ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ২:৩৩ অপরাহ্ন

ফাঁসি আজ রাতে, শেষ দেখায় স্বজনদের যা বলেছেন মহিউদ্দিন

  • আপডেট: Thursday, July 27, 2023 - 5:32 pm

অনলাইন ডেস্ক: আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। আজ বৃহস্পতিবার রাত ১০টা এক মিনিটে অধ্যাপক তাহের হত্যার ৪ নম্বর আসামি ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর হওয়া কথা রয়েছে। তার লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা।

গ্রামের বাড়ির মসজিদের সামনে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার পাশেই দাফনের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। মহিউদ্দিনের ফাঁসির খবরে গ্রামবাসী যেন স্তব্ধ হয়ে গেছেন। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে।

বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের লোকজন পাথর হয়ে আছেন। তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা কানে একদমই শুনতে পান না, তিনি এখনো জানেন না যে তার ছেলে আজ রাতে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলছে। পরিবারের কেউ তাকে কিছু বুঝতেও দিচ্ছেন না।

তার বাড়িতে কোনো সংবাদকর্মী বা কোনো আত্মীয়-স্বজনের সমাগম দেখলেই তিনি জানতে চান কী জন্য এসেছেন আপনারা। হয়তো মা খবর শুনলে স্টক করতে পারেন এজন্যই তাকে কিছুই জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন তার আরেক ছেলে আরজু মিয়া।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মহিউদ্দিনের সঙ্গে তার স্বজনরা কারাগারে শেষ দেখা করেন মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত। তার সঙ্গে শেষ কথা কী হয়েছে এ বিষয়ে মহিউদ্দিনের চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের শেষ দেখা করার জন্য সময় দেন মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায়। আমরা সেখানে দেখা করেছি পাঁচজন। মহিউদ্দিনের স্ত্রী, ভাই আরজু মিয়া, বোন রিনা বেগম, আমি চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া, আরেক চাচাতো ভাই শাহীন মিয়া।

ছিকু মিয়া বলেন, মহিউদ্দিন বলেছেন- অধ্যাপক তাহের ছিলেন আমার বাবার সমতুল্য। তিনি আমাকে হাতে গড়িয়ে মানুষ করেছেন। প্রায়ই আমি তার বাজার করে দিতাম। তার হত্যাকাণ্ডে আমি নির্দোষ, আমি কিছুই জানতাম না।

আমি ন্যায় বিচার পেলাম না, আমি আল্লাহর কাছে এর বিচার দিলাম। তার স্ত্রীকে বলেছেন, যেহেতু এ দেশে ন্যায়বিচার পেলাম না, জায়গা-জমি বিক্রি করে আমার ছেলে-মেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেও।

মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া বলেন, আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান, আমার ভাই ৪ নম্বর আসামি ছিলেন। ১ নম্বর ও ২ নম্বর আসামি খালাস পেল, অথচ আমার ভাইয়ের ফাঁসি বহাল থাকল।

আমার ভাই নির্দোষ ছিল বিধায় মামলা সম্পর্কে কোনো গুরুত্ব দেননি। আমার ভাই ভেবেছিল অন্যায় করি নাই, ইনশাআল্লাহ খালাস পাব। আমার ভাই রোষানলে পড়ে ফাঁসি হলো। আমার ভাইয়ের বিচার পরকালে পাবে।

মহিউদ্দিনের স্ত্রী বলেন, তিনি আমাকে বলেছেন- যেহেতু এ দেশে ন্যায়বিচার পেলাম না, জায়গা-জমি বিক্রি করে আমার ছেলে-মেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেও।

তিনি বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের একটা চিঠি দিয়েছে সেই চিঠি বাড়ি নিয়ে খুলতে বলেছিল, আমরা গাড়ির মধ্যেই চিঠি খুলে দেখেছি, ভেতর লেখা রয়েছে ২৭-৭-২০২৩ বৃহস্পতিবার রাত ১০টা এক মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে। আমরা লাশ অ্যাম্বুলেন্সে পাঠিয়ে দেব, আপনারা শুধু অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া দিয়ে দিয়েন।

তিনি আরও বলেন, জানাজা বাড়ির মসজিদে জুমার নামাজের আগেই পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা হাসিনা বেগম বলেন, মহিউদ্দিনকে আমরা গ্রামে বলি সূর্য মিয়া, তার মতো ভদ্র ছেলে আমাদের গ্রামে নেই।

গ্রামের আরেক বাসিন্দা রনি মিয়া বলেন, আমরা শুনেছি মহিউদ্দিন চাচা জাপান, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া থেকে সোনার মেডেল পেয়েছেন। তিনি একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তার মতো এমন লোক আর আমাদের এলাকায় হবে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় কার্যকর করা হবে জানা গেছে।

মৃত্যুদণ্ড রায়ের আসামিরা হলেন রাবি ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির প্রাণভিক্ষার অবেদন রাষ্ট্রপতির কর্তৃক নাকচের চিঠি গত ৫ জুন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এসে পৌঁছায়।

কারা বিধান অনুযায়ী ডাকযোগে এই চিঠি কারা কর্তৃপক্ষ হাতে পৌঁছার ২১ দিনের পর এবং ২৮ দিনের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্তদের ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।

এছাড়া মৃত্যুদণ্ড স্থগিত চেয়ে আসামি জাহাঙ্গীর আলমের ভাইয়ের করা সর্বশেষ আবেদন ২৫ জুলাই খারিজ করে দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ফলে ফাঁসি কার্যকরের আর কোন বাধা থাকছে না।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির শিক্ষকদের আবাসিক কোয়াটারের বাসা থেকে নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের। ২ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে এ শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পরে আদালতে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। হত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, একই বিভাগে অ্যাকাডেমিক কমিটির প্রধান ড. তাহের সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে অধ্যাপক পদে উত্তীর্ণ হবার সুপারিশ না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ শিক্ষককে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ মোট চারজন মিলে বাসার পেছনে ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখে।

২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক ৪ জনকে ফাঁসি ও দুজনকে খালাস দেন। দণ্ডিত অন্যরা হলেন, জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল ও শ্যালক সালাম।

তবে খালাস পান তৎকালীন রাবি শিবির সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী। পরে উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে নাজমুল এবং সালামের ফাঁসির রায় কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা করা হয়। সমকাল

সোনালী/জেআর