পুঠিয়ায় ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছে যুবলীগ নেতারা
পুঠিয়া প্রতিনিধি: পুঠিয়ায় রাতের আধাঁরে ফসলি জমিতে অবৈধ ভাবে পুকুর খননের হিড়িক শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, যুবলীগ নেতারা বিভিন্নভাবে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করছেন।
এরপর জমিতে পুকুর খননকৃত মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন। আর এতে করে দিন দিন এলাকার ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। অপরদিকে পুকুরের খননকৃত মাত্রাতিরিক্ত মাটি বহনকারী ট্র্যাক্টর যাতায়াতের কারণে গ্রামীণ সড়ক গুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের কাচুপাড়া এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পচাঁমাড়িয়া ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান পুকুর খনন করতে গত সপ্তাহে তিনটি ভেকু ভাড়া করে এনেছেন।
তিনি সেখানে ২১ জন কৃষকের প্রায় ৭০ বিঘা ধানের জমি ইজারা নিয়ে খনন কাজ শুরু করছেন। আর বেলপুকুর এলাকায় ৮ জন কৃষকের প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে খনন কাজ করছেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমনউজ্জামান।
অপরদিকে ভালুকগাছি ইউনিয়নে ২০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন জিউপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জুয়েল হোসেন। নন্দনপুর এলাকায় ১০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন ওই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলম।
তবে ফসলি জমিতে পুকুর খননে তাদের কারো কাছে কোনো প্রকার অনুমোদন নেই। যার কারণে সেখানে দিনের বেলায় কোনো খনন কাজ হয় না। খননকৃত স্থানে ভেকু গুলো বন্ধ পড়ে থাকে। আর ইটভাটার মাটি বহনকারি ট্রাক্টর গুলো দূরে কোথাও সরিয়ে রাখা হয়। সন্ধ্যা নামলেই খননকৃত স্থানে আলোকিত করে চলে পুরোদমে খনন কাজ।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌসুমি রহমান বলেন, এ বছরের শুরু থেকে ব্যাপক আকারে পুকুর খনন হয়েছে। এবার বর্ষায় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন এলাকায় আবারো পুকুর খনন শুরু হয়েছে। মৎস্য চাষিদের প্রলোভনে স্থানীয় জমির মালিকরা সাড়া দিচ্ছে। আর এভাবে পুকুর খনন করা হলে আগামি দিনে ফসলি জমি রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।
কোনো অনুমতি ছাড়াই খননকারিরা বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে রাতের আধাঁরে পুকুর খনন করছে। আর জমির ঊর্বর মাটি চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ইট ভাটায়। কোনো বাধাই তারা মানছেন না। তিনি বলেন, এই উপজেলায় পুকুর খনন বন্ধ করতে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে কয়েকবার লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। গ্রামের সচেতন মানুষদের নিয়ে মানববন্ধন করার পরও পুলিশ প্রশাসন নিরব রয়েছেন।
কাচুপাড়া এলাকার খননকৃত পুকুরের একজন জমির মালিক নাজিম হোসেন। তিনি বলেন, যুবলীগ নেতা সাইদুর বলেছেন বছরে প্রতি বিঘা জমি ২০ হাজার টাকা ইজারা দিবেন। আর কোনো প্রকার চাষাবাদ করা ছাড়াই তার অনেক টাকা আয় হচ্ছে। যার কারণে তিনিসহ কমপক্ষে ২১ জন কৃষক তাদের জমিতে পুকুর খনন করতে দিয়েছেন। ফসলি জমিতে পুকুর খনন করার কোনো অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসকল বিষয়গুলো ওই নেতা দেখছেন।
বেলপুকুর এলাকায় খননকৃত পুকুরে দেয়া একজন জমির মালিক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, একজন মৎস্য চাষির সাথে চুক্তি মোতাবেক যুবলীগ নেতা সুমন খননকৃত পুকুরের মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে দিয়েছেন। আর বছর শেষে পুকুর ইজারার টাকা ওই যুবলীগ নেতা সকল জমির মালিককে পরিশোধ করবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমনউজ্জামান বলেন, আমি সরাসরি কোনো পুকুর খননের সাথে জড়িত নেই। তবে দলের কয়েকজন ছেলে- পেলে মিলে একটা পুকুর খনন করছে। পুকুর খননে সরকারি কোনো অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় নিয়ে তিনি পরে কথা বলবেন।
আর পচাঁমাড়িয়া ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করেই তিনি এখানে পুকুর খনন কাজ শুরু করেছেন। সে কারণে কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই।
অপরদিকে জিউপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জুয়েল হোসেন ও নন্দনপুর এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
কাচুপাড়া এলাকার বাসিন্ধা নুর উদ্দীন বলেন, মৎস্য চাষিরা এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের সাথে চুক্তি করছে। চুক্তি মোতাবেক ওই নেতারা স্থানীয় কৃষকদের বলছেন, কোনো প্রকার খরচ ছাড়াই প্রতিবছর মোটা অর্থের প্রলোভনে তারা ফসলি খেত খনন করতে রাজি হচ্ছেন। এরপর একাধিক ভেকু নামিয়ে প্রায় ৭০ বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছে।
তিনি বলেন, পরে ওই নেতাদের সাথে চুক্তি করে স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা খননকৃত মাটি কিনে নিচ্ছেন। এরপর ওই মাটি গুলো ১২/১৪ টি ট্র্যাক্টর বহন করছে। আর ট্র্যাক্টর গুলো মাত্রাতিরিক্ত মাটি বহনের কারণে গ্রামীণ সড়ক গুলো জরাজীর্ন হয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি। তবে রহস্যজনক কারণে কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
তবে বিশেষ সমঝোতার বিষয়টি অস্বীকার করে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন থেকে একটি মহল রাতের আধাঁরে আবারো কয়েকটি স্থানে পুকুর খনন করছে। থানা পুলিশ পুকুর খনন বন্ধ করতে মাঝে মধ্যেই অভিযান অব্যহত রেখেছেন। আর ভেকু ও ট্র্যাক্টরে ব্যাটারিসহ বিভিন্ন যত্রাংশ খুলে আনা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। যেখানে ফসলি জমিতে পুকুর খনন হবে সেখানেই জেল জরিমানা দেয়া হচ্ছে।
খননকৃত পুকুর গুলোতে সরকারি কোনো অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খনকারিরা গভীর রাতে তাদের কাজ করছেন। দিনে বেলায় গিয়ে সেখানে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। আর রাতে অভিযান করাও নানা জটিলতা দেখা দেয়। তিনি বলেন, ফসলি খেত রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি এলাকার সচেতন লোকজনদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
সোনালী/জেআর