ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ৭:৪৩ পূর্বাহ্ন

চন্দ্র জয় ভারতের

  • আপডেট: Thursday, August 24, 2023 - 3:00 am

অনলাইন ডেস্ক: সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতের মহাকাশযান ল্যান্ডার বিক্রম সফলভাবে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করেছে।

বুধবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চন্দ্রযানটি চাঁদের মাটিতে পাখির পালকের মতো ধীরেসুস্থে নেমে পড়ে। এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে। সূত্র : এনডিটিভি, বিবিসি, রয়টার্স।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এর আগে কোনো দেশই মহাকাশযান পাঠাতে পারেনি। ফলে এবার ভারত সেই সফলতা অর্জন করল। এটি আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীনের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতের নজির সৃষ্টির ঘটনা। এদিকে সফলভাবে ভারতীয় চন্দ্রযান চাঁদের মাটিতে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে ভারত জুড়ে মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়েন।

রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিক আবেগাপ্লুত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই তিনি ভারতের বিজ্ঞানীদের ইতিহাস সৃষ্টিকে বিপুলভাবে অভিনন্দিত করেন এবং ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এই ঐতিহাসিক বিজয় ও সাফল্যের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রমাফোসা ভারতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

তিনি তার দেশে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া ভারতকে তাৎক্ষণিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইলন মাস্ক। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘বিষয়টি মজার, যখন আপনি জানতে পারেন, চন্দ্রযান-৩ এর জন্য ভারতের বাজেট ইন্টারস্টেলার ফিল্মের থেকে কম। ’

এ ছাড়া ভারতের চন্দ্রযান অবতরণের আগ মুহূর্তেই নিজের সামাজিক মাধ্যমে ভারতের তেরঙা পতাকার ছবি শেয়ার করেন হলিউড অভিনেতা এবং রেসলিং সুপারস্টার জন সিনা। ভারতের চন্দ্রাভিযানকে অভিনন্দিত করে ভারতের বিশিষ্ট ব্যক্তি, রাজনীতিক এবং রাজ্যনেতারা বিবৃতি দিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘এই সাফল্য গোটা দেশের সাফল্য। ’ বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস চন্দ্রযান মিশনের সঙ্গে যুক্ত সব বিজ্ঞানীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর ইসরোকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

চাঁদের বুকে অবতরণের দৃশ্য গতকাল বিকাল ৫টা ২০ মিনিট থেকে সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে ইসরোর ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে। ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও অবতরণের এই দৃশ্য দেখতে ভার্চুয়ালি ইসরোর সঙ্গে যোগ দেন।

প্রসঙ্গত, চন্দ্রাভিযানে ভারত ২০১৯ সালেও চন্দ্রযান-২ পাঠিয়েছিল। কিন্তু সে যাত্রা সফল হয়নি। চাঁদের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল সেই মহাকাশযান। অতীতের সেই ভুল থেকে অনেক ত্রুটি শুধরে অগ্রসর হতে এবার সাবধানী ছিল ইসরো।

খবরে বলা হয়, লম্বা প্রস্তুতি শেষে গত ১৪ জুলাই শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান লঞ্চিং প্যাড থেকে সফল উৎক্ষেপণ হয়েছিল চন্দ্র্রযান-৩ এর। সেদিন থেকেই দিন গুনছিল গোটা দেশ। শেষ দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল গোটা বিশ্বও। এরই জের ধরে গতকাল সকাল থেকেই উদ্বেগ আর অপেক্ষা বেড়েছিল কয়েকগুণ।

ভোর থেকেই দেশবাসী মগ্ন হয়েছিলেন প্রার্থনায়। সে অনুযায়ী কোথাও হয়েছে হোম যজ্ঞ, কোথাও বিশেষ নামাজের আয়োজন, কোথাও গঙ্গারতি, কোথাও ভস্ম আরতির আয়োজন। সব শ্রেণির মানুষই প্রার্থনা করেছেন সফলতার।

যেভাবে অবতরণ : একদিকে দেশবাসীর উৎকণ্ঠা, অন্যদিকে শেষ ১৫ মিনিটের কঠিন অবতরণ পর্ব ছিল চন্দ্রযানের। চন্দ্রযান-২-এর পরিণতির কথা মাথায় রেখেই এই শেষ ১৫ মিনিটে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। তবে পরিকল্পনা মতোই মসৃণভাবে শেষ ১৫ মিনিট অতিক্রম করে ল্যান্ডার বিক্রম। ৫.৪৫ থেকে শুরু হয়েছিল অবতরণের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া। প্রথম ধাপে ৩৫৮ মিটার প্রতি সেকেন্ড গতিতে বিক্রমকে নামানো হয় ৭.৪ কিলোমিটার উচ্চতায়। দ্বিতীয় ধাপে গতি কমে আরও। ওই পর্যায়ে বিক্রম নামে আরও কিছুটা।

কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে ধীর থেকে অতিধীর গতিতে চাঁদের মাটিতে পা রাখে এটি। অবতরণের শেষ মুহূর্তে এ গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১.৬৮ কিলোমিটার। পূর্ব পরিকল্পনা মতোই ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে পা রাখে চন্দ্রযান-৩। এভাবে বিশ্বে ইতিহাস তৈরি করেছে ভারত। কারণ ভারতই হলো প্রথম দেশ- যে দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে মহাকাশযানের সফট ল্যান্ডিং করতে সমর্থ হয়েছে।

এর আগে কোনো মহাকাশযান সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারেনি। তাই এই অংশ নিয়ে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। একেবারে অজানা জায়গা হওয়ার কারণে বিক্রমের অবতরণও ছিল যথেষ্ট কঠিন।

কিন্তু এবার সফলভাবে অবতরণের পর সেখানে কী আছে, আর কী নেই- তার খোঁজ নেবে ভারতের এই চন্দ্রযান। এইসঙ্গে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে আমেরিকা, রাশিয়া, চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে মহাকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে জায়গা করে নিতে সক্ষম হলো ভারত।

যা করবে বিক্রম : চাঁদের মাটিতে নামার পরেই খুলে যায় বিক্রমের একটি অংশ। সেখান থেকে ল্যান্ডারের পেট থেকে চাঁদের মাটিতে নেমে আসে ‘রোভার প্রজ্ঞান’। তারপর শুরু হবে চাঁদের মাটিতে এর ঘোরাফেরা। ছয় চাকার এই প্রজ্ঞান কয়েকঘণ্টা করে বিশ্রাম নিয়ে ঘুরতে থাকবে। সেকেন্ডে এক সেন্টিমিটার পথ অতিক্রম করবে এটি। তার সঙ্গেই থাকবে একাধিক যন্ত্রপাতি। সেগুলোর সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ করবে সে। কী আছে চাঁদের ঘরে, আর কী নেই- খুঁটিয়ে দেখবে।

চাঁদের মাটিতে নেমেই কাজ শুরু করেছে রম্ভা, চ্যাস্ট, ইলসা, অ্যারে। বিক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এই চারটি পে-লোড। প্রত্যেকের কাজ রয়েছে পৃথক পৃথক। রম্ভা খুঁটিয়ে দেখবে সূর্য থেকে আসা প্লাজমা কণার ঘনত্ব, পরিমাণ, পরিবর্তন। ইলসা খবর রাখবে চন্দ্র পৃষ্ঠের কম্পন, চ্যাস্ট মাপবে সেখানকার তাপমাত্রা এবং অ্যারে বুঝতে চাইবে চাঁদের গতিশীলতা।

সোনালী/জেআর