গণভবনে বিশেষ বৈঠক || যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি জানি দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। আরও অনেক ষড়যন্ত্র হবে। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি মাঠের রাজনীতিতে পরাজিত। মাঠের রাজনীতি ছেড়ে ঘরে বসে গেছে। তাই আমাদের বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছে। যারা মাঠের রাজনীতিতে পরাজিত হয়েছে, তারা আমাদের কাছে সাইবার যুদ্ধ ও ভোটেও পরাজিত হবে। এ যুদ্ধে আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সহযোগী সংগঠনের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত হবে।
গতকাল দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দফতর-উপ দফতর, প্রচার- উপপ্রচার সম্পাদকদের নিয়ে বিশেষ বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রমতে, দুপুর সাড়ে ১২টায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। সরকারের উন্নয়ন প্রচার, সরকারবিরোধী গুজবের বিরুদ্ধে সত্য তুলে ধরার পাশাপাশি ভোটার পক্ষে আনতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে কৃষক লীগের সমীর চন্দ, উম্মে কুলসুম স্মৃতি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, আফজালুর রহমান বাবু, যুবলীগের মাইনুল হোসেন খান নিখিল, জয়দেব নন্দী, মোস্তাফিজুর রহমান, মহিলা আওয়ামী লীগের মেহের আফরোজ চুমকি, শবনম পারভীন শিলা, যুব মহিলা লীগের আলেয়া ডেইজী সরোয়ার, শারমিন সুলতানা লিলি, ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন, শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের সরকারের উন্নয়ন প্রচার ও সরকারবিরোধী গুজবের বিরুদ্ধে সত্য তুলে ধরার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত মাঠের রাজনীতিতে পরাজিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুললাম আমরা। আর এর সুযোগ নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধেই অপপ্রচার, নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছে। দেশ-বিদেশে বিএনপি-জামায়াত এই অপপ্রচারে লিপ্ত। এর রিরুদ্ধে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্য দিয়ে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে লড়াই করতে হবে। তাহলে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হবে না।
তিনি বলেন, আমরা এত উন্নয়ন করছি, সেগুলো প্রচারে অনেকটা পিছিয়ে আছি। বিএনপি-জামায়াতের এখন কোনো কাজ নেই। তারা এখন সাইবার যুদ্ধ করছে আমাদের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হচ্ছে গুজব এবং কলকাঠি নেড়ে করা হচ্ছে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। ব্যবহার করা হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউব ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আর তাদের বিদেশে রয়েছে লবিস্ট গ্রুপের তৎপরতা। দেশ ও বিদেশ থেকে একটি চক্র পরিকল্পিভাবে ছড়াচ্ছে এসব গুজব। বেশির ভাগ গুজবই তৈরি হচ্ছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এবং উসকানিমূলক। উদ্দেশ্য সরকারকে বিব্রত করা, দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং প্রশাসনের মনোবল ভেঙে দেওয়া।
বৈঠকে সহযোগী সংগঠনের নেতারা দলীয় সভানেত্রীকে জানান, সরকারবিরোধী অপপ্রচার নিয়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোও তৎপর হয়ে উঠেছে। যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগেও এ বিষয়ে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। ছাত্রলীগের উদ্যোগে সাইবার ব্রিগেড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাইবার ব্রিগেডের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন প্রচারসহ গুজব প্রতিহত করা হবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত এমপি দলীয় সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নেত্রী, বিএনপি-জামায়াত মাঠের রাজনীতিতে পরাজিত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য ভালো। সাইবার যুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, তারাও পরাজিত হবে। কিন্তু তখন তারা কি মাঠে ফিরে আসবে? মাঠে আসলে তো তাদের পুরনো চেহারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য করবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের আমাদের ওপর নানা ক্ষোভ রয়েছে। মাঠে না পেরে তারা ফেসবুকে সে ক্ষোভ ঝাড়ছে। তারা ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ থাকুক।
বিদেশি সংস্থাকে নির্বাচন দেখতে আমন্ত্রণ : বাংলাদেশের নির্বাচন হবে সংবিধান মোতাবেক। স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে আশা করি সব দল অংশগ্রহণ করবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও আমন্ত্রণ জানাই, তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসুক। তারা পর্যবেক্ষণ করুক, কেমন নির্বাচন আমরা করি। অবাধ, সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চক্রান্ত ষড়যন্ত্র থেমে থাকবে না। যারা ষড়যন্ত্র করার তারা করবেই।
আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনগুলোকে আরও বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।
এ সময় ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনস্রোত দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে উপস্থিত সহযোগী সংগঠনের এক নেতা বলেন, নেত্রী তো আমাদের মাঝে মাঝেই ডাকেন। আমাদের সংগঠনের যেগুলোর কমিটি হয়নি সেগুলোর কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। বিরোধীদের আন্দোলন সংগ্রাম মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচারের জবাব ও সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্ত চলছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এখনকার যুদ্ধ শুধু রাজপথে যুদ্ধ নয়। সাইবার যুদ্ধও হয়। সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে।
যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের অনেকেই কাজ করছেন। কিন্তু প্রত্যেকের উচিত আরও সক্রিয় হওয়া। আমরা আমাদের সব নেতা-কর্মীদের যদি সক্রিয় করতে পারি, তাহলে আগামী দুই মাসের মধ্যে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারব।
সোনালী/জেআর