নিজ থেকে চিকিৎসা নিতে এলো আহত বানর, বাঁচানো গেল না প্রাণ
অনলাইন ডেস্ক: বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল অসহায় এক বানর।
সেই বানরটিকে ঘিরে মানুষের মধ্যে শুধু আগ্রহ ও কৌতুহলই তৈরি হয়নি, তৈরি হয়েছিল অন্যরকম এক মমতাবোধ।
কিন্তু বেদনাদায়ক খবর হচ্ছে, চিকিৎসা নিতে গিয়ে মানুষের মনকাড়া বানরটিকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেলো না।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বানরটি মারা যায়। চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহরে অবস্থিত বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কার্যালয়ে রাখা হয়েছিল এই বানরটিকে। সেখানেই এটির মৃত্যু হয়। পরে ওই কার্যালয়ের এক পাশে বানরটিকে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘বানরটির অবস্থা ভালো ছিল না। তারপরও এটি যাতে সুস্থ হয়ে ওঠে, সেজন্য চোখে চোখে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বানরটিকে তরল খাবার খাওয়ানো হচ্ছিল।
কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে এটি এক প্রকার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, বমি করতে থাকে। তাতে বানরটি আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। আমরা বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে যাই।
চিকিৎসকরা ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করে দেন। ইনজেকশন পুশ করেন। তারাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এত চেষ্টার পরও বানরটিকে বাঁচানো যায়নি।’
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) সিনিয়র উপপরিচালক (জনসংযোগ ও প্রটোকল) খলিলুর রহমান বলেন, ‘ভেটেরিনারি হাসপাতালে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভেটেরিনারি হাসপাতালের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের সমন্বিত একটি টিম বানরটিকে চিকিৎসা দেন।
বানটির স্বাস্থ্য কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল। কিন্তু পরে জানতে পারি বানরটি মারা গেছে।’
পিঠ-পা ঝলসে যাওয়া যন্ত্রণায় কাতর বানরটি গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছিল। পরপর তিনদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে এটি। চিকিৎসকরাও বিমুখ করেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্যকর্মীরা বানরটির ক্ষতস্থানের ব্যান্ডেজ করে দেওয়াসহ সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানির পর বানরটিকে নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়।
এরইমধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বানরটিকে সিভাসুতে নিয়ে যান। সিভাসু’র একটি চিকিৎসক টিম বানরটিকে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ জানিয়েছেন, আহত বানরটি নিজ থেকেই হাসপাতালে আসে এবং হাসপাতালের করিডোরে এসে বসে থাকত।
ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেওয়া হলে সেটি বনে ফিরে গেছে। এভাবে তিনদিন চলে। এরপর বানরটিকে নিয়ে যান বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগ।
সোনালী/জেআর