রাবিতে ভর্তি জালিয়াতি: ছাত্রলীগ নেতাসহ আট জনের বিরুদ্ধে মামলা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী ও তাকে সহায়তাকারী রাবি ছাত্রলীগের নেতাসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম ও আটক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মা রেহেনা বেগম জড়িতদের নামে নগরের মতিহার থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছেন। মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, প্রক্সি চক্রের একটি গ্রুপের সঙ্গে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চুক্তি করেন আহসান হাবীব।
এর প্রেক্ষিতে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নগদ ও ৬০ হাজার টাকার চেকে পরিশোধ করেন তিনি। ভর্তি হওয়ার পর বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভর্তি শেষে আহসান হাবীব বাকি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে আটকে রেখে শিক্ষার্থীর বাবার কাছে আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করে ওই প্রক্সি চক্র।
অভিযুক্তরা হলেন- ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আহসান হাবীব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. প্রাঙ্গন। এছাড়া অজ্ঞাত মো. সাকিব ও রাজুসহ আরও দুই-তিন জন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত মুশফিক তাহমিদ তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক । আরেক অভিযুক্ত মো. রাজুর পুরো নাম রাজু আহমেদ। তিনি শেরে বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে ভর্তি হতে আসে মো. আহসান হাবিব নামে এক শিক্ষার্থী। সে পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য তার মায়ের সঙ্গে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবনে আসে।
ভর্তি হওয়ার পর ওই ভবনের বাইরে আসলে ওইদিন দুপুর পৌনে তিনটায় অজ্ঞাতনামা ৪ থেকে ৫ জন ব্যক্তি তাকে কৌশলে অপহরণ করে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা আবাসিক হলের ৩য় তলায় নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর বাবার কাছে ফোন করে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে টাকা নিয়ে আসতে বলেন।
পরে ছেলের কোনো সংবাদ না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রক্টরিয়াল বডির লোকজনের সহায়তায় ওইদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় শের-ই-বাংলা হলের অভ্যন্তর থেকে উদ্ধার করা হয় আহসান হাবীবকে। তারপর তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। মতিহার থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বীকার করে যে, সে নিজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ না করে পলাতক আসামিদের সহায়তায় অপরের দ্বারা প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
এই জন্য পলাতক আসামি মো. প্রাঙ্গনের সঙ্গে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। পরীক্ষায় পাশ করার পর ওইদিন সকাল ১০টায় রাজশাহী রেল স্টেশনের সামনে রাস্তায় চুক্তির নগদ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ৬০ হাজার টাকার চেক প্রদান করে। ভর্তি হওয়ার পর বাকি টাকা প্রদান করবে মর্মে অঙ্গীকার করে ভর্তি হয়।
ভর্তি হওয়ার পর টাকা না দেওয়ায় তারা তাকে অপহরণ করে শের-ই-বাংলা হলে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং বাকি টাকা না দিলে ধারালো ছুরি দেখিয়ে খুন জখমের ভয় দেখায়। গ্রেপ্তারকৃত ওই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার প্রক্সি পরীক্ষা কোন পরীক্ষার্থী দিয়েছে তা বলতে পারেনি।
এ বিষয়ে মতিহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ বিষয়ে রাবি প্রশাসন ও আটককৃত আসামির মা পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন।
সোনালী/জেআর