জাতীয় নারী ভলিবল দলে রাজশাহী শহরের আধিপত্য
|| ১২ জনের জাতীয় দলের মধ্যে
পাঁচজনের বাড়িই রাজশাহীতে ||
অনলাইন ডেস্ক: জাতীয় নারী ভলিবল দলে অধিক আধিপত্য রাজশাহীর। ১২ জনের দলের মধ্যে পাঁচজনের বাড়িই শিক্ষা নগরীতে। অদম্য ইচ্ছা, নিরলস পরিশ্রম ও একাগ্রতার কারণেই ভলিবলে পদ্মা পাড়ের শহরের এমন সাফল্য।
নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এই শহরের আজমিরা খাতুন, দিতি রানী সরকার, শম্পা আক্তার, টুম্পা আক্তার ও আশা খাতুন এখন জাতীয় তারকা।
উচ্ছ্বসিত হয়ে আজমিরা খাতুন বলেন, ‘রাজশাহীর আমরা পাঁচজন ট্রায়ালে গিয়েছিলাম এবং পাঁচজনই টিকেছি। ভাবতেই অবাক লাগছে। আমি ভীষণ খুশি।’ দিতি রানী সরকার বলেন, ‘আমি স্কুলজীবন থেকেই খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত। আমাদের এখন একটাই চাওয়া- দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনা। রাজশাহীর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া।’
তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া রাজশাহীর এই পাঁচ ভলিবল খেলোয়াড়ের মধ্যে টুম্পা ও শম্পা দুই বোন। তাই তাদের আনন্দও যেন বাঁধভাঙা। বড় বোন টুম্পা বলেন, ‘আমার কাছে সবকিছু যেন অবিশ্বাস্য লাগছে। জাতীয় দলে চান্স পেয়ে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে।’
এমন খুশির ক্ষণেও ছোট বোন শম্পা জানালেন তার কষ্টের কথা। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় দলে চান্স পাওয়া কতটা পরিশ্রমের তা বলে বোঝানো যাবে না। সারা দেশের শত শত প্লেয়ার। তাদের টেক্কা দেওয়া, নিজের ফিটনেস ধরে রাখা। তবে শেষ পর্যন্ত জয় আমাদের হয়েছে। আমি মনে করি এটা পরিশ্রমের ফল।’
২০১৬ সালে প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পে এসে তাদের প্রথম ভলিবল দেখা। কয়েক বছর কঠোর প্রশিক্ষণের পর আন্তজেলা পর্যায়ে খেলা অবস্থায় তাদের জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য ডাক পড়ে।
অদম্য ইচ্ছা, নিরলস পরিশ্রম ও একাগ্রতার কারণেই ভলিবলে রাজশাহীর এমন সাফল্য। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আজমিরা খাতুন, দিতি রানী সরকার, শম্পা আক্তার, টুম্পা আক্তার ও আশা খাতুন এখন জাতীয় তারকা।
রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে প্রতিদিন বিকালে একঝাঁক তরুণী ভলিবল হাতে প্র্যাকটিস করছে। এদের মধ্য থেকেই পাঁচজন জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন।
জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া তরুণীর কণ্ঠে কিছুটা আক্ষেপও ঝরল। তাদের দাবি, ‘রাজশাহীতে আরও অনেক মেধাবী ভলিবল খেলোয়াড় আছেন। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তারা নিয়মিত স্টেডিয়ামে যাওয়া-আসার খরচটুকু জোগাতে পারেন না বলে সুযোগ পাননি।
এই খেলোয়াড়দের দাবি- মাঠের সব খেলোয়াড়ের যাতায়াত ভাড়া এবং নাস্তার ব্যবস্থাটুকু কর্তৃপক্ষ করে দিতে পারলে হয়তো জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার সংখ্যাটা আরও বেড়ে যেত।
রাজশাহীতে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই চলে ভলিবল। নেই মাঠ, নেই আর্থিক বরাদ্দ। খেলোয়াড় ও কোচ নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে কোনোমতে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রশিক্ষণ।
ভলিবল কোচ খন্দকার মমিনুর রশিদ বাবু বলেন, ‘যারা জাতীয় দলে চান্স পেয়েছেন তাদের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে দেখেছি তারা কতটা সমস্যা নিয়ে প্র্যাকটিস করেছে। আমাদের মাঠ নেই। কখনো রাজশাহী কলেজে আবার কখনো মহিলা কলেজে আমরা প্র্যাকটিস করেছি।’
রাজশাহী মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রাফিকা খানম ছবি বলেন, আমরা একটা সময় ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পেতাম। তবে এখন তা আর পাই না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে আমাদের চলতে হয়। আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের ন্যূনতম আর্থিক সহায়তা পর্যন্ত করতে পারছি না। তারপরও তারা নিজেদের চেষ্টায় জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখছে।
রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদুন নবী অনু বলেন, প্রতিবন্ধকতা থাকলেও আগের চেয়ে এখন ভালো অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে রাজশাহীর ক্রীড়াঙ্গন। ভলিবল প্রশিক্ষণের জন্য রাজশাহী জেলা স্টেডিয়াম জায়গা করে দিয়েছে খেলোয়াড়দের। এখন তাদের মাঠের সমস্যাটা অন্তত নেই।
হাজারো প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নিজেদের অদম্য ইচ্ছা ও চেষ্টার কারণে জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়ে রাজশাহীর পাঁচ তরুণী যেন অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
রাজশাহীবাসীর মুখে মুখে এখন উচ্চারিত হচ্ছে আজমিরা খাতুন, দিতি রানী সরকার, শম্পা আক্তার, টুম্পা আক্তার ও আশা খাতুনের নাম। বাংলাদেশ প্রতিদিন
সোনালী/জেআর