পাকিস্তান || গ্রেপ্তার হতে হয়েছে যেসব প্রধানমন্ত্রীকে
♦মূল ক্ষমতা মূলত সেনাবাহিনীর হাতে
অনলাইন ডেস্ক: পাকিস্তানের ইতিহাসে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীদের জেলে পাঠানোর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এর আগে জুলফিকার আলি ভুট্টো, তাঁর মেয়ে বেনজির ভুট্টো, নওয়াজ শরিফও কারাভোগ করেছেন। দেশটির মূল ক্ষমতা মূলত সেনাবাহিনীর হাতে। খবর-এনডিটিভি
সর্বশেষ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে শনিবার আদালতে দোষী সাব্যস্ত ও গ্রেপ্তার করা হলো।
এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন দেশটির বিখ্যাত সাংবাদিক ও জিও নিউজের উপস্থাপক হামিদ মীর। তিনি বলেন, পাকিস্তানে কারাগারে পাঠানো প্রথম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নন এবং হয়তো শেষও তিনি নন। হামিদ মীর বলেন, আদালতের এ রায় নানা ‘প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে’। এটা উচ্চ আদালতে টিকবে না।
সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে সমর্থন করতে অস্বীকার করায় পাকিস্তানে সর্বপ্রথম গ্রেপ্তারের শিকার হন বাঙালি রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। দেশটির পঞ্চম এ প্রধানমন্ত্রীকে ১৯৬২ সালের জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয় ‘রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের’ অভিযোগে।
এরপর নবম প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে দেওয়া হয় ফাঁসি। ১৯৭৪ সালে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ১৯৭৯ সালের ছিল ৪ এপ্রিল।
পাকিস্তানের ইতিহাসে একমাত্র নারী এবং দুইবারের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোও বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ১৯৮৮ থেকে ১০৯০ এবং ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সময়কার এই প্রধানমন্ত্রীকে ৯০ দিনের জন্য গৃহবন্দীও রাখা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে তিনি গৃহবন্দী হয়েছিলেন।
জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতা গ্রহণের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ১৯৯৯ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তাকে ১০ বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়। ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় মেয়ে মরিয়ম নওয়াজের সঙ্গে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
একই বছরের ডিসেম্বরে আল-আজিজিয়া স্টিল মিলস দুর্নীতি মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে তিনি ২০১৯ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এরপর আর ফিরে আসেননি পাকিস্তানে।
এলএনজি গ্যাস দুর্নীতির মামলায় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শহীদ খাকান আব্বাসিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যদিও পরে জামিন পেয়েছিলেন।
সর্বশেষ ইমরান খানকেও এ বছরের ৯ মে অন্য একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের কয়েকদিন পরে তিনি মুক্তি পান। এরপর শনিবার তোশাখানা মামলায় তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
ইমরান খান ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর চার বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় ছিলেন। পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে গত বছর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তখন থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দিয়ে আসছেন তিনি। পাকিস্তানের ইতিহাসে আর কোনো রাজনীতিককে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়াতে দেখা যায়নি।
হার্ডটক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক স্টিফেন স্যাকার পিটিআই নেতাকে প্রশ্ন করেন, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হওয়ার পর থেকেই কি রাজনীতিতে ‘সেনা হস্তক্ষেপ’ নিয়ে তিনি সমালোচনা শুরু করেছেন? জবাবে ইমরান বলেন, পিটিআই পাকিস্তানের একমাত্র দল, যেটি সামরিক একনায়কদের দ্বারা তৈরি হয়নি। এ কারণেই দলটি ভেঙে দিতে তারা তৎপর।
সোনালী/জেআর