ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ৩:৩৯ পূর্বাহ্ন

শিশির কুয়াশায় রাজশাহীতে শীতের বার্তা

  • আপডেট: Friday, October 27, 2023 - 12:00 am

শীতজনিত রোগ বাড়ছে

জগদীশ রবিদাস: পদ্মা পাড়ের শহর হিসেবে খ্যাত রাজশাহীতে চতুর্থ ঋতু হেমন্তের প্রথমেই শীতের আমেজ অনুভূত হচ্ছে। দিনের আবহাওয়া গরম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই প্রকৃতি যেন জানান দিচ্ছে মৃদু শীতের আগমনি বার্তা। রাতে ঘুমের ঘোরে জড়াতে হচ্ছে কাঁথা। টিপটিপ করে শিশির পড়ছে রাতভর।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে দেখা যায়, ঘাসের পাতায় জড়িয়ে রয়েছে মুক্তোর মতো শিশিরবিন্দু। সবজি ক্ষেত ও ফসলের মাঠের ওপর ভোরের সূর্য কিরণে হালকা লালচে রঙের ঝিলিক দিচ্ছে বিন্দু-বিন্দু শিশির কণা। এসব দৃশ্যই যেন শীতের আগাম বার্তা দিচ্ছে উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে ২২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্য মতে, গত তিন দিনের ব্যবধানে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমেছে প্রায় দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গত ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩০ ডিগ্রি সেলিসেয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ দশমিক ০৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরের দিন গত ২৫ অক্টোবর বুধবার তাপমাত্রা ৭ দশমিক কমে দাঁড়ায় ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ওইদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমে দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ওইদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ধীরে-ধীরে শীত অনুভূত হচ্ছে। বর্তমানে দিনের বেলা শীতের অনুভূতি তেমন না পাওয়া গেলেও মধ্যরাতে এটি অনুভূত হচ্ছে। এখন যত দিন গড়াবে, শীতের মাত্রাও বাড়বে।

শীতের তীব্রতা কবে নাগাদ পড়তে পারে প্রশ্ন করলে আবহাওয়া অফিসের এই কর্মকতা বলেন, এখনই কনকণে শীতের তীব্রতা পড়ার সম্ভাবনা নেই। এটি ধাপে-ধাপে বৃদ্ধি পাবে। তবে আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।

এদিকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরম ও মাঝরাতে হালকা শীতের কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই। বিশেষ করে শিশু ও বেশি বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। রামেক হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে জায়গা না হওয়ায় মেঝে বা বারান্দায় ঠাঁই নিয়েছেন রোগীরা।

রাজশাহীর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. চিন্ময় কান্তি বলেন, আবহাওয়াটা যেহেতু পরিবর্তন হচ্ছে এবং হালকা গরম থেকে শীতের দিকে যাচ্ছে; সুতরাং এ সময়টি ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার প্রজননের জন্য একটি বড় ক্ষেত্র। বিশেষ করে এ সময়টিতে শীতজনিত অনেক রোগ বালাইয়ের দেখা পাওয়া যায়। আর এতে বেশি আক্রান্ত হন স্বল্প ইমিউনিটি সম্পন্ন শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠরা। এর সঙ্গে চলমান সমস্যা ডেঙ্গু তো আছেই।

স্বাস্থ্য বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে তিনি আরও বলেন, শীতজনিত রোগ নিয়ে আমাদের বিচলিত হলে চলবে না। এ সময়ের রোগ যেমন- জ্বর-সর্দি, নাক দিয়ে জল পড়া এবং এর সঙ্গে যদি হালকা বা তীব্র জ্বর আসে; তবে যেন কখনোই আমরা ডেঙ্গুকে গুলিয়ে না ফেলি। এর কারণ হচ্ছে- যে সময়টি আমরা পার করছি, তাতে জ্বর হওয়া মানেই আমরা কিন্তু ধরে নেব; এর সঙ্গে ডেঙ্গুর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সুতরাং এই সময়টি আমাদের অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে থাকতে হবে।

এ সংক্রান্ত সমস্যায় পরামর্শ দিয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের রাজশাহী জেলার এই সভাপতি বলেন, এই সময়টিতে বিশেষ করে যারা শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন; তাদের দিকে বেশি নজরদারি দেয়া প্রয়োজন। কোনোভাবেই তাদের ঠান্ডা লাগানো যাবে না। বাইরে গেলে একটু গরম কাপড়-চোপড় পড়তে হবে। একইসঙ্গে পুষ্টি গুণযুক্ত টাটকা খাবার এবং বিশেষ করে বাড়ির তৈরি খাবার খেতে হবে। মনে করি, এতে করে শীতজনিত অনেক রোগবালাই ঠেকানো সম্ভব। রোগী বাড়ছে না কমছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেলসহ অন্যান্য হাসপাতালে ইতিমধ্যেই শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে এটি আরও বাড়তে পারে।

শহরের দরগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা হাসান আলী বলেন, কয়েকদিন ধরে মাঝরাতে শীত লাগছে। ফজরের নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হলে কুয়াশাও দেখা গেছে। রাতে এমন শীতের কারণে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহীতে এখনো সেভাবে শীত পড়েনি। তবে আস্তে আস্তে পড়বে। কয়েকদিন ধরে হালকা শীতের আমেজ অনুভত হচ্ছে। শীত নিয়ে দুঃস্থ ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রতি বছরের মতো এবারও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

সোনালী/জেআর