ঢাকা | মে ১০, ২০২৫ - ১০:১৮ অপরাহ্ন

গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের নির্মম হামলা: বিশ্বজুড়ে নিন্দা

  • আপডেট: Thursday, October 19, 2023 - 12:00 am

অনলাইন ডেস্ক: অবরুদ্ধ গাজায় আল-আহলি হাসপাতালে মঙ্গলবার বিমান হামলায় অন্তত পাঁচশ লোকের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে গাজা কর্তৃপক্ষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নেতারাও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।

হামলার বিষয় স্বীকার করেনি ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই হামলা অন্য কোনো পক্ষ চালিয়ে থাকতে পারে।

আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রধান মুসা ফাকি মাহামাত এই হামলার পর ইসরায়েলকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলায় নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেন, গাজায় হাসপাতালে হামলা অযৌক্তিক এক ট্র্যাজেডি। তিনি আন্তর্জাতিক মানবিক হস্তক্ষেপ এবং এই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, নিরপরাধরা যুদ্ধের উন্মাদনার মূল্য দিতে পারে না।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো হামলার নিন্দা করেন এবং যুদ্ধের আইন মেনে চলার ওপর জোর দেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গাজা থেকে যে খবর আসছে তা ভয়ঙ্কর এবং একেবারেই অগ্রহণযোগ্য… আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার এবং সব ক্ষেত্রেই। যুদ্ধের নিয়ম আছে। হাসপাতালে হামলা অগ্রহণযোগ্য।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনায় তারা শোকাহত। তারা এই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

মিশর সরকার এই হামলার নিন্দা করে কঠোর ভাষায় একটি বিবৃতি জারি করেছে। পাশাপাশি দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নিতে এবং আইনের আরও লঙ্ঘন প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছে। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি ইচ্ছাকৃত বোমা হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল হাসপাতালে এই বোমা হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, আরও একবার নিরপরাধ বেসামরিকদের সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হলো। এই অপরাধের দায় স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করতে হবে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেছেন, বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, বেসামরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো কোনোভাবে আইনসিদ্ধ নয়। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, গাজা উপত্যকায় মানবিক প্রবেশাধিকার বিলম্ব না করে চালু করতে হবে।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো বেসামরিকদের ওপর হামলায় নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, এই হামলা নিন্দনীয়। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে অবশ্যই সম্মান করা উচিত। হামলার বিষয়ে তদন্ত হতে হবে।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, হাসপাতালে বোমা বিস্ফোরণের ছবি দেখে তিনি আতঙ্কিত। তবে এই হামলার দায় তিনি কারো ওপর চাপাননি। এক্স হ্যান্ডলে তিনি বলেন, নির্দোষ বেসামরিকরা আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন। এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত অত্যাবশ্যক।

ইরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ হাসপাতালে হামলার ঘটনায় বিক্ষোভ ডেকেছে। ইসরায়েলের ওপর দোষ চাপিয়ে এটি হামলার ঘটনাকে গণহত্যা এবং নৃশংস অপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া সরকার গাজায় হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে গাজায় এই হামলা ও সহিংসতা বন্ধ করা হয় এবং শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রসও (আইসিআরসি) এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলছে, হাসপাতালগুলো মানুষের জীবন রক্ষার জন্য অভয়ারণ্য হওয়া উচিত, মৃত্যু ও ধ্বংসের দৃশ্য নয়।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিমান হামলাকে নিরস্ত্র ও অরক্ষিত মানুষদের ওপর হামলা বলে নিন্দা করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বুধবার সরকারি শোক ঘোষণা করে বলেছেন, হাসপাতালে হামলা ইসরায়েল এবং তার মার্কিন মিত্রদের বিরুদ্ধে যাবে।

তিনি আরও বলেন, গাজার হাসপাতালে আহত ফিলিস্তিনিদের ওপর ফেলে দেওয়া মার্কিন-ইসরায়েল বোমার অগ্নিশিখা শীঘ্রই ইহুদিবাদীদের গ্রাস করবে।

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে অবিলম্বে এবং জরুরি রেজল্যুশন আহ্বান করেন। ইরাক সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে বলেন, মঙ্গলবার রাতে গাজায় হাসপাতালের ওপর বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনায় তিনি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি বলেন, চলমান সংঘাতে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা একটি গুরুতর এবং ক্রমাগত উদ্বেগের বিষয়। অপরাধীদের দায় নিতে হবে।

এক বিবৃতিতে জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের হামলায় কঠোর নিন্দা জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক সুরক্ষা এবং যুদ্ধের অবসানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।

রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ বলেন, গাজার হাসপাতালে হামলা গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ। এ নিয়ে কেউ চুপ থাকতে পারে না।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলছেন, এই হাসপাতালে হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল সব সীমানা পেরিয়ে গেছে। এই হামলাকে তিনি গণহত্যা আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি মেনে নেওয়া যায় না।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য় এই হামলার ঘটনাকে নৃশংস গণহত্যা এবং অরক্ষিত নাগরিকদের বিরুদ্ধে হওয়া জঘন্য অপরাধ বলে আখ্যা দেন। এক বিবৃতিতে উপসাগরীয় রাষ্ট্রটি বলছে, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের বিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার বলছে, আল-আহলি আরব হাসপাতালের ওই হামলা মর্মান্তিকভাবে অমানবিক অপরাধ। ইসরায়েল যদি জড়িত না থাকে তবে তাদের উচিত স্যাটেলাইট ইমেজ প্রকাশ করা।

সৌদি আরব এই হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে এবং বলছে, এটি সব আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন। বেসামরিকদের ওপর ইসরায়েলের ক্রমাগত আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে।

আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইত বলেন, হামলার প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক নেতাদের অবিলম্বে এই ট্র্যাজেডি বন্ধ করতে হবে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি গাজার এই নজিরবিহীন বর্বরতা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব মানবতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গাজায় হাসপাতালে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার একটি স্কুলে গড়ে ওঠা শরণার্থী শিবিরে হামলার নিন্দা জানান।

তিনি গাজার ওই হাসপাতালে হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকের হত্যার ঘটনায় আতঙ্কিত। তিনি যোগ করেন যে হাসপাতাল এবং চিকিৎসা কর্মীরা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে সুরক্ষিত। মহাসচিব পরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার চলমান যুদ্ধে বিরতি দেওয়ার আহ্বান জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যে বিস্ফোরণে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটেছে, তাতে তিনি ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে শোকাহত। তিনি জানান, এই খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি জর্ডানের আব্দুল্লাহ ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন।

এই হামলার পরদিনই বাইডেন ইসরায়েল সফর করেছেন এবং বলেছেন, এই হামলা ইসরায়েল ঘটায়নি, অন্য কোনো গোষ্ঠী এটি ঘটিয়ে থাকতে পারে।

সোনালী/জেআর

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS