নির্বাচনে ‘এক্সপার্ট গ্রুপ’ পাঠাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন
সোনালী ডেস্ক: বাজেট স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ‘এক্সপার্ট গ্রুপ’ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল রোববার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের তারা এমন ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান।
রোববার সকাল ১১টার দিকে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির গুলশানের বাসায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও অংশ নেন। বৈঠকের পর দলের ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা শুনে খুশি হবেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা দিয়েছে, তারা একটা এক্সপার্ট গ্রুপকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পাঠাবে।’ রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ‘ভালো বৈঠক হয়েছে’ উল্লেখ করে ফারুক খান বলেন,
‘বৈঠকের শুরুতেই তারা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক, এটা একটা চমকপ্রদ ব্যাপার। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়ন সফরে যাচ্ছেন। সেখানে আমাদের সঙ্গে পার্টনারশিপ চুক্তি হবে। এই কথাগুলো তারা শুরুতেই উল্লেখ করেছেন।
দেড় ঘণ্টার মতো বৈঠক হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বৈঠকে মূলত আলোচনা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কী পরিসরে, কী চিন্তায় অগ্রসর হচ্ছে? আমরা তাদের বলেছি যে- আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কিছু দিনের মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে। তারপর নির্বাচন কমিশন ভোটের শিডিউল (তফসিল) ঘোষণা করবে এবং তারপর আমরা সেই মোতাবেক নির্বাচন করবো।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেনুফেস্টু কী হবে, সেটাও ইইউ সদস্যরা জানতে চেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের ব্যাখ্যা করেছি- আমাদের মেনুফেস্টু সাধারণত দুইটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে গত নির্বাচনে যে মেনুফেস্টু দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমাদের যে কমিটমেন্টগুলো ছিল, সেটা আমরা কতদূর পূরণ করতে পেরেছি, তা আমরা জনগণকে জানাবো। পরের অংশে আগামী ৫ বছরে আমরা কী করতে চাই, এটা জানাবো। এই লক্ষ্যে সব সব অংশীদারদের নিয়ে ইতোমধ্যে একটা বৈঠক করা হয়েছে, তারা কাজ করছেন। কিছুদিনের মধ্যেই এটা শেষ হলে তা আওয়ামী লীগের সেন্ট্রাল ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে প্লেস করা হবে। সেখানে এটা অনুমোদন পেলে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সবাইকে জানানো হবে।’ এ ছাড়াও দেশের আগামী ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’ নিয়ে আওয়ামী লীগ কী চিন্তাাভাবনা করছে; তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ফারুক খান।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা নিয়ে আমরা কী চিন্তাভাবনা করছি, দেশের অন্যান্য ডেভেলপমেন্ট নিয়ে, ইকোনমিক ক্রাইসিস নিয়ে আমরা কী চিন্তাভাবনা করছি- এই বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে, আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি খুবই ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আজ যে আলোচনা হয়েছে, তাতে প্রমাণ হয়েছে যে- তারা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং সেই নির্বাচনের কথাই আমরা বলি।’ সুষ্ঠু নির্বাচন এবং তাতে আওয়ামী লীগ কী কী করবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপির কথা নিয়ে আমরা শুধু এতটুক বলেছি যে, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। আশা করি, তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।’ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, সংলাপের কোনো কথা হয়নি।’
ফারুক খান বলেন, ‘তারা প্রশ্ন করেছে, আগামী নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করলে দেশটাকে কোন দিকে, কীভাবে চালাবো? তার জবাবে বলেছি- সেটার উত্তর আপনারা আমাদের মেনুফেন্টুতেই পাবেন। আমাদের মেনুফেস্টুতেই তো লেখা থাকবে, আগামী ৫ বছর বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, ডেমোক্রেসিকে কীভাবে এক্সটেন্ড করা হবে, জুডিশিয়াল সিস্টেমকে কীভাবে এক্সটেন্ড করা হবে, কীভাবে আমরা করাপশনের বিরুদ্ধে লড়বো; এসব কথা আমাদের ইলেকশন মেনুফেস্টুতে থাকবে।’ বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি ছাড়াও ইইউভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম ও নির্মল চ্যাটার্জী।
সোনালী/জেআর