত্বাদের হত্যা করা হয়েছে। শিশুরা বড় হলে নাকি যোদ্ধা হয়ে যায় তাই তাদের হত্যা।

আমি যখন যে ফোরামে গিয়েছি এসব হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়েছি। এই ধরনের ঘটনা আমরা কখনও মেনে নিতে পারি না। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে একজন মানুষ হিসেবে, মা হিসেবে প্রতিবাদ করা আমাদের দায়িত্ব।’

বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে রয়েছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে এরই মধ্যে ওষুধ, খাদ্য ও নারী-শিশুদের জন্য পণ্য সামগ্রী পাঠিয়েছি। কিন্তু সেটা ওখানে পৌঁছানোর সুযোগ নেই। আমরা মিশরে পাঠিয়েছি, তারা গ্রহণ করেছে। সেখান থেকে পৌঁছে দেবে। সব থেকে দুর্ভাগ্য যে সেখানে খাবার ওষুধ, কোনো কিছুই দিতে দিচ্ছে না।

চারিদিকে ইসরায়েলি বাহিনী বন্ধ করে রেখেছে। এটা কোন ধরনের কথা! যেকোন যুদ্ধে নারী-শিশু ও হাসপাতালের ওপর এভাবে হামলা হয় না, খাবার বন্ধ হয় না। কিন্তু আজকে সেখানে খাবার-পানি সব কিছু বন্ধ করে তাদের অমানবিক যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে মানুষ হাহাকার করছে।’

এই ঘটনার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরব লীগের সঙ্গে আমরা যুক্ত হয়ে জাতিসংঘে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছি। সেখানে ১২০ দেশ আমাদের সমর্থন দিয়েছে। আমরা চাই, অন্তত সেবাখাত খোলা হোক। যাতে করে ওখানকার মানুষগুলো বাঁচতে পারে। সেই সেবাখাতটা বন্ধ করে কষ্ট দিচ্ছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর যা ঘটাচ্ছে তা কখনো মেনে নেওয়া যায় না।’

বাংলাদেশে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কীভাবে ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়ানো যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি। ব্রাসেলস সফরে গিয়ে আমার ভাষণে এই বিষয়টি তুলেছি। সেখানে ইউরোপের দেশগুলোর রাষ্ট্র, সরকার প্রধান ও প্রতিনিধিরা ছিলেন।

সেখানে আমি বলেছি, আপনারা আর যাই করেন যুদ্ধ বন্ধ করেন। যুদ্ধ মানুষের মঙ্গল আনে না। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করেন। অস্ত্র প্রতিযোগিতা মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে। নারী-শিশুদের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি। অস্ত্র প্রতিযোগিতার টাকা শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসায় ব্যয় করেন। তাহলে বিশ্বের মানুষের কষ্ট থাকবে না। সকলেই আমরা বক্তব্যটা গ্রহণ করেছেন। মানবাধিকারের কথা বলা হয়। কিন্ত এখানে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে।’

সোনালী/জেআর

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS