ঢাকা | নভেম্বর ২০, ২০২৪ - ৪:১৬ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার সাইকেল মিস্ত্রি

  • আপডেট: Sunday, October 8, 2023 - 12:10 am

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দীঘা বাজারে নিজ সাইকেল-রিকশার গ্যারেজে দিনে-দুপুরে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল সাইকেল মিস্ত্রি খাকছার আলীকে (৫২)।

ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার শরীর থেকে মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

প্রকাশ্য দিবালোকে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সবাই স্তম্ভিত হয়ে যান। অথচ তার কোনো শত্রুই ছিল না। ক্লু-লেস এ লোমহর্ষক খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না পুলিশ।

তবে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শেষ পর্যন্ত খুনিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতের নাম আবীর হোসেন (২০)। তিনি একই উপজেলার আসাদুল ইসলামের ছেলে। এছাড়া আবীর নিহতের প্রতিবেশী। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসববি) রফিকুল আলম, শনিবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পরদিন রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য দ্রুত উদঘাটনের জন্য নির্দেশ দেন।

এরপর মামলা দায়ের করা হয়। বাঘা থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) সবুজ রানা এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নিয়োজিত হন। জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কিন্তু তদন্তে নেমে সবাই হতবাক হয়ে যান। কারণ নিহত ব্যক্তির সত্যি সত্যিই কোনো শত্রু নেই। নেই কোনো ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীও। পারিবারিক বিরোধ, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কোনো তথ্যও মেলেনি।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল ভর দুপুরে হাটের দিনে খুন হলেও কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই! তাই প্রথাগত তদন্তের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের ক্লু বের করার চেষ্টা করে পুলিশ।

এভাবে প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পর আশার আলো দেখা যায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারেন ঘটনার পর থেকে নিহত ব্যক্তির প্রতিবেশী আবীর নামে একটা ছেলের আচরণ সন্দেহজনক।

যেহেতু কোনো ক্লু-ই পাওয়া যাচ্ছিল না, তাই তদন্ত কর্মকর্তা এটি নিয়েই কাজ শুরু করেন। এরপর গত শুক্রবার (৬ অক্টোবর) রাতে তাকে থানায় আনা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কোনো কিছুই স্বীকার করেননি। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জিজ্ঞাসাবাদে যোগ দেন। রাত বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে সমন্বিত জিজ্ঞাসাবাদের চাপও। এক পর্যায়ে তিনি মুখ খুলতে শুরু করেন।

প্রথম পর্যায়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের টিমকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল আবীর। কিন্তু টিমের পুলিশ সদস্যরা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছিলেন এ ঘটনায় তিনি জড়িত। এক পর্যায়ে আবীর পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন, যা ঘটনার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আবীর জানিয়েছেন, ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ঘাস কাটার জন্য হাসুয়া নিয়ে বের হয়েছিলেন। যাওয়ার পথে খাকছারের দোকানে যান।

খাকছার তখন দোকানে একাই ছিলেন এবং নিজের জন্য পান বানাচ্ছিলেন, পাশেই বিকট শব্দে করাত কল চলছিল। তিনি সম্পর্কে আবীরের প্রতিবেশী দাদা। তাই দোকানে গিয়ে আবীর দাদা খাকছারের কাছে ১০০ টাকা চান।

কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে আবীরকে গালি দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবীর তার হাতের হাসুয়া দিয়ে কোপাতে থাকেন। এক পর্যায়ে খাকছারের ঘাড়ে সজোরে কোপ মারেন। এতে তার মৃত্যু হয়।

পাশে করাত কলের শব্দের কারণে কেউ শুনতে পাননি। এ সুযোগে আবীর খুনের কাজে ব্যবহৃত হাসুয়া নিয়েই বাজারের পেছন দিয়ে মাঠের ঘাস কাটতে চলে যান।

পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল আলম জানান, শনিবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লিটন হোসেনের আদালতে আবীর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর আদালতের নির্দেশে তাকে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সোনালী/জেআর