ঢাকা | সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ - ৭:১৪ পূর্বাহ্ন

ইসরায়েল সীমান্তেই ২ বছর ধরে যেভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল হামাস

  • আপডেট: Friday, October 13, 2023 - 8:45 pm

অনলাইন ডেস্ক: শনিবার (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে ভয়াবহ ও নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী শসস্ত্র সংগঠন এবং গাজা উপত্যকার ইসলামপন্থী শাসকদল হামাস।

আর এই হামলার প্রস্তুতি নিতে গত দুই বছর ধরে ইসরায়েল সীমান্তেই সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল সংগঠনটির যোদ্ধারা। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

দুই বছর ধরে চলা হামাসের প্রশিক্ষণের বিভিন্ন ভিডিও বিশ্লেষণ করে সিএনএন ছয়টি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চিহ্নিত করেছে। শনিবারের হামলার জন্য এসব ক্যাম্পেই দীর্ঘ সময় ধরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন হামাস যোদ্ধারা।

প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলোর মধ্যে একটির অবস্থান দেখা গেছে গাজা-ইসরায়েল সীমান্তের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এবং কঠোর নজরদারিতে থাকা ইরেজ ক্রসিংয়ের কাছেই। ওই এলাকা থেকে ক্যাম্পটি দুই কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত।

গাজা-ইসরায়েলের মধ্যে যাতায়াতে এই সীমান্তপথটিই বেশি ব্যবহার হয়। এই ক্যাম্পের ভবনগুলো নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। আরেকটি প্রশিক্ষণ শিবির সীমান্ত থেকে মাত্র ৭২০ মিটার দূরে।

ক্যাম্পগুলোতে ইসরাইলের বিভিন্ন ভবনের আদলে তৈরি কিছু স্থাপনা ঘিরে হামাসের বহু যোদ্ধাকে রকেট ছুড়তে এবং লোকজনকে বন্দী করার প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেছে গত বছরের ডিসেম্বরে ধারণ করা একটি ভিডিওতে।

এক বছর আগে ধারণ করা আরেকটি ভিডিওতে হামাস যোদ্ধাদের প্যারাগ্লাইডারে উড্ডয়ন, অবতরণ এবং গুলি ছোড়ার প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেছে। গত ৭ অক্টোবর এই প্যারাগ্লাইডারে উড়ে গিয়েও হামলা চালান হামাস যোদ্ধারা। সূর্যের আলো–ছায়া দেখে বোঝা যায়, ভিডিওতে ধারণ করা এই প্রশিক্ষণ দিনের কয়েক ঘণ্টা ধরে বা কয়েক দিন ধরে চলছিল।

ভিডিওতে দেখা যায়, যে প্রশিক্ষণ শিবিরে উড্ডয়নের প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়েছিল, সেখানে হামাসের নিজেদের তৈরি ড্রোনও ব্যবহৃত হয়েছিল। প্যারাগ্লিডিং পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পর এই ভিডিও ধারণ করা হয়েছে, যা হামলার কয়েক মাস আগে ধারণ করা।

শুধু নির্ধারিত প্রশিক্ষণ ক্যাম্পই নয়, হামাস যোদ্ধারা এই দুই বছরে আশপাশের কৃষিজমিগুলোতেও সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণের মাত্রা এতটাই ব্যাপক ছিল কৃষিজমিগুলো বিরাণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।

সব প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে মাটি দিয়ে এমনভাবে প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে, প্রশিক্ষণ শিবিরের ভবনের চেয়ে তার উচ্চতা ছিল বেশি। ব্লক আর সিমেন্ট দিয়ে এসব ভবন বানানো হয়েছে। বেশির ভাগ ভবনের ছাদও ছিল না। কিছু প্রশিক্ষণ শিবিরে ফটক ও কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। আশপাশের সড়ক আঁকাবাঁকা এবং বেশির ভাগ সড়কই মসৃণ নয়।

হামাস সামাজিক মাধ্যমে তাদের ভিডিও প্রকাশের আগে মাসের পর মাস, কখনো কখনো বছরজুড়ে প্রশিক্ষণ চালিয়েছে। ভিডিওতে ৭ অক্টোবর হামলার কিছুটা পূর্বাভাসও ছিল।

ছয় প্রশিক্ষণ শিবিরের তিনটিতে নকল ইসরায়েলি ট্যাংক বানিয়ে বসানো হয়েছে। হামাস যোদ্ধাদের আরপিজি ও অন্যান্য বিস্ফোরক নিয়ে এসব ট্যাংককে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে দেখা যায়।

হামাসের ঝড়ের মতো ইসরায়েলে ঢুকে সেনা ঘাটিগুলোর দখল নেওয়া, তাণ্ডব চালিয়ে শহর, খামারগুলোকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা এরপর লোকজনকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়ার পর ইসরায়েলের গোয়েন্দা এবং সামরিক তৎপরতার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

হামাস তার যোদ্ধাদের দুই বছর ধরে বলতে গেলে প্রায় প্রকাশ্যেই প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাহলে কেন মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে আধুনিক সমর ও গোয়েন্দা শক্তির দেশ ইসরায়েল তা শনাক্ত করতে পারল না আর কেনই বা হামলা ঠেকাতে পারল না?

এই প্রশ্নের জবাবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জনাথন কনরিকাস জানিয়েছেন, তারা এ ঘটনার তদন্ত করবে। আর হামাসের এ প্রশিক্ষণ শিবির নতুন কিছু নয়। এর আগে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালিয়েছি আমরা।

কনরিকাস বলেন, গত দুই বছর ধরে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো উত্তেজনা ছিল না। আর হামাস হয়তো তাদের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোকে বেসামরিক স্থাপনার মতোই তৈরি করেছিল।

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে হামাসের সঙ্গে নতুন করে বৈরিতা শুরুর পর গত দুই বছরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংগঠনটির বড় ধরনের কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া হামাস তাদের এই প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডকে হয়ত ‘বেসামরিক’ আদলে পরিচালিত করেছিল।

কোনো পূর্ব ঘোষণা ও ইঙ্গিত ছাড়াই শনিবার আকস্মিকভাবে ইসরায়েলে হামলা চালানো শুরু করে হামাস। তাদের এ হামলায় ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছে।

হামাসের এই হামলার পর প্রতিশোধ নিতে গাজা উপত্যকা লক্ষ্য করে হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। তাদের এসব নির্বিচার হামলায় ১ হাজার ৫৩৭ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। বোমা হামলা অব্যাহত থাকায় এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এরমধ্যে শুক্রবার গাজার প্রায় ১১ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণ দিকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। ধারণা করা হচ্ছে, বেসামরিক মানুষ সরে গেলে সেখানে স্থল হামলা শুরু করবে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থল হামলার জন্য ইতিমধ্যে গাজার কাছে প্রায় ৩ লাখ সেনা জড়ো করেছে ইসরায়েল। এসব সেনার সঙ্গে রয়েছে ট্যাংকসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র।

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন জরুরি সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট গতকাল বৃহস্পতিবার হুমকি দিয়েছেন, তারা গাজায় এমন অভিযান চালাবেন; যার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। সূত্র: সিএনএন

সোনালী/জেআর