পবিত্র মহররম ও আশুরার তাৎপর্য
সম্পাদকীয়
হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমকে ইবাদতের মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রসুল (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময়কে মনে রেখে হিজরতের ১৬ বছর পর হিজরি সন চালু করা হয়।
দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে ১৬ হিজরিতে প্রখ্যাত সাহাবি আবু মুসা আশআরি (রা.) ইরাকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খলিফা ওমর (রা.)-এর কাছে পত্র লিখে অভিহিত করেন- আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশ সংবলিত যেসব চিঠি আমাদের কাছে পৌঁছে তাতে দিন, মাস, কাল, তারিখ ইত্যাদি না থাকায় কোন চিঠি কোন দিনের তা নিরূপণ করা সম্ভব হয় না।
ফলে আপনার নির্দেশ বাস্তবায়নে সমস্যা হয়। অনেক সময় আমরা চিঠির ধারাবাহিকতা না পেয়ে বিব্রতবোধ করি। এ চিঠি পেয়ে হজরত ওমর (রা.) এ বিষয়ে পরামর্শ সভার আহ্বান করেন এবং কীভাবে একটি ইসলামী তারিখ প্রবর্তন করা যায় সে বিষয়ে বিশিষ্ট সাহাবি ও জ্ঞানী-গুণীদের পরামর্শ চান। পরামর্শ সভায় হজরত ওসমান (রা.), আলী (রা.)-সহ বিশিষ্ট সাহাবিরা উপস্থিত ছিলেন।
তাঁদের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে হজরত ওমর (রা.) ইসলামী সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে কোন মাস থেকে ইসলামী পঞ্জিকার সূচনা হবে তা নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয়। কেউ মত পোষণ করেন রসুল (সা.)-এর জন্ম মাস রবিউল আওয়াল থেকে বর্ষ শুরু করার। কেউ মত পোষণ করেন তাঁর ওফাতের মাস থেকে বর্ষ শুরু করার। অন্যদের মতে রসুল (সা.)-এর হিজরতের মাস থেকে বর্ষ শুরু করা হোক।
এভাবে বিভিন্ন মতামত আলোচিত হওয়ার পর হজরত ওমর (রা.) হিজরতের বছরকে ইসলামী সনের সূচনা বছর হিসেবে ধরে ওই বছরের মহররম মাস থেকে নতুন হিজরি পঞ্জিকা চালুর সিদ্ধান্ত নেন। হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম একটি বরকতময় মাস। মানব ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।
কোরআনে এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে; যা এ মাসকে মহিমান্বিত করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন- ‘চারটি মাস রয়েছে যা সম্মানিত। তার অন্যতম একটি হলো মহররম।’ সুরা তওবা, আয়াত ৩৬।
মহিমান্বিত মহররম মাসেই রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ‘আশুরা’। হিজরি সন প্রবর্তনের বেশ পরে মহররমের দশম তারিখে ঐতিহাসিক ‘কারবালা’ সংঘটিত হয়েছিল। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি রসুল (সা.)কে এদিন (আশুরার) এবং এ মাসে রমজানের রোজার চেয়ে অন্য কোনো রোজাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি।’ মিশকাত।
রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার বিশ্বাস, আশুরার রোজার বিনিময়ে আল্লাহ বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ তিরমিজি। সোজা কথায়, হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের ধর্মীয় তাৎপর্যও তুলনাহীন। মহান আল্লাহ আমাদের আশুরায় রোজা পালনসহ এ পবিত্র মাসে ইবাদত-বন্দেগি করার তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক
সোনালী/জেআর